দিনের পরে রাত পেরিয়ে কালের গতি চলমান, সেই গতির ধারাবাহিকতায় আমাদের মাঝে ফিরে এলো আরও একটি হিজরী সন ১৪৪৩। হিজরী সন সম্পর্কে নয়, বরং আমি লক্ষ্য করি যে, হিজরী সন এলেই আসে মহররম মাস যা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বর্ণিত পবিত্র ও মহিমান্বিত চার মাসের মধ্যে অন্যতম একটি মাস । যে মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ করা হারাম ছিল এবং সকলের নিকট ছিল সম্মানিত। (সুরা তওবা আয়াত :-৩৬) আর মহররম মাস এলেই সাথে নিয়ে আসে ১০ তারিখ যাকে আমরা ১০ই মহররম বা আশুরা বলে ডেকে থাকি। এটিকে বিশ^ মুসলিম বিভিন্ন ভাবে পালন করে থাকে , আমাদের এই বাংলাদেশেও এ দিনটিকে সম্মান জানিয়ে উৎযাপন করতে কোন অংশে কম করা হয় না। এই আশুরাকে কেন্দ্র করে বিশ^ মুসলিম আজ নানা দলে বিভক্ত। শিয়াদের কথাতো বলার মত নয়, কেননা তারা তাদের প্রধান ইবাদত হিসেবে মনে করে, আশুরায় মাতম করা, তারা ধারনা করে যে নবীজির দৌহিত্র হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রেমে রক্ত ঝরানো, (তাও অনর্থক) এটিই প্রকৃত ইসলাম। অথচ তারা সম্পুর্ণভাবে ভুল ধারনা পোষণ করে থাকে। কেননা ইসলামে এই মাতম মর্সিয়ার কোন স্থান নেই। অন্য দিকে যারা সুন্নী দাবিদার তারাও অনেকে শিয়াদের মত মাতমকে আশুরার তাৎপর্য হিসেবে মনে করতে শুরু করেছে । বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে চাল টাকা উত্তোলন করে ফাতেহা শরীফ করে এবং নিজেদেরকে নবী প্রেমীক মনে করে। অথচ এর ও কোন প্রমাণ শরীয়তে পাওয়া যায় না।
আশুরা শুধু কারবালা কেন্দ্রীক নয় : আবার একদল মুসলমান এমন আছেন, যারা এই দিনটির ব্যাপারে বিশ^ নবী (সঃ) কর্তৃক বর্ণীত নির্দেশনাও মানতে নারাজ। তারা এই দিনটির কোন গুরত্ব বা করনীয় যে আছে সে দিক থেকে উদাসীন। তাহলে চিন্তা করে দেখেন কোনদিকে চলছে এ জাতি ? আমি এ নিয়ে খুবই বিচলিত! আমি বলবো! আশুরার ইতিহাস শুধুই কারবালা কেন্দ্রীক সীমাবদ্ধ নয়। বরং এই দিনটি কে ঘিরে রয়েছে মুসলমানদের বহু গৌরবাজ্জল ইতিহাস। যেগুলোর মাধ্যমে মুসলমানদের মাথা উচুঁ করে আবার ঘুরে দাড়ানোর মানসিকতা তৈরী হয় । সুতরাং যারা শুধু কারবালার ইতিহাসকে স্বরন করিয়ে দেয় তারা আসলে কি বুঝাতে চায়? কোনভাবে এটা বলছে না তো ? যে, হে মুসলিম জাতি তোমাদের ইতিহাস খুবই ঘৃন্য, তোমরা নবীর দৌহিত্রকে হত্যা করেছিলে, তোমাদের মাঝে রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে মর্মান্তিক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল, সুতরাং তোমরা মাথা উচুঁ করে কথা বলতে এসোনা। এমনটি নয়তো যে, তোমাদের ইতিহাস হলো পরাজয়ের ইতহাস? যদি তাই বলতে চায় তাহলে অবশ্যই তাদেরকে বলতে হবে, নবীজির দৌহিত্র হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু তো শাহাদত বরন করেন ফুরাত প্রান্তরে ৬৮০ সালে অথচ কয়েগ যুগ পূর্বে বিশ^নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার গুরত্ব বর্ণনা করে বলে গেছেন যে, আশুরার ইতিহাস হলো পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস, আশুরার ইতিহাস হলো পয়গম্বর মুসার প্রতি আল্লাহর সাহায্য আসার ইতিহাস । সুতরাং মনে রেখো কারবালার ইতিহাস একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র যেখানে আল্লাহর পরিক্ষা সংঘটিত হয়েছে।
আশুরার দিনের আমল : কারবালার ঘটনার বহুদিন পুর্বেই বিশ^নবী (সঃ) হাদিস বর্ণনা করেছেন, আশুরার তাৎপর্য এবং আমল সংক্রান্ত। * বিশ^নবী (সঃ) বলেছেন রমজানের রোজার পরে সর্বত্তম রোজা হলো মহররমের রোজা অর্থাৎ আশুরার রোজা। মুসলিম শরীফ ১/৩৬৮ * হযরত আলী রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রাসুল সঃ রমজানের রোজা ব্যাতিত আর কোন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কি? তখন হযরত আলী রাঃ বলেন এ ব্যাপারে আমি শুধু একজন ব্যাক্তিকেই জিজ্ঞেস করতে দেখেছি আর তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম, সে বলল হে আল্লাহর রাসুল সাঃ আমাদেরকে রমজানের রোজা ছাড়া আর কোন রোজার নির্দেশ দেন? তখন রাসুুল সাঃ বললেন তোমরা যদি চাও তবে রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা রাখতে পারো। কেননা এটি আল্লাহর মাস, এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তায়ালা একটি সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছিলেন। আশা করা যায় যে, সেদিন অন্য সম্প্রদায়েরও তওবা কবুল করা হবে। তিরমিযি ৭৪১
কমপক্ষে দুটি রোজা রাখা সুন্নাত : এ ধরনের আরও অনেক হাদিস রয়েছে, যেগুলোর দ্বারা বুঝা যায় যে, আশুরার দিনের রোজা সুন্নাহ এবং বরকতময়। তবে রোজা রাখার খেত্রে বিশ^নবীর নির্দেশনা হলো তোমরা এই রোজার ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধিতা কর। অর্থাৎ তারা শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখে তোমরা ১০/১১ অথবা ৯/১০ তারিখ রোজা রাখবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক নিয়ম মেনে আশুরা পালন করার তৌফিক দান করেন। আমিন
লেখক : সাংবাদিক, ইসলামি গবেষক ও কলামিষ্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন