রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

চতুর্থ যুগে ইনকিলাব

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

দৈনিক ইনকিলাব চতুর্থ যুগে পর্দাপণ করলো, তাকে অশেষ শুভেচ্ছা জানাই।
১৯৮৬ সালের ৪ জুন, যখন আলহাজ্ব মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.) ইনকিলাব প্রকাশ করেন, তখন এদেশের মাশায়েখ-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজের বৃহত্তর অংশের অন্তরে আনন্দের ঢেউ খেলছিল। পক্ষান্তরে মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.)-এর এ পত্রিকা একটি বিশেষ মহলের কাছে চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। তারা মনে করতেন, এটি কিছুদিনের মেহমান মাত্র, অচিরেই এর অবলুপ্তি ঘটবে। তাদের এখনো যারা বেঁচে আছেন, তারা নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন ইনকিলাব তার ৩৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে।

ইনকিলাব মানে বিপ্লব। বিগত তিন যুগে ইনকিলাব স্বাধীন বাংলাদেশের কয়েকটি শাসনামল প্রত্যক্ষ করেছে। এ সময়-কালের মধ্যে ইনকিলাব তার চলার পথে বারে বারে ঠোকর খেয়েছে, হোঁচট খেয়েছে কিন্তু তার বিপ্লবী যাত্রা থেমে থাকেনি। ধীরস্থিরভাবে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। সে তার নিন্দুকের নিন্দায় কখনো ভীত হয়নি। যুক্তি তর্কের মাধ্যমে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। ইনকিলাব সত্যনিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে চলছে।

ইনকিলাব তার বিঘোষিত নীতি-আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে, তার আদর্শ পরিপন্থী কিছুই সমর্থন করতে পারে না। এ পত্রিকার মৌলিক আদর্শ হচ্ছে কোরআন ও হাদীস তথা ইসলাম। সুতরাং কোরআনের বাহক মহানবী (সা.) এর প্রতি এবং কোরআনের প্রতি কোনো কুলঙ্গার কোথাও কোনো অশুভ ও অশালীন আচরণ বা অমর্যাদা প্রদর্শন করলে ইনকিলাব তার প্রতিবাদ-সমালোচনায় ক্ষুব্ধ ও সোচ্চার হয়ে উঠে এবং যৌক্তিক ও দালিলিকভাবে অখণ্ডনীয় জবাব দিয়ে থাকে।

গোটা দেশের আলেম-উলামা ও ইসলামদরদি জনতা সম্প্রতি একটি ঘটনায় প্রতিবাদমুখর ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তথাকথিত ‘গণ কমিশনের’ শ্বেতপত্র এর কারণ। বাংলাদেশে এরূপ বিচিত্র উদ্ভট ঘটনার দৃষ্টান্ত বহু রয়েছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মাদরাসা শিক্ষার বিরোধিতা করা এদেশে এক প্রকারের ‘সংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। সেই পরাধীন শাসনামল থেকে এর ধারাবাহিকতা বা যোগসূত্রের রেকর্ড বিদ্যমান। কিছুদিন পরপর নানা খুঁটিনাটি অজুহাতে, নানারূপে এবং নানা কায়দায় মাদরাসা শিক্ষা নির্মূল করার চক্রান্ত চলে আসছে। বস্তুত যতই মাদরাসা শিক্ষার বিরোধিতা করা হয়, ততই এ শিক্ষার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। ফলে মাদরাসার সংখ্যা যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি এ শিক্ষার মানও ক্রমাগত বাড়ছে।

অতীতের মাদরাসা শিক্ষা বিরোধী চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ার কথা বাদ দিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থেমে থেমে এ চক্রান্ত মাথাচাড়া দিয়ে উঠার দৃষ্টান্ত রয়েছে। কখনো তা ধামাচাপা পড়ে থাকে। আবার কখনো সুযোগ বুঝে চাঙ্গা হয়ে উঠে। এ সবেরই মূল টার্গেট মাদরাসা শিক্ষার বিলুপ্তি সাধন করা।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে। জঙ্গীবাদের কথাই ধরা যাক। এদেশে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ দেখা দিলে প্রথমে মাদরাসা শিক্ষা ও কিছু মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হতে থাকে এবং অপপ্রচার চালানোর ধারা শুরু হয়। অভিযোগ ছিল যে, এক শ্রেণির মাদরাসাশিক্ষিত ছাত্র ইসলামের নামে তথাকথিত জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত। এ ভিত্তিহীন অভিযোগ অচিরেই হাওয়া হয়ে যায়, যখন মাদরাসা শিক্ষিত আলেম ও পীর-মাশায়েখ ঘোষণা করেন যে, জঙ্গিবাদ হচ্ছে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং এটা পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্তদের ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতা। তারা এ ঘোষণা দিয়ে ক্ষান্ত হলেন না, এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেন। সরকারের পাশাপাশি তারাও প্রচার অভিযানে অবতীর্ণ হন, যার সুফল সকলের সামনে।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্যযোগ্য যে, ধ্বংসাত্মক জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন প্রচারণায় মাঠে অবতীর্ণ হয় এবং মাদরাসা শিক্ষিত দেশের আলেম-পীর-মাশায়েখও তাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের প্রচার-তৎপরতার বিবরণ ছড়িয়ে দিতে থাকে দৈনিক ইনকিলাব। ফলে জঙ্গীবাদ বিরোধী তৎপরতা অধিক বেগমান হয়ে উঠে। ইনকিলাবের সে সময়কার বহুমুখী এ ভূমিকা এদেশের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রতিনিয়ত মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন সাধিত হয়ে চললেও নানাভাবে এর বিরোধিতা চলছেই। দৈনিক ইনকিলাব জমিয়ত সংগঠনের মুখপত্র রূপে ভূমিকা পালন করে চলেছে। এ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন জমিয়ত সভাপতি হজরত মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.) এর অপূর্ণ স্বপ্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তব রূপ লাভ করার পেছনে ইনকিলাব সম্পাদক ও এ পত্রিকার অনন্য ভূমিকা সকল মহলেই স্বীকৃত। কওমী মাদরাসাগুলোর সনদের সরকারি স্বীকৃতি এবং এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা মাদরাসা শিক্ষা বিরোধীদের পক্ষে হজম করা কঠিন, এ কথা সকলে বোঝেন। সুতরাং সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হলে নতুন নতুন টেকনিক ব্যবহার করা আবশ্যক। কিন্তু ইনকিলাব যে এর পেছনে সতর্ক অবস্থায় পাহারাদারের দায়িত্বে রয়েছে, তাও সচাতন মহলের অজানা নয়।

সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে ইনকিলাবের নিরপেক্ষ ও আপোসহীন ভূমিকা যাদের অন্তরজ্বালার কারণ হয়, তারা সুযোগ পেলে খোঁচা মারবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। তাই ইনকিলাবকে চলতে হয় সতর্কতার সঙ্গে। তথাপি ন্যায়-নিষ্ঠ, নিরপেক্ষ ভূমিকা অক্ষুণ্ন রেখেই সে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ইনকিলাব সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, দুর্নীতি পাপাচারের বিরুদ্ধে এবং জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রয়েছে।

ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে ইনকিলাবের ধারা দেখে যারা ভীত- আতঙ্কিত, তারা ছোবল মারার চেষ্টা করবে না, এরূপ ভাবার সুযোগ নেই। করোনাকাল থেকে এ যাবত ইনকিলাব মানবতার সেবায় নিজেকে যেভাবে নিয়োজিত করে রেখেছে তা অতুলনীয়। ইসলাম মানবতার ধর্ম- এ বিষয়টির গুরুত্ব ইনকিলাব যথাযথভাবে তুলে ধরে থাকে, বাস্তবেও তার প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যায়। পাশাপাশি পত্রিকাটি সামাজিক অপরাধ-পাপাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ইত্যাদি মারাত্মক ঘটনাবলীর বিবরণ তথ্যভিত্তিক ফাঁস করে দিয়ে আসছে, তাতে সংশ্লিষ্টদের ঈর্ষান্বিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় ইনকিলাব তার যথাযথ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশের ধর্মকর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা প্রভৃতিকে ইনকিলাব সর্বাবস্থায় প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং তার প্রচার-প্রচারণার ধারাও সে অনুযায়ী পরিচালিত। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মকর্মে বাধা এলে ইনকিলাব তা প্রতিহত করতে সবর্দা প্রস্তুত। তাই দেখা যায়, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো অপশক্তি কোথাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে ইনকিলাব নীরব দর্শকের ন্যায় বসে থাকে না, তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং প্রয়োজনমত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে কুণ্ঠিত হয় না। দেশে-বিদেশে যেখানেই কোনো কুলাঙ্গার কোরআনের অবমাননা কিংবা রসুল (সা.) এর শানে গোস্তাখি করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে, সে সবের খবরাখবর ইনকিলাব জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করে থাকে এবং সকল মহলের বা মতাদর্শের খবরাখবর নিরপেক্ষভাবে প্রচার করে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Arif Azad ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৫ এএম says : 0
সন্ত্রাস এবং মাদকতার বিরুদ্ধে ইনকিলাব নিজস্বভাবে নিরলস প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সরকারি ইতিবাচক কর্মতৎপরতা ও পদক্ষেপগুলোকে সমর্থনের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে প্রচারও করে যাচ্ছে। অভিনন্দন িইনকিলাব পরিবারকে।
Total Reply(0)
Sharmin Akter Rima ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৫ এএম says : 0
৩৬ বছর পদার্পনে অভিনন্দন ও শূভেচ্ছা্। ইনকিলাব ইসলামের দর্পণ হিসেবে যে ভূমিকা রেখে চলছে, তা সংবাদপত্র জগতে অনন্য, বিরল। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সকল দিকসহ মানব জীবনের সকল দিক ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরছে। নিয়মিত ইনকিলাব পাঠ করলে একজন সাধারণ লোক ইসলাম সর্ম্পকে অনেক কিছুই অবগত হতে পারবে।
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৫ এএম says : 0
বিগত তিন দশকেরও অধিককাল ধরে ইনকিলাব স্বাধীন দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশ ও জনগণের স্বার্থে আত্মনিয়োগ করে চলেছে এবং এগুলোকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে আসছে। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে একদিকে ইনকিলাব দুর্গত মানবতার সাহায্যে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে সেজন্য মানুষকে উৎসাহ- অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে। শুভেচ্ছা রইলো ভালোবাসার পত্রিকার জন্য।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৫ এএম says : 0
প্রিয় পত্রিকা ইনকিলাবের জণ্য শুভকামনা রইল।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৫ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামি তাহজিব তামাদ্দুন রক্ষার মুখপত্র দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ইনকিলাবের জন্য রইল শুভ কামনা।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৬ এএম says : 0
ইনকিলাব বরাবরই বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনার কথা বলে আসছে এবং এ ব্যাপারে দেশের মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে আসছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৬ এএম says : 0
দোয়া করি দৈনিক ইনকিলাব কিয়ামত পর্যন্ত দেশ ও ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত থাকুক।
Total Reply(0)
শাহে আলম ৪ জুন, ২০২২, ৫:৫৬ এএম says : 0
ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, রাজনীতিবিদ ও জাতীয় বোধ-বিবেকের কণ্ঠস্বর আলহাজ মাওলানা এম.এ মান্নান রহ. এর কিছু দুর্লভ গুণাবলী ছিল। আল্লাহ তাকে জান্নাতুর ফেরদাউস দান করুক
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন