বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

পুষ্টি যোগাবে ও রোগ সারাবে ফল

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২১, ১২:০৮ এএম

ফল আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ, খাদ্য চাহিদা পূরণ, পুষ্টি সরবরাহ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বহুমাত্রিক অবদানে ফলগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পুষ্টিবিদদের মতে জনপ্রতি ১১৫ থেকে ১২৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আমরা খেতে পারছি মাত্র ৩৫-৪৫ গ্রাম। এর মূল কারণ হলো-চাহিদার তুলনায় যোগানের স্বল্পতা। তাই ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষে দেশি ফলের চারা রোপণ ও উৎপাদনে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।

ফলের দেশ-বাংলাদেশ। আমাদের দেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। দেশি ফলগুলো রঙে, রসে, স্বাদে অনন্য। শুধু খাদ্য হিসেবেই নয় দেশীয় ফলগুলোর রয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যবহার। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের কথা। পাকা ফল সরাসরি খাওয়াতো যায়ই পাশাপাশি কাঁচা কাঁঠাল এর বীজ তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। এর উচ্ছিষ্ট অংশ গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। প্রতিটি দেশীয় ফলেরই রয়েছে অনেক পুষ্টিমান আর বহুমুখী ব্যবহার। তাই মানবদেহে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অভাবে অনেক রোগ হয়। কারণ এসব পুষ্টি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ দুটো পুষ্টি উপাদানের প্রধান উৎস হলো শাকসবজি ও ফলমূল। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে সারাবছর ফল পাওয়া যায় বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বেশি। তাই নিয়মিত ফল খেয়ে আমরা রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। বিভিন্ন পুষ্টির অভাবে যেসব রোগ হয় এবং এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য যে ফল খাওয়া প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হলো।

* ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি, অন্ধত্বসহ বিভিন্ন রোগ হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন প্রয়োজন। ক্যারোটিন ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তর হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যেপযোগী পাকা আমে ৮৩০০, পাকা কাঁঠালে ৪৭০০, পাকা পেঁপেতে ৮১০০, আনারসে ১৮৩০, আমড়াতে ৮০০, পেয়ারাতে ১০০, লালবাতাবি লেবুতে ১২০, বাঙ্গিতে ১৬৯, জামে ১২০ ও জামরুলে ১৪১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে।

* ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) এর অভাবে বেরিবেরি রোগ হয়, দেহে তাপ ও ওজন কমে যায়। হজম শক্তি কমে, স্মরণশক্তি লোপ পায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। দৈনিক পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ১.৫ মিলিগ্রাম বি১ প্রয়োজন। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী পাকা আমে ০.১০, পাকা কাঁঠালে ০.১১, পাকা কলায় ০.১০, আনারসে ০.১১, ডাবের পানিতে ০.১১, বাঙ্গিতে ০.১১, আমড়াতে ০.২৮ ও কামরাঙাতে ০.১২ মিলিগ্রাম বি১ থাকে। এ ছাড়া সব ফলেই কিছু ভিটামিন বি১ আছে।

* ভিটামিন বি২- এর (রাইবোফ্লাভিন) অভাবে চর্মরোগ, মুখে ঘা, অস্পষ্ট দৃষ্টি, জিহবায় ঘা, জিহবা স্ফীত ও চোখে ছানি হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের জন্য দৈনিক প্রায় ২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ প্রয়োজন। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী পাকা কাঁঠালে ০.১৫, পেয়ারাতে ০.০৯, বাঙ্গিতে ০.০৮, আমলকিতে ০.০৮, জামরুলে ০.০৫ লিচুতে ০.০৬, বরইয়ে ০.০৫ মিলিগ্রামসহ সব ফলেই ভিটামিন বি২ আছে।

* ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, স্কার্ভি ও দাঁতের রোগ হয়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম লাল বাতাবি লেবুতে ১০৫, পেয়ারাতে ২১০ আমলকিতে ৪৬৩, কামরাঙ্গাতে ৬১, আমড়াতে ৯২, পাকা পেঁপেতে ৫৭, বরইয়ে ৫১, লেবুতে ৬৩, জামে ৬০ মিলিগ্রামসহ সব ফলেই ভিটামিন সি আছে।

* ক্যাসসিয়ামের অভাবে অস্থি ও দাঁতের রোগ হয়, রিকেট রোগ, জীবনীশক্তি হ্রাস এবং অকাল বার্ধক্য দেখা দেয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৪৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ৫৫, বেলে ৩৪, পাকা পেঁপেতে ৩১, বাতাবি লেবুতে ৩৭, লেবুতে ৯০, খেজুরে ৬৩, বাঙ্গিতে ৩২ মিলিগ্রামসহ সব ফলেই কিছু ক্যালসিয়াম আছে।

* আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা রোগ ও জীবনীশক্তি হ্রাস পায়। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩০ মিলিগ্রাম ও গর্ভবতী মহিলার ৪০ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী নারিকেলে ৬৯.৪, আমড়াতে ৩.৯, জলপাইয়ে ৩.১, খেজুরে ৭.৩, তরমুজে ৭.৯, বাঙ্গিতে ১.৪, জামে ৪.৩, বরইয়ে ১.৮, পেয়ারাতে ১.৪ ও পাকা আমে ১.৩ মিলিগ্রাম আয়রন আছে। অন্যান্য ফলে এর চেয়ে কম আয়রন আছে।

* ফসফরাসের অভাবে অস্থি ও দাঁতের বিভিন্ন রোগ ও রিকেট রোগ হয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১২০ মিলিগ্রাম ফসফরাস প্রয়োজন। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী আতাফলে ৪০, আমে ২০, কলাতে ৩০, কাঠাঁলে ৪১, খেজুরে ৫০, জলপাইয়ে ২৬, জামরুলে ৩০, ডালিমে ৭০, তালের শাঁসে ২০, নারিকেলে ২১০, পেয়ারাতে ২৮, বাতাবি লেবুতে ৩০, বেলে ৫০, লিচুতে ৩৫ মিলিগ্রামসহ সব ফলেই সামান্য পরিমাণ ফসফরাস আছে।

* বেশি শর্করা জাতীয় ফল হচ্ছে- আম, কলা, পেয়ারা, লিচু, বরই, খেজুর, বেল, আমড়া ও জলপাই। বেশি খাদ্যশক্তিসম্পন্ন ফল হচ্ছে- আম, কাঁঠাল, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, আনারস, পেয়ারা, বরই, লিচু, লেবু, নারিকেল, খেজুর, বেল, আমড়া, আমলকি ও জলপাই। এসব ফল খেলে দেহে শক্তি বাড়ে। দেহের পুষ্টি অভাব পূরণ করে।

রোগ প্রতিরোধের জন্য কৃত্রিম উৎসের চেয়ে প্রাকৃতিক উৎস যেমন মৌসুমি ফল খাওয়াই বেশি উত্তম। কারণ এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই ফল খান দেশি-বল পাবেন বেশি।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
শিক্ষক-কলামিস্ট, মোবাইল : ০১৭১৬ ২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন