শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

নেইমারই ব্রাজিল, ব্রাজিলই নেইমার

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০১ পিএম, ২২ জুন, ২০২১

কোপা আমেরিকার উদ্বোধনী ম্যাচ। স্বাগতিক ব্রাজিলের সামনে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ ভেনেজুয়েলা। তবে শুরুটা দুর্দান্ত করেছে ব্রাজিল। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায়-খেলল নেইমার, জিতল ব্রাজিল। গতপরশু ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে কোপা আমেরিকার উদ্বোধনী ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। আর তিনটি গোলের একটি নেইমারের। গোলের খাতায় একবার নাম লেখা হলেও বাকি দুটি গোলেও ছিল নেইমারের সরাসরি ভূমিকা। মার্কিনিওস ও বারবোসার দুটি গোলই গড়ে দিয়েছেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর এই তারকা। এ নিয়ে দেশের মাটিতে কোপা আমেরিকায় টানা ২১ ম্যাচে অপরাজিত থাকল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। সেই ১৯৭৫ সালে পেরুর বিপক্ষে শেষ হেরেছিল তারা। করোনার কারণে ভেনেজুয়েলার মূল দলের নয়জন খেলোয়াড় ছিলেন না। এমনিতেই দলটা লাতিন আমেরিকার দুর্বলতম দলগুলোর একটি, তারওপর করোনার এমন আঘাতে আরও বেশি দুর্বল হয়েই মাঠে নেমেছিল তারা। নেমেই পড়েছে নেইমারে উজ্জ্বল ব্রাজিলের সামনে! ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত রাখার সাথে সাথে ধারাভাষ্যকারদেরও সমান তালে ব্যস্ত রেখেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। কিছুক্ষণ পরপরই ধারাবিবরণী বক্স থেকে ‘ইটস নেইমার’, ‘নেইমার অ্যাগেইন’, ‘বিউটিফুল পাস ফ্রম নেইমার’, ‘হোয়াট অ্যা মিস বাই নেইমার’-এ জাতীয় শব্দগুলো শোনা গেছে বারবার।
প্রথম থেকেই অনেক সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু দুর্বল ফিনিশিংয়ের যন্ত্রণা এই ম্যাচেও ভুগিয়েছে তাদের। ম্যাচটিকে নেইমারময় বলার কারণ যে নেইমার শুধু গোল করেছেন বা করিয়েছেন সেটাই নয়, বরং গোল মিসের মহড়াতেও নেইমার ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে। যতগুলো গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন, অন্তত তিন-চারটা গোল হয়ে যেত তার। সেটা হয়নি। সেলেসাওরা সবগুলো সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে স্কোরলাইন কেমন হতো? তার ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়। তারপরও বড় কথা-ব্রাজিল জিতেছে।
ম্যাচের ২৩ মিনিটেই নেইমারের নেওয়া এক কর্নার থেকে ভেনেজুয়েলার ডিফেন্সের জটলার মধ্যে গোল করে বসেন পিএসজির ডিফেন্ডার মার্কিনিওস। প্রথমার্ধে নেইমারের মিসগুলোর পাশাপাশি বলার মতো ঘটনা এই একটাই। মাঝমাঠে ফ্রেড ও কাসেমিরোর পাশাপাশি সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার হিসেবে লুকাস পাকেতাকে খেলানো হলেও হতাশ করেছেন লিওঁর এই তারকা।
দ্বিতীয়ার্ধে ৬৪ মিনিটে রাইটব্যাক দানিলোকে ডিবক্সের মধ্যে ফেলে দেন ভেনেজুয়েলার ডিফেন্ডার। সেখান থেকে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। গোল করতে মোটেও সমস্যা হয়নি নেইমারের। এ নিয়ে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ১০৬ ম্যাচে ৬৭ গোল করা হয়ে গেল নেইমারের। আর মাত্র ১০ গোল করলে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার শীর্ষে কিংবদন্তি পেলের পাশে বসে যাবেন পিএসজির এই ফরোয়ার্ড। ৬৭ গোল করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নেইমার গোল করিয়েছেন আরও ৪৭টি। অর্থাৎ ১০৬ ম্যাচ খেলে ১১৪টি গোলে সরাসরি ভ‚মিকা রেখেছেন।
কিছু পরই রিচার্লিসনের বদলে গাব্রিয়েল বারবোসাকে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে। ৮৯ মিনিটে নেইমারের ক্রস বুক দিয়ে জালে ঠেলে ব্যবধান ৩-০ করে ফেলেন এই স্ট্রাইকার। তবে গোল মিস করলেও ম্যাচ শেষে লাভ হলো ব্রাজিলের। পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ৯ বারের কোপা চ্যাম্পিয়নরা।
গোটা ম্যাচে নেইমার যে কতটা অনবদ্য ছিলেন, সেটা বোঝা যায় কিছু তথ্যে। ৭টি ‘কি’ পাস দিয়েছেন। কি পাস বলতে বোঝায়-যে পাস থেকে প্রতিপক্ষের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেওয়া হয়। সফল ড্রিবলে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গেছেন ৬ বার, সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ২টি নিশ্চিত গোলের, তিনটা গোল করার বড় সুযোগ নষ্টও করেছেন। তারপরও ম্যাচজুড়ে দারুণ খেলা নেইমারের প্রশংসায় মাতলেন কোচ তিতে, ‘তার (নেইমার) সৃষ্টিশীলতার সামর্থ্যরে উন্নতি হয়েছে। ডান-বাম দুই পায়ের খেলায় উন্নতি হয়েছে। দিনকে দিন অননুমেয় খেলোয়াড় হয়ে উঠছে সে।’ করোনাভাইরাসের থাবায় নাজুক ভেনেজুয়েলার প্রতি অবশ্য সমবেদনাই ঝরল ব্রাজিল অধিনায়ক কাসেমিরোর কণ্ঠে, ‘তিন পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শুরুটা ভালো করতে হবে, যদিও আমাদের প্রতিপক্ষ ভেনেজুয়েলা খেলোয়াড়দের হারিয়েছে।’
একই দিনে কোপার আরেক ম্যাচে মাঠে নেমে ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে কলম্বিয়া। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-০ গোলের এই জয়ে গোলটিও ছিল দেখার মতো। ৪২ মিনিটে ইকুয়েডর বক্সের একটু সামনে ফাউলের শিকার হন কলম্বিয়া উইঙ্গার হুয়ান কুয়াদ্রাদো। ফ্রি কিক পায় কলম্বিয়া। এরপর মনে রাখার মতো একটি গোলের জন্ম দেন কলম্বিয়ার তিন খেলোয়াড়-এডউইন কারদোনা, কুয়াদ্রাদো ও মিগুয়েলে বোর্হা। গোলপোস্টে সরাসরি শট না নিয়ে কুয়াদ্রাদোর সঙ্গে তিনটি ছোট পাস খেলেন কারদোনা। বক্সে অপেক্ষায় থাকা বোর্হাকে বাতাসে ভাসানো পাস দেন কুয়াদ্রাদো। কারদোনো ছুটে ঢুকে পড়েন বক্সে। বোর্হার আলতো হেড তার সামনে পড়তেই দারুণ শটে বল জালে জড়ান কারদোনা। গোলটা দেখে মনে হয়েছে ব্যালে নাচের সম্মিলিত পারফরম্যান্স!
চলতি মাসের ১৮ তারিখ পেরুর বিপক্ষে পরের ম্যাচে মাঠে নামবে নেইমাররা। একই দিনে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে খেলবে কলম্বিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন