শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

তাওবা হোক গুনাহ মাফের হাতিয়ার

মুহাম্মদ মিযানুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

তাওবা !একজন আদশ মুমিনের সিফাত । পাপ কর্মে লিপ্ত হলে সাথে সাথে তাওবা করে পুণরায় কল্যাণকর কাজে জড়িত হওয়াই হচ্ছে মুমিনের চরিত্র। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।

তাওবার পরিচয় : তাওবার শাব্দিক অর্থ প্রত্যাবর্তন করা, স্বীকার করা, অনুশোচনা ইত্যাদি। পরিভাষায় তাওবা হলো গুনাহের মন্দত্বের কারণে তা পরিত্যাগ করা, অতীতে যা হয়েছে সেজন্য অনুশোচনা করা, পুনরায় গুনাহ করার ইচ্ছা পরিহারে দৃঢ় সংকল্প করা এবং যা সম্ভব তা পুনরায় করার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ করা।
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মতে তাওবার শর্ত ৬টি।

এক/ অতীত মন্দকাজের জন্য অনুতাপ করা, দুই/ যে সকল ফরজ, ওয়াজিব, পরিত্যাগ করা হয়েছে তার কাযা আদায় করা, তিন/ কারো ধন সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া, চার/ কাউকে হাত বা মুখ দ্বারা কষ্ট দিলে ক্ষমা চেয়ে নেয়া, পাচ/ভবিষ্যতে সে পাপ কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করা, ছয়/ নিজেকে যেমন আল্লাহর নাফরমানিতে দেখেছে তেমনি নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য দেখা। উপরিউক্ত বিষয়াবলীর সমাবেশের নামই তাওবা।

ক্বোরআন করিমে তাওবার নির্দেশ : তাওবা হচ্ছে, মন্দের ব্যাপারে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। তাওবা বিষয়ে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-

“আর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা চাও, অতঃপর তাঁরই দিকে ফিরে এসো। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অত্যন্ত মেহেরবান ও অতি দয়াময়। [সূরা হুদ: আয়াত- ৯০]
অন্য যায়গায় আল্লাহ্ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে উভয় জগতের সফলতা অর্জনের জন্য তাওবার নির্দেশ দিয়ে বলেন-

“হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারগ্ধ। [সূরা নূর: আয়াত-৩১]
অন্যত্র পূণ্য একজন মুমিন হওয়ার লক্ষ্যে আল্লাহ্ তা‘আলা খাঁটি তাওবা করার জন্য মুমিনদের নির্দেশ দেন-
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নিকট তাওবা কর, খাটি তাওবাগ্ধ। [সূরা তাহরীম: আয়াত-৮]

এবার আল্লাহ তায়ালা নিজেই তাওবা করার সিষ্টেম শিখাচ্ছেন।
ক্বোরআন ও হাদীসে ব্যবহৃত বাক্যসমূহ দ্বারা তাওবা করা সর্বোত্তম।
ক্বোরআন করিমে তাওবার দো‘আসমূহ
পবিত্র ক্বোরআনে ব্যবহৃত কিছু দোয়া। যার দ্বারা তাওবা করা ভালো।

এক/ “হে আমাদের প্রভু, আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন তবে অবশ্যই আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। [সূরা আ’রাফ]

দুই/ “হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। [সূরা আলে ইমরান:

তিন/ “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং দোষত্র“টিসমূহ দূর করে দিন। আর আমাদেরকে নেক্কার বান্দাদের সাথে মৃত্যু দিন। [সূরা আলে ইমরান: আয়াত- ১৯৩]

চার/ “আপনি আমাদের রক্ষক, সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের প্রতি করুনা করুন। আর আপনিতো সর্বাধিক ক্ষমাকারী। [সূরা আ‘রাফ: আয়াত- ১৫৫]

হাদীস শরীফে তাওবার দো‘আ : হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, সয়্যিদুল ইসতিগফার তথা সর্বোত্তম তাওবা হল-

হে আল্লাহ্, আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোন প্রভু নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দাহ্ এবং যথাসম্ভব আমি আপনার অঙ্গীকার ও ওয়াদার উপর স্থির আছি। আমার সকল পাপের অপকারিতা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার দেয়া সকল নেয়ামতের কথা স্বীকার করছি। আর আমার সকল গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ব্যতীত কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। [সহীহ বুখারী শরীফ: হাদীস নম্বর- ৫৯৪৭]

আরবীতে বিজ্ঞরা অবশ্যই আরবীতে মুখস্ত করে নেওয়াই ভালো।
আর পবিএ রমযান মাসে দোয়া ও তাওবা কবুলের মাস। তাই আমরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাওবার দ্বারা আমাদের জীবনের গুনাহগুলো মাফ করাই।আল্লাহ তায়ালা তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামী কলামিষ্ট,প্রাবন্ধিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন