বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইনকিলাব বর্ষ শুরু সংখ্যা

ইনকিলাব বেঁচে থাক পাঠকের হৃদয়ে

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ১২:১৩ এএম

সংবাদপত্র জগতের পীঠভূমি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাব এ দেশের শুধু নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদ মহাকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আজ ৪ জুন, দৈনিক ইনকিলাব আত্মপ্রকাশের ৩৫ পূর্ণ করে গৌরবের সঙ্গে ৩৬ বছরে পদার্পণ করল। পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশের পর খরস্রোতা নদীর মতো অনেক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাগর-সঙ্গমে বয়ে চলেছে নিরবধি। কত শত্রু-মিত্র আর প্রতিক‚লতা মোকাবিলা করে, দৈনিক ইনকিলাব নিজেকে ঋদ্ধ করেছে! শৈশব-কিশোর অতিক্রম করে আজ পূর্ণ-যৌবনা। দেশের আর পাঁচটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার মতো দৈনিক ইনকিলাবের আছে ঐতিহ্য, ইতিহাস, আছে বিদগ্ধ পাঠকসমাজ। পান থেকে চুন খসলে যারা কেউ সরাসরি, কেউ টেলিফোনযোগে, কেউ ইন্টারনেটে ভুল ধরিয়ে দেন শুধরে নেওয়ার লক্ষ্যে; সুদূর টরেন্টো, নিউইয়র্ক, লন্ডন, জেদ্দা, মক্কা, আবুধাবিসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন করে, ম্যাসেজ পাঠিয়ে যেমন ছোটখাটো ভুল ধরিয়ে দিতে আন্তরিকভাবে প্রয়াসী হন, তেমনই নির্ভীক, নৈর্ব্যক্তিক সাংবাদিকতার প্রশংসাও করেন। কেউ চিঠি লিখে সরাসরি আবার কেউবা টেলিফোনেও তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নিঃসংকোচে। তাদের মতামতকে উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ। এমন কিছু শুভানুধ্যায়ীর কথা আমরা জানি, যারা দৈনিক ইনকিলাব হাতে পাওয়ার পর প্রথমেই দেখেন পত্রিকাটি কতটি বিজ্ঞাপন পেল বা আদৌ পেয়েছে কি-না। যদি পত্রিকার পাতায় বিজ্ঞাপন দেখেন, তখন তারা আশ্বস্ত হন, আর বিজ্ঞাপন না থাকলে বিমর্ষ হন, হিসাব কষেন, খবর নেন। পত্রিকাটির আয়-ব্যয় নিয়ে তারাও ভাবনা-চিন্তা করেন। বিশেষত, রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত এ দৈনিক সংবাদপত্রকে কীভাবে দীর্ঘজীবী করা যায়, এ নিয়ে তারাও মাথাব্যথা অনুভব করেন।

দৈনিক ইনকিলাবের একটি ঐতিহ্য আছে, আছে অতীতও। একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়ে আসছে। দৈনিক এ পত্রিকাটির ৩৫ বছরের পথ পরিক্রমা নেহাত মসৃণ ছিল, বলব না। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দৈনিক পত্রিকাগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বারবার হোঁচট হয়তো খেয়েছে; কিন্তু যাত্রা বিরতি করেনি।

জাতীয়ভাবে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ তো এক শ্রেণির ব্যক্তির এক ধরনের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালো টাকা সাদা করার মানসে, প্রশাসন তথা রাজনৈতিক নেতৃবর্গকে ব্ল্যাকমেল করার লক্ষ্যে ও বাণিজ্যিক লাভের আশায় অনেকে দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশ করেন, কেউ কেউ টিভি চ্যানেলও চালু করেন। এভাবেই চলছে ব্যাপক হারে সংবাদ-ব্যবসা। নগদ কয়েক লাখ টাকা হাতে পেয়েই অনেকে এখন স্বপ্ন দেখেন একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করার। কেউ কেউ করেছেনও। এসব পত্রিকার অনেকগুলোর আস্তিত্ব চাইলেও দেখা যায় না। যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেছেন জীবন-জীবিকা নির্বাহ করার লক্ষ্যে, তাদের আজ মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

দৈনিক ইনকিলাব তার জন্মলগ্ন থেকেই মওলবী খবর তৈরির প্রবণতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই আস্থাটুকু বৃহত্তর পাঠক সমাজের কাছ থেকে সে আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে, এটা আমার বিশ্বাস। দৈনিক ইনকিলাব অনেকের মতো আমার কাছেও পৃথিবীর দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছে, দূরের মানুষকে একান্ত কাছের করে তুলেছে, অচেনা-অজানার সঙ্গে আমার নিকটতম পরিচয়ের যোগসূত্র রচনা করেছে। তাইতো এ পত্রিকাটির জন্মলগ্ন থেকেই আমার সংশ্লিষ্টতা বর্তমান। শুরু থেকেই এ পত্রিকার আমি একজন নিয়মিত লেখক ও পাঠক। দেশের লাখ লাখ মানুষকে, মানুষের বিচিত্র কার্যকলাপ ও চিন্তাধারার বাস্তব রূপায়ণকে প্রত্যক্ষভাবে দেখে নেয়ার সুযোগ কোনো সংবাদপত্রের পাতায় কারো ঘটে না। কিন্তু প্রতিদিনকার দৈনিক ইনকিলাবের পাতায় চোখ রাখলে এসব অদেখা মানুষকে আমরা দেখতে পাই, তাদের প্রাত্যহিক জীবনের কর্মধারার সঙ্গে আমরা পরিচিত হই। দৈনিক ইনকিলাব পৃথিবীর প্রতিবিম্ব নিজের বুকে চিহ্নিত করে আমাদের ছোট ছোট ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে।

এই পত্রিকাটিতে চলতি দুনিয়ার কয়েকটি নির্দিষ্ট খবর যে মুদ্রিত থাকে তা নয়, রাজনীতি, সমাজনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, বিচিত্র আমোদ-প্রমোদ, জীবিকা উপার্জনের সন্ধান ইত্যাদি নানা বিষয় স্থান করে নিয়েছে। বাইরের বড় পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় তুলে দেয়ার গুরুদায়িত্ব নিয়েছে দৈনিক ইনকিলাব। তাই একেবারে প্রথম পাতাতেই হতবাক হই যখন দেখি, ‘দেশের বাজারে আগুন’। পরে জানতে পারি এ আগুন ‘জনতার বাজারে’ নয় পবিত্র রমজান মাস অথবা কোনো বিশেষ উপলক্ষে জিনিসপত্রের চড়া দামের ‘আগুন’। দেশের মন্ত্রীরা যখন বলেন, ‘রাজনীতির চেয়ে সিনেমা জগৎ ভালো’- তখন মনে হয়, শিক্ষা জগৎ কিংবা খেলাধুলার জগৎ কি তার চেয়েও ভালো নয়?

আশার কথা- ‘মাঠে-ময়দানে’ দৈনিক ইনকিলাবের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্পাদকীয় পাতাটি যেন রাজমুকুটের মধ্যমণি। যথার্থ জনসেবার দায়িত্ব নিয়ে সত্যনিষ্ঠ, নির্ভীক, নিরপেক্ষ ভাবনাকে পাথেয় করে ‘সম্পাদকীয়’ পাতায় পক্ষপাতহীন ভাবনা সত্যিই বিরল দৃষ্টান্ত।

দৈনিক ইনকিলাব অবশ্যই যথার্থ জনসেবক। কারণ, প্রতিদিনই এই পত্রিকাটি বৃহত্তর সমাজকল্যাণকে তুলে ধরছে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে। পত্রিকাটি ধীরে ধীরে দেশের জনগণকে রাজনীতিক ও সমাজনীতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তুলছে। এই পত্রিকায় মাঝেমধ্যে এমন লেখকের লেখা পাই যারা শুধু লব্ধপ্রতিষ্ঠ কলমচি নন, সমাজের প্রতিক‚ল সময়ের কান্ডারি। বিভিন্ন লেখকের লেখায় ঋদ্ধ হয়েছে দৈনিক ইনকিলাব। লেখাগুলো বারবার মূল্যায়ন হয়েছে এই কারণেই যে, লেখকরা তাদের রচনার মধ্য দিয়ে সমাজে কী নেই, কী হতে পারে, কী হওয়া দরকার তা দেখার চেষ্টা করে থাকেন। লেখাগুলো পড়ে মনে হয়, এরা সৃষ্টিশীল। এরা শুধু তৈরি মঞ্চের লেখক নন, মঞ্চ তৈরির লেখকও বটেন।

লেখক হিসেবে নয়, সংবাদপত্র পাঠক হিসেবে দৈনিক ইনকিলাব আমার কাছে এমনই এক নেশা, এটা সকালে না পেলে ফোন করতে ইচ্ছা হয় সার্কুলেশন বিভাগে। আমি মানি না, ‘অতিরিক্ত সংবাদপত্র পাঠে সাহিত্যে অরুচি হয়।’ দেশে আর যা কিছুর অভাব থাক না কেন, সংবাদপত্রের অভাব নেই। দৈনিক ছাড়াও সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, দ্বিমাসিক, ত্রৈমাসিক, বার্ষিক- সব ধরনের সংবাদপত্র আছে; এগুলো বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। আমি চাই, দৈনিক ইনকিলাব হোক গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।’

দৈনিক ইনকিলাব নিয়মিত পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, পত্রিকাটি জনদরদিই শুধু নয়, এটি একটি নির্ভীক পত্রিকা। আত্মপ্রত্যয়ে পত্রিকাটি একনিষ্ঠ। এর নিরপেক্ষ ও উদার দৃষ্টিতে পাঠকরা ঋদ্ধ ও সন্তুষ্ট। জনগণকে সত্য ও মঙ্গলের পথে চালিত করাই দৈনিক ইনকিলাবের মূল কাজ। দৈনিক ইনকিলাব শুধু শহরমুখী নয়, গ্রাম জীবনের স্পন্দন এতে অনুভ‚ত হয়। পত্রিকাটির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ব্যাপক প্রচার খুবই প্রয়োজন। দৈনিক ইনকিলাব যে গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাফল্য লাভ করেছে, তা হলো দেশে কম শিক্ষিত মানুষরাও দৈনিক ইনকিলাবের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে।

লক্ষণীয়, দৈনিক ইনকিলাব কোনো ব্যক্তি বিশেষের প্রশংসা করে; কিন্তু তোষমোদ করে না, সমালোচনা করে; কিন্তু নিন্দা করে না। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ৩৬তম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এর বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি। দৈনিক ইনকিলাবের সম্মানিত সম্পাদকসহ এ পরিবারের সব সদস্য-সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখকদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন