ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম), নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং অন্যান্য সমস্ত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করার করার জন্য তালেবানকে যৌথভাবে চাপ দিয়েছে পাকিস্তান ও চীন।
মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সরে আসা শুরু করার পর থেকে তালেবানরা একের পর এক শহর দখল করছে। ক্ষমতায় আসার জন্য তারা প্রতিবেশি চীন, পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করছে। তবে দেশগুলোর পক্ষ থেকে তাদের স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাথে কেবল সম্পর্ক ছিন্ন করলেই হবে না, তাদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলো থেকে উচ্ছেদও করতে হবে।
তালেবান প্রতিনিধিরা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলো পরিদর্শন করেছে এবং বিগত দুই দশক ধরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে গণ্য করা এবং সন্ত্রাসবাদী হিসাবে নিষিদ্ধ হওয়া একটি আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক অবস্থান অর্জন করেছে। সর্বশেষ দুই দিনের চীন সফরে নয় সদস্যের তালেবান প্রতিনিধিদল চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। দুই পক্ষের বৈঠকে আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় আলোচিত হয়েছে। এ বৈঠক নিয়ে বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তালেবানের কাছ থেকে পৃথক বক্তব্য এসেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে বলা হয়, তালেবান প্রতিনিধিদের বেইজিং বলেছে যে তারা আশা করে, সশস্ত্র গোষ্ঠীটি আফগান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানা ও দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আশা করেন, তালেবান ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টকে দমন করবে। এই গোষ্ঠীকে চীনে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি মনে করে। চীনের অভিযোগ, এই গোষ্ঠী তাদের জিনজিয়াং অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত।
বৈঠক নিয়ে তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ নাইম এক টুইটে বলেন, দুই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তালেবান প্রতিনিধিদল বেইজিংকে আশ্বস্ত করে বলেছে, তারা কাউকে চীনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না। চীনও আফগানিস্তানকে সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে চীন বলেছে, তারা আফগানিস্তানের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে আফগান সমস্যার সমাধান ও শান্তি ফেরাতে সহায়তা করবে। তালেবানের ভাষ্য, তাদের প্রতিনিধিদল চীনের আমন্ত্রণে এ সফর করে। সফরে তালেবান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন উপনেতা মোল্লা বারাদার আখুন্দ। তিনি তালেবান মধ্যস্থতাকারীও।
যদিও চীন তালেবানদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছে, তবে এই প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং প্রকাশ্যে তালেবান নেতাদের সাথে দেখা করেছেন। তালেবান প্রতিনিধি দলের এই সফর পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা (আইএসআই) প্রধান লেঃ জেনারেল ফয়েজ হামেদ চীন সফর করেছেন। এই সফরের সাথে পরিচিত সরকারী সূত্র জানায়, গত ১৪ জুলাই কোহিস্তানের দাসুতে সন্ত্রাসী হামলার পর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করা চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে তালেবানদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। সূত্র : ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন