পিরোজপুরের নেছারাবাদে বর্ষা ঋতুর আগমনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নে প্রায় আধা-কিলোমিটার জুড়ে বসছে এ নয়নাভিরাম হাট। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় করোনার প্রভাবে হাটে কেনা বেচায় অনেকটা ভাটা পড়েছে।
এ হাটকে কেন্দ্র করে উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ও বলদিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে আশ্বিন এ চার মাস নৌকা বেচা-বিক্রির ধুম পড়ে যায় হাটে। আষাঢ় মাস থেকে শুরু হয় নৌকার হাটের ভরা মৌসুম। তখন খালের পানিতে সমান তালে চলে বাহারি নৌকা বিকি-কিনি। নদী বিস্তৃত এলাকা ও কাঠের সহজলভ্যতা হওয়ায় এখানে নৌকার চাহিদা ব্যাপক। চাম্বল, মেহগনি ও রেইনট্রি কাঠের নৌকা আসে এখানে। কথা হয় স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে। তারা জানান, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার আটঘরের মানপাশা বাজারের নিকটবর্তী খালে বসে এ হাট। হাটে বেশিরভাগ নৌকাই আসে বলদিয়ার চামী, একতা, কলারদোয়ানিয়া ও বানারীপাড়া উপজেলার রায়ের হাট গ্রাম থেকে। একসময় সুন্দরি কাঠ দিয়ে এসব নৌকা তৈরি হতো। এখন নানা বাধ্যবাধকতাসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরি কাঠ দুষ্পাপ্র হওয়ায় হাটের নৌকাগুলো তৈরি হচ্ছে চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগনি কাঠ দিয়ে।
প্রতি হাটে প্রায় আড়াইশ’ থেকে তিন শতাধিক নৌকা বিক্রি হয় এখানে। হাটের লোকজন বিভিন্ন জায়গা থেকে সড়ক ও নৌপথে নানা যানবাহনে করে একসাথে অনেকটি নৌকা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিল ও চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার বিভিন্ন কাজে এসব নৌকা ব্যবহৃত হয়। তবে হাটের বেশিরভাগ নৌকা দরকার হয় পেয়ারা, আমড়া, মাছ ধরা, গো খাদ্য সংগ্রহে। এছাড়া নার্সারি ব্যবসার বিভিন্ন কাজে বেশিরভাগ নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে।
কথা হয় কলারদোয়ানিয়া গ্রামের নৌকা ব্যবসায়ী দুুলাল হোসেনের সাথে। তিনি ওইদিন হাটে বিভিন্ন সাইজের ৩৩টি নৌকা নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, দুুুুপুর ১২টার মধ্যে ১৬টি নৌকা বিক্রি করেছেন। আগে তিনি তার বাবার সাথে এ হাটে আসতেন। দশ বছর যাবৎ তিনি একাই হাটে আসেন নৌকা নিয়ে। একটি সাতহাতি চাম্বল কাঠের নৌকা এক হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া চাম্বল কাঠের একটি বারোহাতি নৌকা চার হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। একটি চার হাজার ৫০০ টাকার নৌকায় তার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাভ হয়ে থাকে।
উপজেলার আদমকাঠি গ্রাম থেকে নৌকা কিনতে আসা উমেস বসু বলেন, মাছ ধরা, গো খাদ্য সংগ্রহ, পেয়ারা তোলার কাজে ব্যবহারের জন্য তিনি নৌকা কিনতে আসছেন। হাটে ৭ হাত সাইজের ছোট নৌকার চাহিদাই বেশি। তিনি জানান, হাট থেকে তিনি দুইটি ছোট নৌকা কিনবেন। বর্ষা মৌসুমে চারদিকে পানি কাঁদায় টইট্ম্বুর থাকায় চলাচলের কাজেও নৌকা ব্যবহৃত হয়।
ব্রাহ্মণকাঠি গ্রামের নৌকা বেপারি গিয়াস উদ্দীন জানান, তিনি অনেক বছর যাবৎ এ হাটে নৌকা নিয়ে আসেন। মাছ ধরা, গো-খাদ্য সংগ্রহ, মানুষের হাট-বাজারে চলাচলের কাজে একসময় নৌকা ছিল প্রধান বাহন। এখন চারদিক রাস্তা-ঘাট হওয়ায় দিন দিন হারাচ্ছে নৌকা বিকি কিনির জৌলুস। অনেকে নৌকা বানানোর পেশা ছেড়ে জড়িয়েছে অন্য পেশায়।
রাস্তার উপরে নৌকার হাটের পাশেই বসেছে বৈঠার পসরা। নৌকার সাথে বৈঠা বিক্রি হয় না বিধায় পাশেই আলাদাভাবে বসে বৈঠার দোকান। আমইর, আমড়া, গাব, মেহগনি কাঠের বৈঠা বিক্রি হয় হাটে। একটি পাঁচ হাত সাইজের গাব কাঠের বৈঠা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন