জাতীয় সংসদ নির্বাচন দূরের কথা দলীয় সরকারের অধীনে একটি উপ-নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন এমন বার্তাই দিল। গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি আনতে হবে।
সুজন সম্পাদক বলেন, এদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৭টি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। প্রত্যেকটিতে ক্ষমতাসীনরাই ফের ক্ষমতায় এসেছে। আর ৪টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এছাড়াও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে মাঠ প্রশাসনে সীমাহীন দলীয়করণ হয়েছে। এজন্য নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতার জন্য নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও হতে পারে। আবার সর্বদলীয় সরকারও হতে পারে। এটি ঠিক করবেন রাজনীতিবিদরাই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। দলগুলোর মাঝেই অতীতের মতো এই অনুভূতি আসা উচিত যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি আনতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা। কেননা, এতে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। ইভিএম কিংবা সিসি ক্যামেরা বসিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। ইভিএম মেশিনের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা ব্যক্তির, সেটি প্রমাণের জন্যই গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করেছে, নির্বাচন কমিশন-এমন সন্দেহের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ড. মজুমদার বলেন, আমরা আমাদের একটি ইভিএম এবং এর সোর্সকোর্ড দেয়ার লিখিত দাবি কমিশনকে জানিয়েছি, যাতে আমরা প্রমাণ করতে পারি যে এই ইভিএম ব্যবহার করার মাধ্যমে বেড়ায়ই ক্ষেত খেতে পারে। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ তোলা এবং অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে অনেক প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থেকে সাদা কাগজে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এমন প্রত্যয়নপত্র নেয়ার নজিরবিহীন পদক্ষেপ সন্দেহ তৈরি না করতে পারে না। এছাড়াও কমিশনের এমন কঠোরতার কারণে জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আর প্রয়োজন নেইÑ একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যও জনগণকে সন্দিহান করতে বাধ্য। কারণ গাইবান্ধা উপনির্বাচনে কমিশনের পক্ষ থেকে কারচুপি উদ্ঘাটনের নজিরবিহীন প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতাসীনদের কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ তোলা উভয়পক্ষের জন্যই উইন-উইন-এর মাধ্যমে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এবং তারা যে ক্ষমতাসীনদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয় তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সুজন সম্পাদক বলেন, আশা করি বিষয়টি কাকতালীয়। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে এ নাটকে প্রযোজকের কূটবুদ্ধির প্রশংসা না করে পারা যায় না। কারণ এর মাধ্যমে একই ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আবারও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তবে আমরা আশা করতে চাই যে, গাইবান্ধা-৫ আসনে কমিশন যা করেছে তা কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরানোর কোনো বৃহত্তর প্লটের অংশ নয়। তবে ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়, তেমনিভাবে নির্বাচন কমিশনের আমাদের ভোটাধিকার হরণের একের পর এক অপচেষ্টার কারণে মানুষ সন্দেহের চোখেই দেখছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন