বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন বছরের অর্থবিল পাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

জাতীয় সংসদে গতকাল সর্বসম্মতিক্রমে অর্থবিল ২০২১ পাস হয়েছে। এতে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

তবে আগের মতো ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে নয়; ২৫ শতাংশ কর এবং ওই করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্র কিনেও টাকা সাদা করা যাবে। একইভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে একই হারে কর ও জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা হবে। জমি ও ফ্ল্যাট কিনে এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে কালোটাকা সাদা হবে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবার করপোরেট কর কমানো, শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়ে ক্রসচেকে লেনদেনের শর্ত শিথিল ও রেস্তোরাঁর খাবারে ভ্যাট কমানোসহ বেশ কিছুসহ খাতে সুযোগ অব্যাহত রেখে জাতীয় সংসদে পাস হয় ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য অর্থ বিল। এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পাসের প্রক্রিয়া শুরু হলো। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের এই বাজেট পাস হবে। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনার সমাপ্তি টানতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এবারের বাজেটেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে দেশের প্রান্তিক তথা পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কাউকে পেছনে না রেখে সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে আগামীর পথে দূর, বহুদূর, বহুদূর---নিরন্তর।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে বাজেটের ওপর আলোচনা শেষ হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য দেন। বক্তব্য শেষ হলে স্পীকারের অনুমতিক্রমে অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের অর্থবিল ২০২১ জাতীয় সংসদের উত্থাপন করেন। এ সময় অর্থ বিলের ওপর কয়েকজন সদস্যের আনা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বাকিগুলো কন্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। পরে তিনি অর্থবিল পাশের অনুরোধ জানালে স্পিকার তা ভোটে দেন। এ সময় উপস্থিত সদস্যদের কন্ঠভোটে পাসহয় অর্থবল ২০২১। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য প্রণীত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় অর্থবিলের ওপর কয়েকজন সদস্যের আনা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বাকিগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। পরে তিনি অর্থবিল পাসের অনুরোধ জানালে স্পিকার তা ভোটে দেন। উপস্থিত সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হয় অর্থবিল।

গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২১ সালের অর্থবিল পাসের সময় কিছু ধারা সংশোধন করে পাস করা হয়েছে। সেখানে নগদ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে রাখা টাকার পাশাপাশি শেয়ারবাজার, ফ্ল্যাট-জমিতে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কর ও জরিমানা দিয়ে আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে একাধিক ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। এবার দেখা যাক, কোথায় কীভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নগদ টাকার পাশাপাশি আপনার যদি ব্যাংকে রাখা টাকা, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র থাকে, যা কালোটাকায় কেনা হয়েছে; তাহলে এসব খাতে রাখা কালোটাকাও সাদা করা যাবে। ২৫ শতাংশ কর ও করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা, অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করতে হবে। এ ছাড়া কেউ যদি কালোটাকা শেয়ারবাজারে নিয়ে যেতে চান, তাহলেও একইভাবে ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। তবে ওই টাকায় কেনা শেয়ার এক বছরের মধ্যে বিক্রি করলে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা বসবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময়ে দেয়া নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা ও এফডিআর, সঞ্চয়পত্র কিনে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি ৩০ জুন, অর্থাৎ আগামীকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। শেয়ারবাজারেও একই হারে কর দিয়ে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ শেষ হচ্ছে কাল। ফলে কম হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আছে আর মাত্র এক দিন। এক বছর ধরে নগদ টাকা বেশি সাদা হয়েছে। নগদ টাকা সাদা করায় বেশি আগ্রহ ছিল করদাতাদের। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩৪ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ তেমন একটা নেননি করদাতারা। গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৩৪১ জন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে এ সুযোগ নিয়েছেন। জমি কিনেও খুব একটা কালোটাকা সাদা হয়নি।

এদিকে বিনিয়োগ সহজ এবং উৎসাহী করতে শিল্পের কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ক্রস চেকের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে ৫০ হাজার টাকার বেশি কাঁচামাল কিনলে সে ক্ষেত্রে চেকে লেনদেনের বিধান চালু আছে। এটি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এখন থেকে ৫ লাখ টাকার কম টাকার কাঁচামাল কিনলে চেকে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা থাকছেনা। এতে শিল্প উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) ওপর বাড়তি যে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এমএফএস কোম্পানিগুলো আগের মতই সাড়ে ৩২ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর দেবে। গতকাল সংসদে অর্থবিল পাসের আগে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ মো. আব্দুস শহীদ এমএফএস সেবায় অতিরিক্ত ওই কর আরোপের বিষয়টি সংশোধনের প্রস্তাব তোলেন। পরে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। ২০১২ সালে বিকাশ সেবা চালু করার পর দেশে এখন নগদ, রকেট, ইউক্যাশ, এমক্যাশ, শিওরক্যাশ এবং উপায়সহ ১৬টির মত কোম্পানি এমএফএস সেবা দিচ্ছে।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধের আওতায় রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া নিষেধ। কিন্তু খাবার কিনে নিয়ে যাওয়া যাবে। তাই রেস্তোরাঁ চলছে মূলত সীমিত পরিসরে। তবে সংক্রমণ কমে গেলে বদলে যেতে পারে রেস্তোরাঁর এ চিত্র। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত রেস্তোরাঁ ব্যবসা আবার জাগিয়ে তুলতে কমানো হয়েছে ভ্যাট হার। এতে গ্রাহকের খাবারের খরচ কিছুটা হলেও কমবে। বর্তমানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ফাস্ট ফুডের দোকান, রেস্তোরাঁয় প্রতি ১০০ টাকার খাবারে ১৫ টাকা ভ্যাট কেটে রাখা হয়। নতুন অর্থবছর তথা ১ জুলাই থেকে এ ধরনের ফাস্ট ফুডের দোকান ও রেস্তোরাঁ থেকে ভ্যাট কাটা হবে ১০ টাকা। আর নন–এসি রেস্তোরাঁ বা ফাস্ট ফুডের দোকানে ভ্যাট দিতে হবে সাড়ে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২১ সালের অর্থবিল পাসের সময় এই সংশোধনী আনা হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এক বছর ধরে রেস্তোরাঁ ব্যবসা এমনিতে খারাপ গেছে। তাদের একটু স্বস্তি দিতে ভ্যাট কমানো হয়েছে।

বিদ্যমান ভ্যাট আইনের আওতায় কোনো প্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ওপর কোনো ভ্যাট নেই। তবে রাজধানী ও বড় শহরের বহু এসি, নন-এসি রেস্তোরাঁকে ভ্যাটের আওতায় এনে ভ্যাট আদায়ের নানা উদ্যোগ নিয়েছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। প্যাকেজ ভ্যাট প্রথা উঠে যাওয়ার পর রেস্তোরাঁ খাত থেকে ভ্যাট আদায়ের তদারকি বাড়িয়েছেন তাঁরা। ###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন