উত্তর : লাইলাতুল কদর। ‘কদর’ শব্দের অর্থ- মাহাত্ম্য ও সম্মান। মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে এ রজনীকে মহিমান্বিত রজনী বলা হয়। এ রজনীকে লাইলাতুল কদর বলার কারণ হচ্ছে- ‘আমল না করার কারণে পূর্বে যার কোন সম্মান ও মূল্য থাকে না, সে এ রজনীতে তাওবা ইস্তেগফার ও ইবাদাতের মাধ্যমে সম্মানিত ও মহিমান্বিত হয়ে যায়।’ কদরের আরেক অর্থ- তাকদীর, ভাগ্য এবং আদেশও হয়ে থাকে। আগামী এক বছর মানুষ কি করবে-কি করবে না, কি হবে-কি হবে না, এক কথায় মানুষের অবধারিত বিধিলিপি, হায়াত, মাউত, ভালো, মন্দ সার্বিক বিষয়ের ফায়সলা এ রজনীতে দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতার কাছে হস্তান্তর করা হয়। মুসলিম উম্মাহের কাছে এ রজনী খুবই গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এ রজনীতে মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন সন্ধ্যা থেকে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন। পাপী-তাপী বান্দাদের তাওবা কবুল করেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা দেন। আল্লাহ তা’লা উম্মতে মুহাম্মাদি (সাঃ)-এর এক রাত্রির ইবাদতকে পূর্ববর্তী উম্মতগণের হাজার মাসের ইবাদাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পূর্ববর্তী উম্মতগণ লম্বা জীবন পেতেন। তাদের অনেকেই আল্লাহপাকের ইচ্ছায় হাজার বছর বেঁচে থাকতেন। তাদের দীর্ঘকাল ইবাদাত-বন্দেগী করার সুযোগ হতো। পক্ষান্তরে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উম্মতগণের জীবন খুব সীমিত। মাত্র ষাট, সত্তর কিংবা আশি বছরের জীবন। এই স্বল্প সময়টুকুও অনেকের ভাগ্যে জুটেনা। এর আগেই অনেকে পরপারে পাড়ি জমাতে হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা শেষ নবীর উম্মাতের জন্য কিছু বিশেষ সময় ও সুযোগ রেখে দিয়েছেন। যাতে ইবাদাত-বন্দেগীর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক সওয়াব লাভের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। যেমন- আরাফাহ, আশুরা, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুল কদর ইত্যাদি।
লাইলাতুল কদর পৃথিবীর রজনীগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এ রজনীতে অবতীর্ণ হয়েছে মানবতার মুক্তির সনদ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘আল-কুরআন’। যার অনুপম শিক্ষাই মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ দেখায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ঘোষণা করেন- ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রজনীতে। আর কদরের রজনী সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রজনীতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সূরা আল-কদর)।
রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে ইবাদতের মাধ্যমে এ রজনী অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তা’লা তাঁর পূর্বেকৃত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’
মাহে রমজানের শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রজনী লাইলাতুল কদর হতে পারে। হাদিস শরীফে হযরত উবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত- একবার রাসূল (সা.) লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেয়ার জন্য বের হলেন। প্রতিমধ্যে দুইজন মুসলমানের মাঝে ঝগড়া লেগে গেলো। রাসূল (সা.) তাদের মধ্যে মিমাংসা করতে গেলে লাইলাতুল কদরের তারিখ স্মরণ থাকেনি। রহস্যজনকভাবে আল্লাহ তা’লা ভুলিয়ে দেন। তারপর রাসূল (সা.) বলেন- হয়তো এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রজনীগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো। (বুখারী)।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন- মহানবী (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের রাতে শবে কদর সন্ধান করো।’ আয়শা (রা.) আরো বলেন- রাসূল (সা.)-কে লাইলাতুল কদরের দোয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন- তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী।’ অর্থ- হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। (ইবনে মাজাহ)।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন