দুদকের দায়মুক্তি প্রশ্নে রুল
৬-৭ শ’ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ করে কমিশন গ্রহণকারী ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মোল্লাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না -এই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র নথি তলব করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন রিটকারীর কৌঁসুলি মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশনের তৎকালীন প্রধান আব্দুস সালাম মোল্লার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৬/৭শ’ কোটি টাকা ঋণ দেন। বিপরীতে হাতিয়ে নেন বিপুল অংকের কমিশন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থে তিনি বসুন্ধরা, গুলশান ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি কেনেন। তার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করে ব্যাংকের কর্মচারিরা দুদকে আবেদন করেন। এ আবেদনের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ হিসেবে এ অনুসন্ধানটি না করে আব্দুস সালাম মোল্লা, তার সহযোগী আবুল কাশেম, রাকিবুল ইসলামকে দায়মুক্তি দেয়া হয়।
বিষয়টি উল্লেখ করে গত ৪ আগস্ট ‘দুদকের দায়মুক্তি ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে : শত শত কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের’, ‘ডলি কনস্ট্রাকশন’, ‘সোনালী টেক্সটাইল’ এবং ‘জজ ভ‚ঁইয়া (জেবি) গ্রæপকে নামমাত্র জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদানের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরিপূর্ণ অনুসন্ধান না করেই সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি দুদকের বিগত কমিশন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অগ্রণী ব্যাংকের তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার এবং ক্রেডিট ডিভিশনের প্রধান ছিলেন আব্দুস সালাম মোল্লা। এ পদে দায়িত্ব পালনকালে স্বল্প মূল্যের সম্পত্তি জামানত নিয়ে তিনি বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানিকে ঋণ লাভের ব্যবস্থা করে দিতেন। জাবের অ্যান্ড জোবায়ের (নোমান গ্রুপ)র নির্বাহী পরিচালক আবুল কাসেম এবং মো. রকিবুল ইসলাম তার এ কাজে সহযোগিতা করেন। বিশেষ একটি জেলায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে সালাম মোল্লা ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেন। পাস করিয়ে নিতেন বড় বড় ঋণ প্রস্তাব। এভাবে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থে তিনি স্ত্রী-পরিবারের সদস্যসহ নামে -বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন।
সম্প্রতি অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া আব্দুস সালাম মোল্লার সম্পদের পরিমাণ অঢেল। এর মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা জমির ওপর বহুতল বাড়ি,রাজধানীর গুলশানে যথাক্রমে: ২৫০০, ২৮০০ এবং ৩ হাজার বর্গ ফুটের ৩টি ফ্ল্যাট। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৫ নং রোডে একটি বাড়ি রয়েছে। এটি তার শ্বশুরের নামে কেনা। যমুনা ফিউচারপার্কে আব্দুস সালাম মোল্লা ও তার স্ত্রী সালমা সুলতানার নামে কিনেছেন ৬/৭টি দোকান। এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে স্ত্রী এবং শ্যালিকার নামে রয়েছে ১০/১৫ কোটি টাকার এফডিআর। বাড়ি নং-৩৩, রোড-০১, বøক সি, বনশ্রী আবাসিক এলাকার নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন।
অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট হওয়ায় দুদকের বাছাই কমিটি অনুসন্ধানের সুপারিশ করে। কমিশন বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ব্যাংক থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর রেকর্ডপত্র তলব (স্মারক নং ০০.০১.০০০০.৪০৪.০১.০০৮.১৯.৪৫৯০২)করা হয়। এর মধ্যে ছিল অগ্রণী ব্যাংক লোকার অফিস শাখার গ্রাহক ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের’(নোমান গ্রæপ) ডলি কনস্ট্রাকশন, সোনালী টেক্সটাইল, জজ-ভুইয়া গ্রæপ চলতি হিসাব খোলার আবেদন, ছবিসহ নমুনা স্বাক্ষর কার্ড, কেওয়াইসি ফরম, টিপি, প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ঋণ প্রাপ্তির আবেদন, আবেদনের ওপর ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন, গ্রাহকের সিআইবি রিপোর্ট, ঋণ মঞ্জুর সংক্রান্ত সুপারিশ, ঋণ মঞ্জুর সংক্রান্ত প্রধান কার্যালয়ের মঞ্জুরিপত্র, ঋণ প্রদান সংক্রান্ত গৃহিত জামানত এবং জামানতের মূল্যায়ন প্রতিবেদন। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুক‚লে প্রদত্ত ঋণের খাতওয়ারি রেকর্ডপত্রসহ বিবরণ, এসওডি, এফডিবিপি, ব্যাক টু ব্যাক এলসি, পিএডি, ঋণ হিসাব বিবরণী এবং সুদ-আসলসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান স্থিতি। প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুক‚লে বিভিন্ন অনিয়ম ও ঋণদান বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক লি:র অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট। এসব রেকর্ডপত্র হস্তগত করার পর দুদক ঋণ জালিয়াতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে আব্দুস সালাম মোল্লাসহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ৩ জনকে দায়মুক্তি দেয়। দুদকের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ এটি অনুসন্ধান করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন