মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

এগিয়ে আসছে ঈদুল আযহা, পশু বিক্রি নিয়ে শংকায় খামারীরা

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২১, ২:০১ পিএম

এগিয়ে আসছে ঈদুল আযহা। এবারো করোনার মধ্যে এসেছে কোরবানীর ঈদ। তবে গত বারের চেয়ে সময়টা বেশী খারাপ। নানা বিধি নিষেধ দিয়ে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা। চলছে শক্ত লকডাউন। এরমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদের দিনের কাউন্টডাউন। সে হিসাবে আর মাত্র দু’সপ্তাহ সময়। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে খামারীদের দুশ্চিন্তা। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহী বিভাগে দেড়লাখ খামারে প্রায় ২৪ লাখ গবাদি পশু পালন করা হয়েছে। গত বছর ছিল প্রায় আঠারো লাখ। অর্থাৎ এবার গতবারের চেয়ে প্রায় সাড়ে ছয়লাখ বেশী।
উল্লেখ্য, ক’বছর আগে হঠাৎ করে ভারত বাংলাদেশে গরু মহিষ পাঠানোর ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। হঠাৎ এমন কড়াকড়ির কারনে গরু মহিষ না আসায় বাজারে আমিষের চাহিদা পূরনে সংকট দেখ দেয়। গরুর মাংশের বাজার হয় অস্থির। কিন্তু এটা শাপে বরের মত হয় এদেশের মানুষের জন্য। ঘরে ঘরে শুরু হয় দু’চারটি করে গরু ছাগল লালন পালন। বহু শিক্ষিত বেকার যুবকরা ঝুকে পড়ে গরুর খামারের দিকে। সফলতাও আসে। মাত্র ক’বছরের মধ্যেই চাহিদার অতিরিক্ত গরু মহিষ ছাগল উৎপাদন হয়। মাংশের বাজারের সংকটও কিছুটা কাটে। কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয় লাখ লাখ পশু। এখন আর ভারত নির্ভরতা নেই। বরং চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু মহিষ শংকায় ফেলেছে এখানকার হাজার হাজার খামারীকে। মানুষের চাহিদা কিন্তু দেশী গরুর দিকে। এবারো খামারে খামারে লালন পালন করা হয়েছে লাখ লাখ গরু ছাগল।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রানি সম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা: উত্তম কুমার দাস বলেন, গেল বছরের তুলনায় এবছর রাজশাহী বিভাগে ও জেলায় গবাদি পশু বেশী উৎপাদিত হয়েছে। খামারের সংখ্য্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। নায্যমূল্য পাওয়ায় এবং সময় মতো রোগবালাই নিয়ন্ত্রন করতে পারার ফলে রাজশাহী বিভাগে গবাদি পশু উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় খামারগুলোতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। সেই সাথে খামারের গবাদি পশুগুলোকে নিয়মিত টিকাসহ সব ধরনের চিকিৎসায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। খামারিদের সহযোগতায় নিয়মিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে। খামারে পালিত পশুর রোগবালাই ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের দেয়া হচ্ছে আর্থিক প্রনোদনা। সব মিলিয়ে খামারিদের সাথে প্রানিসম্পদ দপ্তরের সখ্যতা বেড়েছে।
রাজশাহী প্রানিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, বিভাগটিতে এবার ১লাখ ৫১ হাজার ১৮টি খামারে গরু, মহিষ ও ছাগলসহ অন্যান্য গবাদি পশু পালন করা হয়েছে মোট ২৩লাখ ৯২ হাজার ৪১৯টি। যার মধ্যে গরু ৯লাখ ৮৪ হাজার ৯১৫টি (ষাঁড় ৬লাখ ২৩ হাজার ৫২১টি, বলদ ১লাখ ৮২ হাজার ৬৫৮টি, গাভী ১লাখ ৭৮ হাজার ৭৩৬টি), মহিষ ৩৫ হাজার ৭৫৬টি, ছাগল ১১লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪টি এবং ভেড়া পালন করা হয়েছে ২লাখ ৭ হাজার ৬৩টি। গত বছর খামারে উৎপাদিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১৭লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৮টি। এই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবছর ৬লাখ ৩৫ হাজার ৮২১টি বেশী গবাদি পশু উৎপাদিত হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী জেলার ১৪ হাজার ১৯৯টি খামারে মোট গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে ৩লাখ ৮২ হাজার ১১৪টি। গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৩লাখ ৬৯ হাজার। রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে মোহনপুরে সব চাইতে বেশি গবাদি পশু পালিত হয়েছে। সংখ্যায় যা ৫৭ হাজার ১১১টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে পবা সেখানে পালিত হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৬০টি। এর বাইরে রয়েছে গেরস্তের গোয়াল আর কৃষান বধুর হাতে লালন পালন হওয়া গরু ছাগল। সারা বছর ধরে পালন করা এগুলো যোগ হবে কোরবানীর পশু বাজারে। এত গবাদি পশু থাকার পরও শংকা কাটছেনা বিক্রি হওয়া নিয়ে।
করোনার কারনে চলছে লকডাউন। কতদিন চলবে তা নিশ্চিত নয়। পশুরহাট বসবে কিনা তাও অনিশ্চিত। খামারে বা বাড়িতে বাড়িতে এসে খুব সহজ নাও হতে পারে পশু বেচাকেনা। যানবাহন বন্ধ থাকার কারনে বাইরে থেকে আসতে পারছেনা পাইকারী গরু ব্যবসায়ীরা। অন্যবার এ সময় ক্রেতা বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে হাট ও খামারগুলো। অনেক মানুষ গ্রামে গ্রামে ঘুরে পছন্দের পশু কিনে গ্রামে রেখে যান। ঈদের দু’একদিন আগে নেবেন বলে এবারো তার লক্ষন নেই। তারপর ব্যবসা বানিজ্য নেই। অর্থনৈতিক মন্দা চরমে। অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না একলা কোরবানী করার। ক্রেতা বিক্রেতা সবার প্রত্যাশা সংকট কেটে যাবে। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে কোরবানী করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন