শিক্ষা ও প্রকৃতি এর সম্পর্ক অনবিচ্ছেদ্য। আর প্রকৃত শিক্ষা শুধুমাত্র বইয়ের পাতাই নয় বরং তা থাকে প্রকৃতির মাঝে। এরই চেতনা ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্য অন্বেষণে নবরতœ মন্দির, মহাস্থানগড়, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া, পাহাড়পুর (সোমপুর বিহার) প্রভৃতি জায়গাতে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর আলোকে গত ২০/০৮/১৬ তারিখ চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক ময়েজ উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে চারুকলা বিভাগের শিক্ষক শামিম রেজা, তরুণ কুমার সরকার, রতেœসর সূত্রধর, শাশ্বতী মজুমদার এবং ৩৫ জন শিক্ষার্থী শনিবার সকাল ৮ ঘটিকার সময় যাত্রা শুরু করি।
বেলা ১২টার সময় আমরা নবরতœ মন্দিরে পৌঁছানোর পর দেখা যায় যে ঐতিহাসিক শিল্পশৈলী এবং স্থাপত্যকলার নিদর্শন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার হাটিকুমরুল নবরতœ মন্দির কালের সাক্ষী হয়ে তার ঐতিহ্য ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এর পর দুপুরে আমরা বগুড়া শহরের প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে যাত্রা করি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নগরীতে। যার নাম পু-্রনগর বা পু-্রবর্ধন নগর। কালের আবর্তনে এর বর্তমান নাম দাঁড়িয়েছে মহাস্থানগড়। এক সময় পু-্রনগর বাংলার রাজধানী ছিল। এ ছাড়া মহাস্থানগড়ে পাওয়া বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন হতে জানা যায়, কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল।
মহাস্থানগড়ের ২ কি. মি. দক্ষিণে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের বাসর ঘর। লোক কাহিনীর নায়ক-নায়িকা বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের নামানুসারে স্থাপনাটির নামকরণ করা হয় বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের বাসর ঘর। বেহুলার বাসর ঘর মূলত একটি উঁচু ইটের স্তূপ। এর উচ্চতা প্রায় ১৩ মিটার (৪৫ ফিট)।
এর পরে রাতের নিদ্রার জন্য আমরা যাত্রা করি বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে। রাতে সবাই এক সাথে আহারের পরে পুকুর পাড়ে বসে শুরু হয় আড্ডা গান। যারা গানের আসর মাতিয়েছে তার হলোÑ সঞ্জু, মাসুদ, জয়দ্বীপ, মাহাবুব, সবুজ, সাইফুল, সেলিম, শান্ত, রানা, তুবা, মুমু, আশা, দিনা, লিজা, তন্বি, মাধবী, রূপশ্রী, মাহা, যারিন আরও অনেকে। আর এসব মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত ফোরকান, সাকিল, অর্থ। একাডেমি থেকে সকাল ১০টার সময় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দিকে যাত্রা শুরু করি। পাহাড়পুরে দুপুরবেলা ভোজ সেরে শুরু হলো ঘোরাঘুরি। সোমপুর বিহার দেখার মধ্য দিয়ে আমাদের ঐতিহ্য শেষ হয়।
এ যাত্রা ছিল নান্দনিক, দীর্ঘ কিন্তু ক্লান্তিবিহীন, বিশাল প্রাপ্তির। আমাদের এই ছোট আয়তনের দেশেও যে কত প্রচীন ঐতিহ্য, পূরাকীর্তি প্রতœসম্পদ প্রচীন নৃতাত্ত্বিক উপাদান রয়েছে তারই যেন অতি ক্ষুদ্র অংশ দেখা। তাই মন বলছিল আরও কেন নয়, সবাই ছিল পুলকে পরিতৃপ্ত।
এসব আয়োজনের স্থান হিসেবে মহাস্থানগড়কে বেছে নেয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ময়েজউদ্দিন লিটন বলেন, শিল্পী হতে গেলে নিজের দেশকে ভালোভাবে জানতে হবে। জানতে হয় দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্পর্কে, দেশকে উপস্থাপনা করা একজন শিল্পীর প্রধান কাজ। তাই দেশের পূর্বপুরুষদের চিন্তা-চেতনাকে বুঝাতে হবে। এর পর ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। যাত্রাপথে শেরপুরের বিখ্যাত দই নিয়ে আমরা ক্যাম্পাসে আসি।
ষ সাগর কর্মকার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন