শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় মোবাইল পার্টির উৎপাত টার্গেট তরুণদের হাতের দামি মোবাইল ফোন : বন্ধুত্বের ছলে ছিনতাই

প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় মোবাইল পার্টির উৎপাত বেড়েছে। বয়সে তরুণ এসব ছিনতাইকারীর সাথে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ আছে। বন্ধুত্বের ছলে এরা মোবাইল ছিনতাই করে। তবে কখনও ছিনতাই কাজে ব্যাঘাত ঘটলে এরা আঘাত বা মারধর করতে দ্বিধা করে না। উঠতি বয়সী তরুণ বা কিশোর বয়সীরাই এদের প্রধান টার্গেট। রাজধানীর কয়েকটি থানা সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রায়ই থানায় অভিযোগ আসে। মামলা হয়, গ্রেফতারও হয়। ইদানীং এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্লাহ বলেন, শিশুদের হাতের মোবাইল ফোন দিয়ে একই সাথে অনেকগুলো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এগুলো ব্যবহারে নীতিমালা হওয়া জরুরি।
কিছুদিন আগের ঘটনা। কদমতলী থানার নূরপুর এলাকায় বাস করেন ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তা। তার পুত্র মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল শেষে কোচিং করে বাড়ি ফিরতে তার প্রায়ই রাত হয়ে যায়। এ কারণে এলাকার কারো সাথে মেশার সুযোগ হয় না। ছেলেটি একটি এনড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, যা তার এক আত্মীয় বিদেশ থেকে এনে দিয়েছেন। ওই ছাত্রের চাচার দেয়া তথ্য মতে, সেদিন সন্ধ্যার পর স্কুল থেকে ফিরে নূরপুরের এক রাস্তা দিয়ে বাসায় ফিরছিল ছেলেটি। এসময় এক তরুণ তাকে ডাক দিয়ে বলে, ‘এই ছেলে এইদিকে আসো’। পরিচিত মনে করে তার কাছে যেতেই তরুণ বলে তোমার নাম কি? নাম বলার পর ওই তরুণ তাকে বলে, তোমার সাথে কথা আছে। আমার সাথে আসো। এই বলে ছেলেটিকে পাশের এক গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে আরো দুইজন অপেক্ষা করছিল। সেখানে যাওয়ার পরই একজন পকেটে হাত দিয়ে ছেলেটির মোবাইল ফোনটি বের করে নেয়। এরপর সেখান থেকে আরেক গলি দিয়ে আরো ভেতরে নিয়ে যায়। ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে এরই মধ্যে ছেলেটির মা কয়েকবার মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু তারা কলটি রিসিভ না করে কেটে দেয়। বাড়তে থাকে মায়ের টেনশন। ছেলেটিকে নির্জন গলিতে নিয়ে গিয়ে একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বলে, তোর মা অস্থির হয়ে গেছেন। এখন বাড়ি যা। পেছনের দিকে তাকালে কিন্তু গুলি করে দেবো। এরপর ছেলেটি ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে চলে আসে। ওই ছেলের আত্মীয় নাম-ঠিকানা গোপন রাখার শর্তে বলেন, যারা এ কাজটি করেছে তারা সবাই এ এলাকার। কিন্তু আমার ভাতিজা কাউকে চেনে না। আরেক ভুক্তভোগী মোহামেডান সমর্থক গোষ্ঠীর কর্মকর্তা শামীম জানান, ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে তার স্কুলপড়–য়া ছেলের মোবাইল সেটটি নিয়ে যায় তারই বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন। কোচিং করে ফেরার পথে তার এক বন্ধু ডেকে নিয়ে তার হাত থেকে মোবাইল সেটটি রেখে দেয়। মোবাইল ফোন সেটটি রেখে দেয়ার পর তারা হুমকি দিয়ে বলে এ কথা কেউ জানলে কিন্তু তোর বিপদ হবে। কাল কোচিং করতে এলে টের পাবি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা সটকে পড়ে। শামীম জানান, আমার ছেলে বাসায় এসে এ ঘটনা আমাকে বা ওর মাকে আর জানায়নি। রাতে একটা কল করার জন্য ওর মোবাইলটা চাওয়ার পর সে বিব্রতবোধ করতে থাকে। বেশ কয়েকটি প্রশ্নের পর বলে আমার এক বন্ধু মোবাইল সেটটা রেখে দিয়েছে। তিনি বলেন, এরপর ওর ওই বন্ধুর কাছে গিয়ে জানতে পারি আরেক ছেলে সেটা নিয়ে গেছে। পরদিন তারা বাসা খুঁজে বের করে তার কাছে থেকে সেটটি উদ্ধার করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উঠতি বয়সী এসব তরুণের সাথে পেশাদার সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী চক্রের যোগাযোগ আছে। ছিনাতাইয়ের পর এরা ওই সব চক্রের কাছেই মোবাইল সেটগুলো বিক্রি করে দেয়। তারা সেগুলো বেশ কিছুদিন ইনঅ্যাকটিভ করে রেখে পরে বিক্রি করে দেয়। আগারওগাঁও থানার একজন এসআই জানান, আগারগাঁও সরকারি কোয়ার্টার থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেফতার করার পর এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তাতে মনে হয়, এরা নেশার টাকার জোগাড়ের জন্য প্রথমে এ কাজে নামে। ছিনতাই করতে করতে এরা পেশাদার হয়ে যায়। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের টার্গেট পরিচিতরাই। ভয়ভীতি দেখিয়ে পরিচিতদের কাছে থেকে এরা মোবাইল সেট ছিনতাই করে অপরিচিতদের দিয়ে। আলাপকালে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এই ইদানীং তরুণ বা উঠতি বয়সীদের মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে জানিয়ে বলেন, এখন ১২ বছরের একটা ছেলে কিংবা মেয়ের হাতে ২০-২৫ হাজার টাকার এনড্রয়েড ফোন থাকে। সেটার লোভেও তো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্লাহ বলেন, পৃথিবীর কোথাও ১৮ বছরের নিচে কোনো শিশু বা কিশোর মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। ব্যবহার করলেও তারা সেটা নিয়ে স্কুল-কলেজ বা মার্কেটে যায় না। আমাদের দেশে মোবাইল ফোন কারা ব্যবহার করবে তার কোনো নীতিমালা নেই। তিনি বলেন, একটা শিশুর হাতে যদি ২০-২৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল সেট থাকে তাহলে সে তা শো-আপ করবেই। এটা তার স্বভাবজাত প্রকৃতি। আর এই শো-আপ করার কারণেই অপরাধীদের চোখ পড়ে সেখানে। সমাজবিজ্ঞানী আমানউল্লাহ বলেন, অপরিণত বয়সের একটা ছেলের হাতের মোবাইল সেট দিয়ে একই সাথে অনেকগুলো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে একটি শিশু ইন্টারনেটে আজেবাজে জিনিস দেখছে। সোস্যাল মিডিয়াতে এই বয়সে যা করা উচিত নয় তা করার সুযোগ পাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন