মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকার শত বছরের পুরনো পৌরখাল দিয়ে শহরের ২টি ওয়ার্ডের পানি নিস্কাশন হয়। সম্প্রতি খালটির একটি বড় অংশ দখল করে প্লট আকারে বেঁচে দেয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। প্লট আকারে জমি বিক্রি করতে গিয়ে পাশের সরকারি খালটির প্রায় অর্ধেক জায়গা অবৈধ দখল করে নেয়ায় সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে মাগুরা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশুতোষ সাহার বিরুদ্ধে। এ সময় কাউন্সিলর ও পৌর নায়েবের উপস্থিতিতে খালের অর্ধেক ভেতরে সীমানা চিহ্নিত করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন জমির ক্রেতারা। অন্যদিকে খালটি দখল হয়ে গেলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবদ্ধতায় বিপাকে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মাগুরার জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রের কাছে এক লিখিত অভিযোগে এলাকাবাসী জানান, শহরের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে কলেজপাড়া, দরি মাগুরা, সাহাপাড়া, নতুন বাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ব্যবস্থা বড় দোয়া থেকে বের হওয়া দাসের ঘাটের পাশে একটি পৌর কালভার্টের সঙ্গে সংযুক্ত খালটি। স্থানীয়রা জানান, প্রবাহমান খালটি অন্তত ২০ ফুট চওড়া। তার পাশে একটি হালট রাস্তাও রয়েছে। সরকারি ম্যাপেও খালটির অবস্থান দৃশ্যমান। এ খাল দিয়ে শহরের একটি বড় অংশের পানি নবগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ে। খালটি বন্ধ হয়ে গেলে বা সংকুচিত হয়ে গেলে শহরের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থাপনা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এতে ব্যাপক পানিবদ্ধতায় পৌরবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছবে।
ইতিপূর্বে খালের পাড় থেকে অন্তত ৩ হাত উপরে কচা গাছের বেড়া দেয়া ছিল। সম্প্রতি ওই এলাকার দাসেদের ভিটা খ্যাত ৩ একর ৮৬ শতকের একটি জমি প্লট আকারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় অমূল্য কুমার সাহার বড় ছেলে প্রশাস্ত কুমার সাহা। ওই জমি বিক্রির জন্য প্রশান্ত সাহা ঘোষণা দেয়ার পরপর খালের পাড়ের কচা গাছের বেড়া তুলে ফেলে। পরে বিভিন্ন ক্রেতারা প্লট আকারে জমি দেখতে এলে জমির মালিক প্রশান্ত সাহা তাদেরকে উচু জমি ও ভেতর থেকে রাস্তা হবে মর্মে জানায়। কিন্তু প্রশান্ত সাহা ক্রেতাদের উচু জমি দেখিয়ে উচ্চমূল্যে জমি বিক্রি করে রেজিস্ট্রিও করে দেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে ওই জমি বুঝিয়ে দিতে গেলে স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌর নায়েবের যোগসাযোশে জমিতে যাওয়ার রাস্তা তো দূরের কথা, ক্রেতাদের খালের অন্তত ৫ ফিট ভেতরে গিয়ে খুঁটি গেড়ে জমি বুঝিয়ে দেন এবং বলেন পরবর্তীতে ওই খালে কালভার্ট তৈরি হলে ক্রেতারা ড্রেনের উপর দিয়ে যাতায়াত করবে। এতে ক্রেতারা প্রতিবাদ করলে কাউন্সিলর আশুতোষ সাহা জমির মালিক প্রশান্ত সাহা ও তার সহযোগিরা ক্রেতাদের সঙ্গে রুঢ় ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্লট ক্রেতা গোবিন্দ চন্দ্র সাহা ও সঞ্জয় বিশ্বাস জানান, জমি কেনা-বেচার কথা হওয়ার সময় মালিক আমাদের উচু স্থান দেখিয়েছিলেন। জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার পর আমাকেসহ বেশ কয়েকজনকে খালের ভেতরে জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি এ.টি.এম আনিসুর রহমান জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী বা খালের প্রবাহমান জলাধার একটি জীবন্ত সত্ত্বা। কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী ব্যক্তি প্রয়োজনে এ জলাধারকে বন্ধ কিংবা বাঁধাগ্রস্থ করতে পারেন না।
মাগুরা জেলা জজ আদালতের সিভিল আইনের আইনজীবী এ্যাড. রিংকু গুহ জানান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন মোতাবেক দেশের খাল, জলাশয় ও সমুদ্র উপকুল দখল ও দূষণমুক্ত রাখার বিষয়ে সরকারকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সুপারিশ করবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে জনস্বার্থে এ খালটি রক্ষা ও দখল রোধে স্থানীয় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
পৌর কাউন্সিলর আশুতোষ সাহা জানান, সরজমিনে যেখাবে জায়গা পাওয়া গেছে, সেভাবেই ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে কিছু অংশ খালের ভেতরে ঢুকে গেলে তাদের করার কিছুই নেই। কোন টাকা পয়সার লেনদেনের কথা অস্বীকার করে তিনি।
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, খাল দখল করে নির্মাণ কাজ বা খালের পানি নিস্কাশনে বাঁধা দেয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অবস্থাতেই খাল দখল বরদাস্ত করা হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন