শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

সত্যালোকের সন্ধানে সালাত দর্শন : একটি তাত্ত্বিক সমীক্ষা

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ, কে, এম ফজলুর রহমান মুন্শী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায় করা একান্ত অপরিহার্য। তাছাড়া সপ্তাহে একদিন শুক্রবার জুমার সালাত আদায় করাও ফরজ। অধিকন্তু মৃতের জন্য সালাতে জানাজা আদায় করা ফরজে কেফায়া। ফরজ সালাত ছাড়া সুন্নাত এবং নফল সালাতও রয়েছে। অনুরূপভাবে বছরে দুই ঈদের সালাত ওয়াজিব হিসেবে পরিগণিত। মোটামুটিভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, সালাতের শ্রেণীভেদ চারটি ভাগে বিভক্ত। যথাÑ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল। ফরজ সালাতের সাথে সন্নিহিত আছে ফরজে কেফায়া সালাত এবং সুন্নাত সালাতের সাথে জড়িত আছে সুন্নাতে মোয়াক্বাদাহ সালাত ও সুন্নাতে যায়েদাহ সালাত। দেখা যায়, ওয়াজিব এবং নফল সালাত আপন আপন পরিম-লে সুপ্রতিষ্ঠিত আছে এবং একজন মুসলমান ব্যবহারিক জীবনে এ সকল সালাত প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সর্বদাই তৎপর থাকেন। এমনকি অন্যকেও সালাত প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করেন। পবিত্র কোরআনে বার বার সালাত প্রতিষ্ঠার তাগিদ করা হয়েছে এবং রাসূলে পাক (সা.) সালাতের ব্যবহারিক দিকটি হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব এহেন গুরুত্বপূর্ণ সালাতের অন্তর্নিহিত মর্ম উপলব্ধি করা, অনুধাবন করা এবং তদানুসারে আমল করা প্রত্যেক বিশ্বাসী মুসলমানের একান্ত দরকার। এ লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য আমরা সে পথে অগ্রসর হতে চাই সংখ্যা-তত্ত্বের ভিত্তিতে। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকে অবলম্বন করে ও উপাত্ত হিসেবে ধরে নিয়ে সালাতের পূর্ণাঙ্গ চিত্রের মৌলিক সমন্বয় সাধন করার এই প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। তা আল্লাহপাকের দেয়া শাশ্বত বিধানমালাই একটি দিকমাত্র। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘ওয়া আহছা কুল্লা শাই-ইন আদাদা’ অর্থাৎ আমি প্রতিটি জিনিসকেই সংখ্যা ও পরিমাণের মাধ্যমে বিন্যাস্ত করেছি। মোটকথা, এই পৃথিবীর সকল পদার্থেরই একটি নির্দিষ্ট সীমা ও পরিম-ল আছে। এই সীমারেখার মাঝে সবকিছুই নির্দিষ্ট সংখ্যায় বিচরণ করে পরিপুষ্ট হয় এবং পরিপূর্ণতার লক্ষ্যে এগিয়ে চলে। তাই বিশ্বাসী বান্দাদের ফরজ ইবাদত সালাতের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নেই। পরম বিজ্ঞানময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সালাতের মাঝে অসংখ্য হেকমত ও নেয়ামত গচ্ছিত রেখেছেন। জেনে-শুনে ও বুঝে এ সকল নেয়ামতের শোকর আদায় করা সকল মুমিন মুসলমানেরই দরকার। হাকিকত সালাত কী, কেমন এবং কীরূপে তা বিশ্লেষণ করার আগে সালাত কার জন্য নিবেদিত হতে হবে, এ নিয়ে আজ আমরা খোলাসা আলোচনা করতে প্রয়াস পাব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, “ইন্না ছালাতী ওয়া নুছুকী, ওয়া মাহ, ইয়া-ইয়া ওয়া মামাতী, লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন” অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য নিবেদিত। এক কথায় বলা যায়, সালাত আল্লাহরই জন্য। সকল সালাত আল্লাহপাকের দরবারেই নিবেদিত হতে হবে। সুতরাং সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে এর সুষ্ঠু সমাধান পেতে হলে আমাদের নি¤œলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি গভীরভাবে তাকাতে হবে।
(ক) সালাত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। আরবি ‘আল্লাহ’ শব্দে চারটি বর্ণ রয়েছে। আলিফ, লাম, লাম এবং হা। তাই দেখা যায়, সালাত অনুষ্ঠানের প্রতিটি অবস্থায় চার সংখ্যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সালাতের কোনো অংশ চার সংখ্যা হতে বেশিও নয় কমও নয়। যেমন (১) সালাত শব্দে চারটি বর্ণ রয়েছে; যথা- সোয়াদ, নাম, ওয়াও এবং তা। (২) সালাত হয় দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়, কিংবা বসে। দাঁড়ানোকে আরবিতে বলে কিয়াম। এখানেও চারটি বর্ণ রয়েছে। যথা- কাফ, ইয়া, আলিফ এবং মীম। বসাকে আরবিতে বলে কা’দাহ। এখানেও চারটি বর্ণই আছে। যথা-ক্বাফ, আইন, দাল এবং তা। (৩) সালাত আরম্ভ করতে হয়, সূরাহ অথবা কেরাআত দিয়ে। তাই দেখা যায়, আরবি সূরাহ শব্দেও চারটি বর্ণ রয়েছে। যথা-ছীন, ওয়াও, রা এবং তা। আর কোরআন শব্দেও চারটি বর্ণ স্থানলাভ করেছে। যথা- ক্বাফ, রা, হামজা এবং তা। (৪) সূরাহ ও কেরাআত শেষ করে মুসল্লি রুকুতে যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি রুকু শব্দটিতেও চারটি বর্ণ রয়েছে। যথা- রা, ক্বাফ, ওয়াও এবং আইন। (৫) রুকু শেষ করে দাঁড়ানোকে আরবিতে ক্বাউমাহ বলে। এখানেও চারটি বর্ণের সমাহার। যথা-ক্বাফ, ওয়াও, মীম এবং তা। (৬) তারপর মুসল্লি সিজদাতে যায়। আরবি সিজদাহ শব্দে চারটি বর্ণ আছে। যথা-ছীন, জ্বীম, দাল এবং তা। (৭) সিজদাহ শেষ করে মুসল্লিকে বসতে হয়। এই বসাকে আরবিতে বলে জলছাহ। এখানেও চারটি বর্ণই আছে। যেমন- জ্বীম, লাম, ছীন এবং তা। (৮) এভাবে নির্দিষ্ট রাকাতগুলো শেষ করে মুসল্লি সালাম ফিরায়ে সালাত হতে বের হন। দেখা যায় আরবি সালাম শব্দেও চারটি বর্ণ আছে। যথা-ছীন, লাম, আলিফ এবং মীম। এখানে এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, সালাতের সকল অবস্থায়ই সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে চার এর মূল নিহিত আছে আল্লাহর নামের চার বর্ণ বা চার সংখ্যার সাথে। (৯) আরও লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ফরজ সালাত চার রাকাতের বেশি এক নিয়তে আদায় করা হয় না। চাই সে সালাত ফরজে আইনই হোক কিংবা ফরজে কেফায়াই হোক। ফরজ সালাতের রাকাত সংখ্যা চার এর মাঝেই সীমাবদ্ধ। এর বেশি নয়। তবে হাঁ, তিন এবং দুই রাকাত ফরজ সালাতও আছে। কিন্তু দুই রাকাতের কম ফরজ সালাত নেই। (১০) দুই রাকাতবিশিষ্ট ফরজ সালাত হলোÑ ফজর এবং জুমা। এই দুই রাকাতকে যোগ করলে যোগফল চারই হয়। যথা- (২+৪)=৪। (১১) মাগরিবে তিন রাকাত ফরজ সালাত আছে। আল্লাহপাক এই তিন রাকাতকেও নিজের জন্য কবুল করেছেন। হাদিস শরীফে আছে, ‘ইন্নাল্লাহা বিত-রুন ইউহিববুল বিতরা” অর্থাৎ আল্লাহপাক বেজোড়, তিনি বেজোড়কেই ভালোবাসেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তিন সংখ্যাটিও বিজোড় হিসেবে আল্লাহর প্রতিই নিবেদিত। (১২) ইসলামের দৃষ্টিতে সকল কাজই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। ওয়াক্ত ভেদে তাই নিয়ত করে থাকেন। হাদিস শরীফে আছে, “ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত”। অর্থাৎ সকল আমলই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। দেখা যায় আরবি নিয়ত শব্দেও চারটি বর্ণই আছে। যথা- নুন, ইয়া, ইয়া এবং তা।
সুতরাং সালাত কায়েমের লক্ষ্যে আসুন আমরা সত্যিকারভাবে সালাতের বিভিন্ন অবস্থার সাথে একাত্ম হয়ে যাই এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে প্রয়াসী হই। আল্লাহপাকই আমাদের সহায়। সালাতের দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে ওয়াজিব। এই ওয়াজিব সালাতের মাঝে রয়েছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সালাত, বিতর-এর সালাত এবং কাজা সালাত। সংখ্যাতত্ত্বের আলোকে সার্বিকভাবে এই ওয়াজিব সালাতও চার সংখ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট। নি¤েœর উদাহরণগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে আমরা দেখতে পাই : (১) আরবি ওয়াজিব শব্দটিতে চারটি বর্ণ আছে। যথা-ওয়াও, আলিফ, জ্বীম এবং বা। এখানেও চার সংখ্যার বিকাশ দেখা যায়। (২) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মাঝে দুই, দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত ওয়াজিব সালাত আদায় করতে হয়। (৩) বিতর সালাতও ওয়াজিব। এই সালাত মোট তিন রাকাত। তিন সংখ্যাটি বেজোড় বিধায় এখানেও আল্লাহর মহত্ব বিধৃত রয়েছে। যেমন- হাদিস শরিফে আছে, আল্লাহপাক বেজোড়, তিনি বেজোড়কে ভালোবাসেন। (৪) কাজা সালাতও ওয়াজিব। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি কাজা শব্দটিতে চারটি বর্ণ স্থান লাভ করেছে। যথা-ক্বাফ, দ্বোয়া, আলিফ এবং হামজা। অতএব ওয়াজিব সালাতও একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। মহান আল্লাহপাক স্বীয় বান্দাহদেরকে ওয়াজিব আদায়ের ভিতর দিয়ে গভীর হতে গভীরতর নৈকট্যের সাগরে অবগাহন করার তাওফিক প্রদান করেন। (৫) ওয়াজিব সালাতের পর তৃতীয় প্রকার সালাত হচ্ছে সুন্নাত। এই সুন্নাত সালাতেও চার সংখ্যাটির বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। যথা- (১) আরবি সুন্নাত শব্দটিতে সর্বমোট চারটি বর্ণ আছে। যেমন- ছীন, নূন, নূন এবং তা। (২) এই সুন্নাত সালাত আবার দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। (ক) সুন্নাতে মুয়াক্বাদাহ এবং (খ) সুন্নাতে যায়েদাহ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এই দুই প্রকার সুন্নাত সালাতের মাঝেও চার সংখ্যাটির সম্পৃক্তি বিদ্যমান আছে। যেমন- সুন্নাতে মুয়াক্বাদাহ সর্বমোট চল্লিশ রাকাত। ফজরে দুই, জোহরে ছয়, মাগরিবে দুই, এশাতে দুই, জুম্মায় আট এবং তারাবিতে বিশ রাকাত।
এখন এই সবগুলোকে যোগ করলে, যোগফল হয় (২+৬+২+২+৮+২০)=৪০ (চল্লিশ)। এখন এই চল্লিশ যদি এক ইউনিট বা এককে পরিণত করা হয় তাহলে ফল হবে চার। যথা (৪+০)=৪। তাই একথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, সুন্নাতে মোয়াক্বাদাহ সালাতের সর্বত্রই আল্লাহর কুদরত ও নৈকট্যের প্রতিফল বিদ্যমান আছে।
অপরদিকে পাঁচ ওয়াক্তের সালাতে সুন্নাতে যায়েদাহ চার চার রাকায়াত করেই আছে। যেমন আসরে চার রাকাত এবং এশার চার রাকাত। তাই এখানেও চার এরই মাহাত্ম্য লুক্কায়িত আছে।
(৬) সালাতের সর্বশেষ শ্রেণী হচ্ছে নফল। এই সালাতের জন্য বান্দাহ আল্লাহপাকের অসংখ্য নেয়ামত ও রহমত লাভ করতে সক্ষম হয়। হাদিস শরিফে আছে, “তোমরা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কুদরত ও নৈকট্য তালাস কর।” লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি নফল শব্দটিতে তিনটি বর্ণ আছে। যথা-নূন, ফা এবং লাম। এই তিন সংখ্যাটিও বেজোড় হিসেবে আল্লাহর মনোনীত ও পছন্দনীয়। এই জন্য সকল মুসল্লির উচিত সকল চিন্তাভাবনা, জড়তা আবিলতামুক্ত হয়ে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহপাকের দিদার লাভ করা। কেননা হাদিস শরিফে আছে, “তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও তাহলে (এমন ধারণা কর যে) তিনি তোমায় দেখেছেন।”
(৭) শুধু তাই নয়, সালাত আদায় করতে হলে মুসল্লিকে কেবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হয় কিংবা মূল কা’বাকে সামনে রেখে দ-ায়মান হতে হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি কেবলা শব্দটিতে সর্বমোট চারটি বর্ণই স্থানলাভ করেছে। যথা-ক্কাফ, বা, লাম এবং তা। তাছাড়া আরবি কা’বা শব্দটিতেও চারটি বর্ণই রয়েছে। যথা-ক্কাফ, আইন, বা এবং তা। এখানেও চার সংখ্যারই বিকাশ।
(৮) সালাতে যা কিছু পাঠ করা হয়, তার সবকিছুই অহী হিসেবে পরিগণিত। তন্মধ্যে, প্রথম হচ্ছেÑ অহীয়ে মতলু বা কোরআন এবং দ্বিতীয় হচ্ছে, ‘অহীয়ে গায়রে মাতলু’ বা হাদিস। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোরআন শব্দেও চারটি বর্ণ আছে। যথা-ক্কাফ, রা, আলিফ এবং নুন। অপরদিকে হাদিস শব্দেও চারটি বর্ণই সম্পৃক্ত আছে। যথা- হা, দাল, ইয়া এবং ছা। সুতরাং এখানেও চার-এর আবর্তনই লক্ষ্য করা যায়।
(৯) সালাত কায়েম করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, ‘তাহুর’ বা পবিত্রতা অর্জন করা। হাদিস শরিফে আছে, “পবিত্রতা ঈমানের অংশবিশেষ।” লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি তাহুর শব্দে চারটি বর্ণই রয়েছে। যথা- ত্বোয়া, হা, ওয়াও এবং রা।
(১০) এই পবিত্রতা অর্জনের সার্বিক কর্মকা-কে আরবিতে বলা হয় ‘ওয়াজুউন’ বা ওয়াজু। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ওয়াজুউন শব্দেও চারটি বর্ণই রয়েছে। যথা-ওয়াও, দ্বোয়া, ওয়াও এবং হামজা। লেখার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে শেষ বর্ণ হামজা উহ্য থাকে বলে ‘ওয়াজু’ লেখা হয়।
(১১) ওয়াজু সম্পাদনের লক্ষ্যে যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে আল-কোরআনে বহু বচনে ব্যবহার করা হয়েছে। যথা-‘বুজুহ’, আইদি, রুউস এবং আরজুল। অর্থাৎ মুখম-ল, হস্তাদি, মস্তক এবং পদসমূহ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এর প্রত্যেকটিই চার-এর সাথে সংশ্লিষ্ট যেমন-বুজুহ শব্দে চারটি বর্ণ আছে। যথা-ওয়াও, জ্বিম, ওয়াও এবং হা। আর আইদি শব্দেও চারটি বর্ণই স্থান লাভ করেছে। যথা-আলিফ, ইয়া, দাল এবং ইয়া। রুউস শব্দেও চারটি বর্ণই আছে। যথা-রা, হামজা, ওয়াও এবং ছিন। আর আরজুল শব্দেও চারটি বর্ণই আছে। যথা-আলিফ, রা, জ্বিম এবং লাম।
(১২) আর যে স্থানে সালাত আদায় করা হয়, সে স্থানকে আরবিতে মসজিদ অথবা মাসজাদ বলা হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখানেও চারটি বর্ণই আছে। যেমন-মীম, ছিন, জ্বিম এবং দাল।
(১৩) সালাত আদায় করতে গেলে জামাতের সাথে আদায় করা হয়, নতুবা পৃথকভাবে আদায় করতে হয়। জামাতের সালাত যিনি পরিচালনা করেন, তাকে বলা হয় ইমাম। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই ইমাম শব্দেও চারটি বর্ণই আছে। যথা-আলিফ, মীম, আলিফ এবং মীম। আর একা বা নিয়মিত সালাত আদায়কারীকে বলে মুসল্লি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আরবি মুসল্লি শব্দেও চারটি বর্ণই আছে। সুতরাং সালাত যে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই এর প্রমাণ সংখ্যাতত্ত্বের আলোকে আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি। আর তাই তো নবী পাক (সা.) বলেছেন, সালাতেই আমার চোখের শান্তি বিধৃত আছে। কারণ আল্লাহর দর্শন হতে অধিকতর তৃপ্তি ও শান্তি আর কিছুতেই হতে পারে না।
হিজরি দ্বিতীয় সালে সালাত আদায়ের পূর্ব সংকেত হিসেবে আজান প্রথা চালু হয়। পূর্বতন কোনো নবী এবং রাসূলের আমলে সালাতের আহ্বান ধ্বনির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আজান মূলত জাতে এলাহী এবং নূরে এলাহীর মূর্ত ঠিকানা। হিসেব করলে দেখা যায়, এই আজান শব্দটিতেও চারটি বর্ণই রয়েছে। যথা-আলিফ, জাল, আলিফ এবং নুন। এই আজানেও চার-এর বিকাশ বিধৃত আছে। এ পর্যন্ত আমরা সংখ্যাতত্ত্বের আলোকে সালাত “আল্লাহর জন্য” এই তথ্যটি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছি। আমরা অবশ্যই অবলোকন করেছি যে, একমাত্র রাসূলে পাক (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সালাত ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য কোনো ধর্মের উপাসনা পদ্ধতিতে আল্লাহর সাথে বান্দাহর মিলনের কোনোই নজির নেই। এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা যা কিছু করছে তা লোকাচার, গোত্রপ্রীতি ও অন্ধ অনুকরণ মাত্র। কারণ তাদের ধর্মীয় কাজ বা অনুষ্ঠানগুলো একটিকেও “আল্লাহর জন্য” নিবেদিত বলে সংখ্যাতত্ত্বের দ্বারা রোজ কেয়ামত পর্যন্ত প্রতিপন্ন করতে পারবে না।
এবার সালাতের অভ্যন্তরীণ ও ব্যবহারিক দিকে আলোচনায় আসা যাক। এখানেও আমরা সংখ্যাতত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করব যে, রাসূলে পাক (সা.) যে সালাতের ব্যবহারিক শিক্ষা উম্মতের সামনে রেখে গেছেন সেভাবেই সালাত কায়েম করতে হবে। অন্যথায় সালাত কায়েম হবে না বা হতে পারে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন