বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করেছে, তাঁরা (সরকার) গুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁদের গুম করার, বিচারবহির্ভূত হত্যার মানসিকতা, মন্ত্রীর বক্তব্যে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটি ওয়ার্কিং গ্রæপ গত জুন মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলাদেশে গুমের শিকার ৩৪ জন ব্যক্তির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চায়। এ বিষয়ে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রæপের এভাবে তথ্য চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, দুনিয়ার কমবেশি সব দেশেই এগুলো হয়, ভারতে হয়, পাকিস্তানেও হয়। ভারতে তারা কথা বলে না, পাকিস্তানে বলে না, আমরা তাদের বেশি পাত্তা দিই বলে তারা (জাতিসংঘ) বলতেই থাকে।
এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে তাদের গুম করার যে মানসিকতা, বিচারবহির্ভূত হত্যার মানসিকতা, তারা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিশ্বের কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না। ভারতে কী হচ্ছে, পাকিস্তানে কী হচ্ছে সেটা নয়, বাংলাদেশ কী হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এভাবে গুম হয়ে যাওয়ার জন্য? একজন রাজনীতিক, এমপি, ব্যারিস্টার, ব্রিগেডিয়ার, কাউন্সিলর গুম হয়ে গেলেন, তাঁদের কোনো খোঁজ নেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় দলের নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীসহ বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান জানতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রæপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠির বিষয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটি মনে করে, এর মাধ্যমে গুমের বিষয়ে বিএনপির দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। সরকার তাঁদের খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি অবিলম্বে সব গুম হওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে।
পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত সরকার ষড়যন্ত্র মনে করে এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল হেসে দেন। তিনি বলেন, সাভারে রানা প্লাজা যখন ভাঙল, তখন মহিউদ্দিন খানের (তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) মতো শিক্ষিত মানুষ বললেন, বিএনপি না কি ঝাঁকি দিয়ে ফেলে দিয়েছে। এখন তীব্র স্রোত পদ্মায়। আর পদ্মা তো ছোটখাটো নদী না। পদ্মার সেই স্রোতে এ ধরনের ফেরি কিছুটা ডাইভার্ট হবেই। উচিত ছিল এ সময়ে রুটটা সরিয়ে নেওয়া। ওদের অবশ্য সুবিধা আছে, ভেঙে ফেলে আবার নতুন করে করবে। তখন অনেক টাকা জোগাড় করতে পারবে। প্রজেক্টই তো দরকার তাদের।
টিকা নিয়ে বিএনপি নয়, সরকারই অপরাজনীতি করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের হিসাবেই দেখা যাচ্ছে দুই ডোজ টিকা পেয়েছে মাত্র ৫২ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ। অথচ জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। আজ পর্যন্ত সরকার টিকার সুনির্দিষ্ট কোনো রোড ম্যাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। টিকা নিয়ে এ প্রতারণা অপরাধের শামিল।
বিএনপির মহাসচিব জানান, দলের স্থায়ী কমিটির সভা থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে জড়ানোর ‘হীন’ প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন