রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইনকিলাব বর্ষ শুরু সংখ্যা

সোনালি সময়ের স্মৃতি

মাসুম খলিলী | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ১২:১১ এএম

বাংলাদেশে গণমাধ্যম উত্থান ও বিকাশের বিভিন্ন বাঁক পেরিয়ে এ স্থানে এসেছে। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মতো আরেক স্তম্ভ হিসাবে গণমাধ্যমকে বিচার করার বিষয়টি গণতন্ত্রচর্চাকারী সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিশেষভাবে সত্য এ কারণে যে, সমাজে বা রাষ্ট্রে যা কিছু ঘটে তার প্রতিবিম্ব সৃষ্টির ভূমিকা থাকে গণমাধ্যমের। আর সংবাদপত্রের আয়নায় প্রতিফলিত চিত্র থেকে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা তাদের নীতি প্রণয়ন ও রাষ্ট্র চালনার জন্য সাহায্য নিয়ে থাকেন। মুক্তভাবে এই ভূমিকাকে যখনই স্বাগত জানানো হয়েছে তখনই সংবাদপত্র বিকশিত হয়েছে, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণ হয়েছে বিশেষভাবে।

১৯৮৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক ইনকিলাব যখন আত্মপ্রকাশ করে তখন বাংলাদেশের সংবাদপত্র বিকাশের একটি সন্ধিস্থল হিসাবে এটি কাজ করেছে। ইনকিলাব এই অঞ্চলের মুসলিমদের আলাদা স্বাধীন আভাসভূমি প্রতিষ্ঠার আদর্শকে ধারণ করে যাত্রা শুরু করেছে শুধু তাই নয়, একই সাথে সত্যকে লালন করা এবং মানুষের মঙ্গলের জন্যও অনন্য ভূমিকা রেখেছে। আর এটি করেছে সাংবাদিকতার নিয়ম-নীতি ও উচ্চ প্রযুক্তির সহায়তাকে ধারণ করে।

দৈনিক ইনকিলাব যে সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন বাংলাদেশে জাতীয় দৈনিকের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তখন প্রতিটি সংবাদপত্রকে সরকার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিত। যে কটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র ছিল তার মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাক প্রচার সংখ্যার দিক থেকে অপ্রতি›দ্ব›দ্বী একটি স্থানে ছিল। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান কাভার করতে গেলে দেখতাম ইত্তেফাকের রিপোর্টারের জন্য অনুষ্ঠান শুরু করতে বিলম্ব করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশনা শুরু করার অল্প দিনের মধ্যেই প্রচারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে যায় এর উন্নত প্রযুক্তি, ঝকঝকে ছাপা এবং সংবাদ কৌশলকে ভর করে।

দৈনিক ইনকিলাবের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন এদেশের ইসলামী শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মাওলানা এম এ মান্নান। যতদূর জানি, মাওলানার পূর্বপুরুষেরা এই ভূখন্ডে ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য আগমন করেছিলেন। এটি সম্ভবত মাওলানার রক্তের মধ্যে মিশে ছিল। সহজাত প্রতিভা তাকে অল্প বয়সেই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে যায়। ১৯৬২ সালে মাওলানা মুসলিম লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি হন, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর। তিনি ছিলেন বর্ণাঢ্য জীবন সংগ্রামের অধিকারী একজন অসাধারণ প্রতিভাধর বাস্তববাদী মানুষ। জাতি, ধর্ম, দেশ ও সমাজের প্রতি তিনি সারা জীবন তার কর্তব্য পালন করে গেছেন। তিনি যখন মন্ত্রী ছিলেন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন তখন এমন এক শ্রেণিকে প্রকৃতপক্ষে শক্তিমান করার জন্য ভূমিকা রেখেছেন, যারা দেশের সার্বভৌম অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মৌলিক ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ লক্ষ্যে তিনি মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়তুল মোদার্রেছীন গড়ে তুলেছেন। মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দানের ব্যবস্থা করেছেন। আজ মাদরাসা শিক্ষকদের যে বেতন-ভাতার স্কেল এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা তার পেছনে ছিল মাওলানার অনেকটাই একক ধরনের চেষ্টা। তিনি এটি করেছিলেন এই উপলব্ধি থেকে যে, বাংলাদেশভুক্ত ভূখন্ডের মানুষের যে ধর্মবিশ্বাস ও তৌহিদবাদী সাংস্কৃতিক পরিচয়ের স্বাতন্ত্র্য সেটি এখানকার স্বাধীন ও সার্বভৌম অস্তিত্বকে স্থায়ী করবে। আর এক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা-কৃষ্টির প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় শিক্ষার কারিগরদের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। মাওলানার এই উপলব্ধিই দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠার জন্যও তাকে উদ্যোগী করেছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রের ভালো ভালো সংবাদকর্মীদের একত্রিত করে একটি মানসম্পন্ন পত্রিকা হিসাবে তিনি এর যাত্রা শুরু করেন। এর সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেন মাওলানার সুযোগ্য বড় ছেলে এ এম এম বাহাউদ্দিনকে। আর তাকে এই দায়িত্ব পালনে যাতে সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন তার জন্য প্রবীণ সাংবাদিক এ কে এম মহিউদ্দিনকে মহাসম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেন পত্রিকার শুরুতেই।

দৈনিক ইনকিলাবে আমার যোগদানের সুযোগ আসে ১৯৯৯ সালের শেষার্ধে। এর আগে আমি দৈনিক দিনকালের বিশেষ সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলাম। প্রধানত অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও জ্বালানি বিষয়ক সাংবাদিকতা ছিল আমার কর্মক্ষেত্র। পত্রিকার সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন একদিন আমাকে দেখা করার জন্য খবর দেন। আমরা দু’জনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮২ ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু বিভাগ ভিন্ন হবার কারণে অতটা ঘনিষ্টতা তৈরি হয়নি। ইনকিলাবের সম্পাদক হিসাবেই তাকে দূর থেকে দেখা ও জানার সুযোগ হয়। বাহাউদ্দিন ভাই অন্য পত্রিকায় কারা কেমন রিপোর্ট করেন তার প্রতি নজর রাখতেন। সাংবাদিকতা ছেড়ে কূটনৈতিক মিশনে কর্মরত আমার ঘনিষ্ট এক বন্ধু আমাকে ইনকিলাবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। সম্ভবত তিনি এ ব্যাপারে বাহাউদ্দিন ভাইয়ের সাথে আলোচনাও করেছিলেন। পরে ইনকিলাবের তখনকার চিফ রিপোর্টার মঞ্জু ভাই আমাকে বাহাউদ্দিন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে বলেন। সেই দেখাতেই আমার দৈনিক ইনকিলাবে যোগদান চূড়ান্ত হয়ে যায়।

আমি এর পরই দৈনিক ইনকিলাবে অর্র্থনৈতিক ও জ্বালানি বিটের রিপোর্টার হিসাবে কাজ শুরু করি। এর আগে ইনকিলাবের শুরু থেকে কাজ করা সাইফুল আলম ভাই, জাকারিয়া কাজল, মাহবুবুল বাসেত, শাকির আহমদ ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। শুরুর দিকের কর্মীদের মধ্যে চিফ রিপোর্টার মঞ্জুভাই ছাড়াও কূটনৈতিক সংবাদদাতা মিনহাজুর রহমান, ড. আবদুল হাই সিদ্দিক, এম আবদুল্লাহ, আবদুর রহীম, সালাউদ্দিন বাবলুসহ অনেকে কর্মরত ছিলেন। পরে রিপোর্টিং টিমে আরো যোগ দেন এলাহি নেওয়াজ খান সাজু, আযম মীর, আবদুল গাফ্ফার মাহমুদ, আবু রুশদসহ বেশ কয়েকজন।

ইনকিলাবে যোগদানের আগে অর্থনৈতিক সাংবাদিক হিসেবে আমার সামান্য পরিচয় তৈরি হয়। কিন্তু এই বিপুল প্রচার সংখ্যার পত্রিকায় যোগদানের পর যে কোন রিপোর্টের ব্যাপারে সাধারণ পাঠক থেকে যে রেসপন্স পাই সেটি আগের দেড় দশকের বেশি সময়ের রিপোর্টিং সময়ে পাইনি। এই সময়টাতে ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক সুলতান আহমদ। রাসভারি এই প্রবীণ সাংবাদিকের সাথে না মিশলে তার ভেতরের রসবোধ ও উদার মনের বিষয়টি বোঝা যেত না। তার সাথে চিফ সাব এডিটর ছিলেন ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে বিখ্যাত সাংবাদিক মুহাম্মদ মুসা। অসম্ভব সজ্জন ও নিরহংকার একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি।

এ সময় ইনকিলাবের সম্পাদকীয় ও ফিচার বিভাগ ছিল বেশ সমৃদ্ধ। প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক প্রফেসর আবদুল গফুর ছিলেন ফিচার বিভাগের প্রধান। তার সাথে ছিলেন প্রাণোচ্ছল কবি আবদুর হাই শিকদার। সম্পাদকীয় বিভাগে ছিলেন ইউসুফ শরীফ, মুনশী আবদুল মাননান, মোবায়েদুর রহমান, খন্দকার হাসনাত করিম, মাওলানা এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্শী, মকবুলা পারভীন, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী প্রমুখ। তাদের লেখা ও কাজে ইনকিলাবের সম্পাদকীয় ও ফিচার বিভাগ ছিল সমৃদ্ধ। হাসনাইন ইমতিয়াজ ও ফাহিম ফিরোজ সাহিত্য পাতা দেখাশুনা করতেন।

দৈনিক ইনকিলাবের এই ধরনের এক সোনালি সময়ে যোগ দিয়ে আমার বিরল পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হয়। পত্রিকার সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভাই সংবাদপত্র জগতের সার্বক্ষণিক খবরই শুধু রাখতেন না, একই সাথে সরকারের নানা দিক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর উপরও নজর রাখতেন। দেশের শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথেও ছিল তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ। এই সময়ে সম্পাদকের কাছ থেকে সাপ্তাহিক বৈঠকগুলোতে এবং সার্বক্ষণিক যে গাইডলাইন পেতাম তা সত্যিকার অর্থেই বিরল ছিল। বাহাউদ্দিন ভাইয়ের ব্যক্তিত্বের মধ্যেই থাকা এক ধরনের বন্ধু বৎসলতা সবাইকে আকর্ষণ করতো।

এসময় মাওলানা এম এ মান্নান নিয়মিত ইনকিলাব অফিসে আসতেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সুপরিসর কক্ষে তিনি বসতেন। প্রয়োজন না হলে তিনি সাংবাদিকদের খুব একটা ডাকতেন না। তবে প্রায় প্রতি মাসে সাংবাদিকদের সাথে একবার বসতেন। সে সভার প্রধান আকর্ষণ ছিল দুটি, একটি হলো মাওলানার আকর্ষণীয় বক্তব্য আর উচ্চ মানের ভোজনের ব্যবস্থা। মধ্যাহ্নভোজের মেনুতে চাঁদপুরের বিশালকারের পাঙ্গাস, ইলিশ, রুই বা কাতলা অন্য আইটেমের সাথে বিশেষভাবে থাকতো। মাওলানার সৌজন্যবোধ ও আতিথেয়তার ধরনে ছিল ঐতিহ্য ও আন্তরিকতার অপূর্ব মিশেল। তার সমালোচক রাজনীতিবিদরাও নির্দ্বিধায় তার সাথে গল্প করে যেতেন। মাওলানা সাংবাদিকদের সাথে মাসিক সভায় প্রধানত দিক নির্দেশনামূলক কথাগুলোই বলতেন। তিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার ঘটনা ও বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে কোনো বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপন করতেন, যা একেবারে হৃদয়ে গেঁথে যেত। একদিনের এক বক্তব্য আমার এখনো কানে বাজে। সব ইসলামী দলের রাজনীতিবিদদের সাথে মাওলানার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তো ছিলই, একই সাথে অন্য ধারার রাজনীতিবিদরাও তার কাছে আসতেন, তাকে সম্মান করতেন। মাওলানা মুসলিম লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে বিভিন্ন সময় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, তার গভীর লক্ষ্যের জায়গাটি ছিল এদেশের মানুষের কল্যাণ। তিনি এদেশের স্বাধীনতার পক্ষের যে শক্তি, যারা যে কোনো আধিপত্যবাদ থেকে দেশকে হেফাজতে রাখতে চান, তাদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় দেখতে চাইতেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মাওলানার ওফাত পর্যন্ত সময়কালে এমনকি তার পরেও দৈনিক ইনকিলাবের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করলে সেটিই ধরা পড়ে।

আমাদের সাথে এক সভায় মাওলানা বলেছিলেন, ইসলামের জন্য যে যে অবস্থানে থেকে কাজ করছে সবই মূল্যবান। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, জামায়াতের ব্যাপারে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন, কিন্তু এই দেশের ইসলামী শক্তির সামনে দলটি একটি বড় ও শক্ত দেয়াল হিসেবে রয়েছে। এ দেয়াল ভেঙ্গে গেলে অন্য দেয়ালগুলো ভাঙ্গা প্রতিপক্ষ শক্তির জন্য কঠিন হবে না। জামায়াতের অনেক নেতাই সম্ভবত মাওলানার এই উদার ও গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পর্কে জানতেন। তারা সব সময় ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও শিক্ষকদের কল্যাণে তার অবদানের কথা সম্মানের সাথে উল্লেখ করতেন। আবার কেউ কেউ না জেনে সমালোচনামূলক কথাবার্তাও বলতেন।

আমাদের জাতীয় জীবনে দৈনিক ইনকিলাবের সাড়ে তিন দশকের অবদানকে নিছক একটি সংবাদপত্রের অবদান হিসেবে দেখা হলে আমার মনে হয় ভুল করা হবে। বাংলাদেশে একটি আদর্শবাদী চিন্তার ধারা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরা ও লালন করার জন্য ইনকিলাব যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এই ভূমিকা এই ধরনের অন্যান্য গণমাধ্যমও চালিয়ে যেতে পারলে এই ভূখন্ডকে আধিপত্যবাদীদের পক্ষে পদানত করা সহজ হবে না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে বাংলাদেশের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছেন, দেশের আলেম-ওলামা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ম্লান করার জন্য সুপরিকল্পিত তৎপরতার কারণে। মধ্যপ্রাচ্যের অবৈধ দেশ হিসেবে পরিচিত ইসরাইলে ভ্রমণ না করার যে বিষয়টি বাংলাদেশের পাসপোর্টে এতদিন ছিল, সেটি এখন তুলে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের অনেক মৌলিক প্রতিষ্ঠানের এখন বিপন্ন অবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই ধরনের অবস্থায় ইনকিলাবের মতো সংবাদপত্রের টিকে থাকার প্রয়োজন অনেক বেশিভাবে অনুভূত হচ্ছে।
সাড়ে চার বছরের মতো সময় আমি ইনকিলাবের সাথে যুক্ত ছিলাম। এটি ছিল আমার সাংবাদিক জীবনের বিশেষভাবে স্বীকৃতির সময়। এসময় জ্বালানি সাংবাদিক টিমের সাথে আমেরিকান সরকারের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরের সুযোগ হয়। আমেরিকান পররাষ্ট্র দফতরের ভিজিটর্স কর্মসূচিতে মাসব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের সুযোগ হয়। নাইন ইলেভেনের ঘটনার এক বছর পর আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের নানা পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয় এ সময়। পেশাগতভাবে শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের যে সুযোগ ইনকিলাবে অর্জিত হয় তার জন্য পত্রিকাটির প্রতি আমার মন সব সময় সকৃতজ্ঞ থাকে। ব্যক্তিগতভাবে যে বাসায় আমি থাকি সেটির পেছনেও রয়েছে ইনকিলাব পরিবারের অবদান। পত্রিকার অন্যতম সত্তাধিকারী মইনুদ্দিন ভাই তার প্রতিষ্ঠিত এ এন জেড প্রপার্টিজ থেকে তুলনামূলক স্বল্প দামে ব্যাংক ঋণ নিয়ে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে ফ্লাট কেনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইনকিলাবে চাকরিকালীন সময়ে কোন বৈরী অভিজ্ঞতার কথা আমার মনে পড়ে না। আমাকে অর্থনৈতিক কারণে ইনকিলাব থেকে বিদায় নিয়ে অন্য একটি দৈনিক যোগদানের কথা বিবেচনা করতে হয়। নানা ধরনের সঙ্কোচ নিয়ে কথাটি বলতে সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে যাই। কিন্তু বাহাউদ্দিন ভাই একান্ত সহানুভূতির দৃষ্টি নিয়েই এটাকে দেখেছেন। তিনি আমাকে শেষ কথাটি বলেছিলেন ‘ইনকিলাবের দরজা আপনার জন্য সব সময় খোলা থাকবে। যখন কোনো সমস্যা হবে চলে আসবেন এখানে।’ ইনকিলাব সম্পাদকের বিদায়কালীন এই কথাটি আমি সব সময় স্মরণ করি। আবেগপ্রবণ হয়ে উপরের সহকর্মীদের কাছে এটি জানাই, বাসায় শেয়ার করি সহধর্মিনীর সাথে। সত্যি সত্যি ইনকিলাব পরিবারের কাছে আমি অনেক ঋণী। বাংলাদেশের সার্বভৌম অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে এই প্রতিষ্ঠানটিকে চিরস্থায়ী জীবন দান করুন, পরম করুণাময়ের কাছে এই প্রত্যাশা, এই মুনাজাত আজকের দিনটিতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন