টানা ঘণ্টা দুয়েকের ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় ঢাকার অনেক সড়ক। জলমগ্ন সড়কে ব্যাহত হয় যান চলাচল, যাতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। গতকাল দুপুরে বৃষ্টির পর রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির সময় এবং বৃষ্টি থামার পর গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, নাজিরাবাজার, ধানমন্ডি, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, প্রেস ক্লাব, দৈনিক বাংলা, কাকরাইল, মিরপুর, শান্তিনগর ও মালিবাগের আশপাশের সড়কে যানজট দেখা গেছে।
এমরান আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি গুলিস্তান থেকে রামপুরা যেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বাসে উঠেছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে গুলিস্তানের কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সেই পানি পেরিয়ে বাসে ওঠার চেষ্টা করলাম, পারলাম না। দুই সিটে একজন যাত্রী নেওয়ায় আগে থেকেই বাস পরিপূর্ণ। তাই মাঝপথ থেকে যাত্রীরা বাসে উঠতে পারছেন না। তিনি আরো বলেন, গুলিস্তান থেকে বিজয় নগর আসতেই দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। বৃষ্টির পর একদিকে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি, অন্যদিকে যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভিক্টর ক্লাসিক বাসের চালক সাজেদুর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় আটকে ছিল। বৃষ্টি শেষ হওয়া মাত্রই সবাই রাস্তায় এসেছেন। তাই বৃষ্টির পর সড়কে যাত্রীর চাপ এবং যানজট দুটোই বেড়েছে। এছাড়া রাস্তায় পানি জমে থাকলে যানজট এমনিতেই সৃষ্টি হয়। গুলিস্তানে বাসের জন্য অপেক্ষা করা শহিদুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী বলেন, সড়কে পানি জমে থানায় শত শত যাত্রী বাসের অপেক্ষা করে। অনেকেই বাসে উঠতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বৃষ্টি হলেই আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আটকে পড়া অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারছিলেন না। সব ধরনের অফিস-আদালত খোলা থাকা সত্ত্বেও গণপরিবহনগুলোতে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকায় কর্মমুখী মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। বিকেলের পর সড়কে বেশিরভাগ বাসের দরজাই ছিল বন্ধ, মাঝপথে যাত্রী তুলছিল না কোনো বাসা। ফলে অপেক্ষমান যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে। বাধ্য হয়েই কেউ রিকশায়, কেউবা আবার হেঁটেই বাসার দিকে রওনা হন।
সরেজমিনে ঘুরে রাজধানীর আসাদগেট, ধানমণ্ডি-২৭, ধানমণ্ডি-৩২, পান্থপথ সিগন্যাল, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মালিবাগ, মৌচাক, তেজগাঁও, কাকরাইল, শান্তিনগর, পল্টন, গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকায় তীব্র থেকে তীব্রতর যানজটের দেখা মিলেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য গণপরিবহনে উঠতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন আফজাল আহমেদ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, দুই সিটে একজন করে যাত্রী নিয়ে পূর্ণ অবস্থায় গেট বন্ধ রেখে বাসগুলো আসে। তাই কোনো বাসেই উঠা সম্ভব হয়নি।
শাহবাগ মোড়ে থেকে মিরপুর-১০ নম্বরের বাসে ওঠার চেষ্টা করছিলেন আশিক ইকবাল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, কেউ বাসে উঠতে পারছেন না। কারণ সব বাসের গেট বন্ধ, মাঝপথে কোনো যাত্রী তারা তুলছে না। এ অবস্থায় যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
এদিকে, রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পর্যন্ত লম্বা যানজট দেখা গেছে। দীর্ঘ যানজট ছিল মহাখালী থেকে বনানীর সড়কেও। আবার, মহাখালী ফ্লাইওভার পার হয়ে জাহাঙ্গীর গেইট থেকে বিজয় সরণি সিগন্যাল পর্যন্ত ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এদিকে, মগবাজার, উত্তরা, মিরপুরসহ বেশকিছু এলাকার রাস্তায় ছিল না পর্যাপ্ত গণপরিবহন। এই সুযোগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও রাইড শেয়ারিংয়ের বাইকগুলোকে বেশি ভাড়া হাঁকতে দেখা গেছে। বাড্ডা লিংক রোড থেকে মুগদাগামী এক সংবাদকর্মী বলেন, অনেকক্ষণ ধরে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু সড়কে খুব বেশি সিএনজি ছিল না। আর যেগুলো ছিল, সেগুলো অনেক বেশি ভাড়া চায়।
এদিকে, গতকাল বুধবার সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের সবগুলো বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, গতকাল বেলা ১২টার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়। কিছুক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার পর তা আবার থেমে যায়। তবে একেবারেই বৃষ্টি থেমে যাবে এমন নয়। বৃষ্টি আবার শুরু হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন