বিগত দুটি বছরের করোনা মহামারীর ছোবলে দক্ষিণাঞ্চলের শতবর্ষের পুরনো ভাসমান নৌকার হাটগুলো মন্দা কাটিয়ে এবার যথেষ্ঠ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ফলে কাঠ ব্যাবসায়ী সহ নৌকার নির্মাতা এবং বিক্রেতাদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফিরে এসছে। তবে কাঠ, লোহা সহ উপকরনের পাশাপাশি নির্মাতাদের মজুরী বৃদ্ধির ফলে নৌকার দামও বেড়ে যাওয়ায় বিক্রী আশানুরূন হলেও বিগত দুটি বছরের তুলনায় কিছুটা হলেও ভাল। বরিশালের বানরীপাড়া, পিরাজপুরের নেসারাবাদ ও ঝালকাঠির ভাসমান হাটগুলোতে ক্রেতা সমাগম কিছুটা বৃদ্ধির ফলে এবার আগের দুটি বছরের তুলনায় নৌকা শিল্প করোনার বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
তবে গত দুটি বর্ষা মৌসুমের মত এবারো নৌকা তৈরীর কারিগর সংকটে কিছুটা বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের নৌকার মোকামগুলো। সাথে কাঠ, লোহা সহ বিভিন্ন উপকরনের দাম প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধি পেলেও নৌকার দাম সে তুলনায় না বাড়ায় বিক্রতাদের মুখে পরিপূর্ণ হাসি নেই। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কাঠসহ নৌকা তৈরির উপকরনের দাম বাড়লেও সে তুলনায় নৌকার দাম বাড়ান যাচ্ছে না। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা কিছুটা বিপাকে । পাশাপাশি এসব ভাসমান ও মৌসুমী হাটে কারিগড়ের অভাবে নৌকা তৈরিও যথেষ্ঠ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। গত দুটি বছর লকডাউনে পারিবহন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্তের ক্রেতার এসব হাটে আসেনি। ফলে বেচা কোনও ছিলনা ।
খাল-বিল, নদী-নালা বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই বর্ষা মৌসুমে নৌকার কদর অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী। বিশেষ করে বর্র্ষার এসময়ে কৃষকরা ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করেই রোপা আমনের বীজ সহ নানা কৃষি উপকরন নিয়ে অর্ধ নিমজ্জিত ফসলের জমিতে যায়। এছাড়াও বর্ষার পানিতে প্লাবিত বরিশালের বানরীপাড়া ও আগৈলঝাড়া, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, পিরোজপুরের নাজিরপুর ও নেসারাবাদের অনেক এলাকায়ই এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতেও এখনো নৌকাই একমাত্র বাহন। আউশ ধান কাটা ছাড়াও ঝালকাঠী ও নেসারাবাদের পানি বেষ্টিত বাগান থেকে পেয়ারা, আমড়া ও সব্জিসহ অন্যান্য ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতেও এখনো নৌকার কোন বিকল্প নেই। ঝালকাঠীর ভিমরুলীতে গত অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে নৌকার ওপরই পেয়ারার ভাসমান হাট বসছে। যা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর বর্র্ষা মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটে । বরিশালের বানরীপাড়াতেও সপ্তাহে দুদিন ধান-চালের ভাসমান হাট বসলেও কালের বিবর্তনে তার রমরমা বানিজ্য এখন অনেকটাই অতীত।
তবে এবার ভরা বর্ষা মৌসুমেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে এতদিন দক্ষিণাঞ্চলের নদী-নালা এবং খাল-বিলগুলো পানিতে টৈ-টুম্বুর না থাকলেও শেষ শ্রাবনের পূর্ণিমায় ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর গভীর সঞ্চালণশীল মেঘমালার বর্ষনে বর্ষার প্রকৃত রূপ বিলম্বে হলেও অনেকটাই ফিরে এসেছে। ফলে নৌকা নির্ভর এলাকায় চাহিদাও অনেকটাই বেড়ে গেছে।
একশ বছরের পুরানো ঝালকাঠী-পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী আটঘর হাটে এবার আগের দুটি বছরের সংকট কাটিয়ে নৌকার হাটে যথেষ্ঠ প্রাণ ফিরেছে। বরিশালের বানরীপাড়া ও পিরোজপুরের নেসারাবাদের নৌকার হাটও এখন অনেকটাই সজীব।
তবে ক্রেতাদের দাবী, এবার নৌকার দাম আগের কয়েকটি বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে অনেক চিন্তা ও হিসেব করেই তাদের নতুন নৌকা কিনতে হচ্ছে। তবে বিক্রেতাদের দাবী গত কয়েক বছরে কাঠ ও লোহা সহ সব উপকরনের মূল্যবৃদ্ধির সাথে কারিগড়দের মজুরীও প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। ফলে নৌকার দাম না বাড়িয়ে উপায় কি ?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন