শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

টিকাদানে জোর গতি আনতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় টিকাদানে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ তথ্য জানিয়েছে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ববাণিজ্যসংস্থা ও বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ‘টাস্কফোর্স অন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস্’। টাস্কফোর্সের হিসাবে বাংলাদেশে গড়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে টিকার ডোজ নিচ্ছে শূন্য দশমিক ১১ সংখ্যক মানুষ। পক্ষান্তরে ভারতে নিচ্ছে শূন্য দশমিক ৩১, পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ১৯, নেপালে শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শ্রীলংকায় ১ দশমিক ৬৩ সংখ্যক মানুষ। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে আফগানিস্তান- শূন্য দশমিক ৫, ভুটান- শূন্য দশমিক ৪ এবং মালদ্বীপ- শূন্য দশমিক ৮ সংখ্যক। এ তিন দেশের লোকসংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। করোনাসংক্রমণের হারও কম। বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এখানে টিকাদান শুরু হলেও মাঝখানে থেমে গিয়েছিল ভারতের সেরামের টিকা না পাওয়ার কারণে। পরে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে টিকা সংগ্রহ সাপেক্ষে টিকা দেয়া শুরু হলেও তাতে তেমন গতি নেই। টিকা নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও মানুষ টিকা নিতে পারছে না। অথচ, টিকা নিয়ে লম্বা লম্বা কথা চলছে। টিকা দেয়ার প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিন টিকা সংগ্রহের ফিরিস্তি দেয়া হচ্ছে। ২১ কোটি টিকা পাইপ লাইনে আছে, এমন কথাও বেশ হচ্ছে। দফায় দফায় বয়স নির্ধারণ করে টিকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে টিকাদানের সংখ্যা আশানুরূপ বাড়ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। পাকিস্তানে যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লোককে টিকা দেয়া হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের ২ লাখেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশেও কম পক্ষে প্রতিদিন ১০ লাখ লোকের টিকা দেয়া দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত দেশের ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৯ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ৮০ লাখ ১৮ হাজার ৬৮১ জনকে এবং ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৮ জনকে দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ। টিকাদানের সাকুল্য অগ্রগতি এই, যা অত্যন্ত অকিঞ্চিতকর। ইতোমধ্যে টিকার একটা বড় মজুদ গড়ে উঠেছে। কয়েক দফায় সিনোফার্মার প্রায় ১ কোটি ডোজ টিকা এসেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির আরো প্রায় ৩০ লাখের মতো টিকা এসেছে। এত টিকা মজুদ থাকার পরও টিকাদান কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। পর্যবেক্ষকরা একে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত করছেন। এমন নয় যে, টিকা গ্রহণকারী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকৃত সত্য এই যে, টিকা গ্রহণে কারো আগ্রহের এতটুকু কমতি নেই। গত ৭ জুলাই থেকে দেশে টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত (৩১ জুলাই পর্যন্ত) ৭৬ লাখ ১০ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এই প্রায় ৭৭ লাখ মানুষ কবে টিকা নিতে পারবে তার কোনো হদিস তাদের কাছে নেই। ৭ জুলাই যারা নিবন্ধন করেছে তাদের অর্ধেক মানুষকেই এখনো টিকা প্রদানের এসএমএস-ই পাঠানো হয়নি। দুর্বল কর্মপরিকল্পনা ও কর্তব্যকর্মে দায়িত্বশীলতার শোচনীয় অভাবই এতে প্রমাণিত হয়। টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী জানিয়েছেন, প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দানের পরিকল্পনা হয়েছে, যা আগামী ৭ আগস্ট থেকে শুরু হবে। ৭ আগস্ট থেকে কী হবে, সেটা দেয়ার জন্য আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ব্যাপক সংখ্যায় টিকা দিতে হবে। প্রতি মাসে ২০-২৫ লাখ টিকা দিলে টিকাদানে বহু বছর লেগে যাবে। তাছাড়া টিকার মেয়াদ বড়জোর ১ বছর। ফলে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। কাজেই, টিকাদানে গতি আনতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে যেতে হবে। তাহলে করোনাসংক্রমণ সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভবপর হবে।

টিকা নিলে করোনা হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। টিকা নিলেও করোনা হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও। টিকা নিলে দেহে করোনা মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়ে, এটিই মূল লক্ষ্য। টিকা করোনার কোনো ওষুধ নয় যে, নিলেই করোনা সেরে যাবে বা আর হবে না। টিকা নেয়ার পর যাদের করোনা হয়েছে, তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়নি এবং সহজেই করোনামুক্ত হওয়া সম্ভবপর হয়েছে। টিকার এই কার্যকারিতার জন্যই বিশ্বজুড়ে টিকাদান প্রক্রিয়া ব্যাপক আকারে চলছে। কোনো কোনো দেশে টিকা নেয়ার জন্য অর্থসহ নানা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ টিকাকার্যক্রমকে এতটাই গুরুত্ব ও জোর দিয়েছে যে, ইতোমধ্যে তারা তার সুফলও পেতে শুরু করেছে। বলা হয়, কোনো দেশের ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হলে সে দেশ নিরাপদ। এ রকম নিরাপদ দেশের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ওই সব দেশে জীবনযাপন ও কর্মপ্রবাহ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে করোনাসংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ এবং জীবন ও কর্মপ্রবাহ সচল করার প্রয়োজনে ব্যাপক হারে টিকাদানের বিকল্প নেই। যেহেতু টিকাদান কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে, সেজন্য টিকার পর্যাপ্ত সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। উপহারের টিকা দিয়ে চলবে না। টিকা কিনতে হবে। যেখান থেকে টিকা পাওয়া যায়, কিনতে হবে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, টিকা উৎপাদনে যেতে হবে। তার ব্যবস্থা নিতে হবে। চীন-রাশিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা দ্রুত শেষ করতে হবে। দেশেই টিকা উৎপাদিত হলে টিকাপ্রাপ্তির দুশ্চিন্তা বা সমস্যা থাকবে না। এই সঙ্গে গণটিকা কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে শুরু করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে, ততই কল্যাণ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন