মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শেষ হয়নি বিচার কাজ

সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর মোট মামলা ১৬৯, বিচারাধীন মামলা ৪৩

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর পরেও মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে জঙ্গি সদস্য। অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের কার্যক্রমের প্রচারণা, দাওয়াতি কার্যক্রম ও কৌশল রপ্ত করছে। সম্প্রতি তালেবানদের হাতে আফগানিস্তানের পতন হওয়ার পর দেশে আবারও জঙ্গির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। আফগানিস্তানে যেতে ইচ্ছুক এমন চার জনকে সিটিটিসি গ্রেফতার করে। বাকি দুই জনের হদিস পায়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল আশঙ্কার কথা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, তালেবানরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নেয়ার পরেই ঘোষণা করবে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তালেবানরা আরও বলবে, আমেরিকাকে যুদ্ধে পরাজিত করে আফগানিস্তানকে স্বাধীন করেছি। এর প্রেক্ষাপটে যুবকদের ভেতর (যারা জিহাদ করতে চায়) উৎসাহ তৈরি হবে। এই ঢেউ আমাদের উপমহাদেশসহ সব দেশেই লাগবে। আমাদের প্রস্তুতি আছে তবে যে ঢেউটা শুরু হবে তা মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। শুধু পুলিশের একার পক্ষে নয়, প্রত্যেক অভিভাবক ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রত্যেকের সহযোগিতা করা উচিত।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাবের অভিযানেই জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল¬¬াহসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেফতার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। তাদের ফাঁসির রায়ও সরকার কার্যকর করেছে। জঙ্গিরা এখন সাইবার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেস্টা করছে। জাতিগতভাবে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদকে পছন্দ করে না। একারণে আমরা খুব অল্প সময়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছি। তাই বলে এটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। সাম্প্রতিক তালেবান ইস্যুতে রাষ্ট্রের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে জঙ্গিদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্যদিয়ে জেএমবি’র কার্যক্রম শুরু করে। জেএমবি’র কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে এখন এই জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ( জেএমবি) এই সংগঠনটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেস্টা করছে। ইতিমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকা থেকে জেএমবি’র দুর্ধর্ষ পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেফতার করে ওই দেশের এনআইয়ে টিম। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওই বছরের ২৭ মে মালিবাগে পুলিশ ভ্যানে বোমা হামলায় একজন পথচারী আহত হয়। একই বছরের ২৩ জুলাই রাতে খামারবাড়ী ও পল্টন পুলিশ বক্সে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দুইটি শক্তিশালী আইইডি যুক্ত বোমা ফেলে রেখে যায়।
সিরিজ বোমা হামলা : ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ ব্যাতিত) ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। একযোগে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ১৬৯ টি মামলা দায়ের হয়। হামলার ১৬ বছরের মধ্যে ১১৬ টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৪৩ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এসব মামলায় আসামি করা হয় এক হাজার ১৫৭ জনকে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৬৭ জনকে। ইতিমধ্যে রায় দেয়া ওইসব মামলায় ৩০৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। মৃত্যুদন্ড রায় দেয়া হয়েছে ২৭ জনকে।
ঢাকা মহানগর আদালত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ওই সময় ১৮ টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে তেজগাঁও ও বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা দু’টি মামলার রায় হয়ে গেছে। পুলিশ ৮টি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বাকি ৮ টি মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ চলছে। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেন না। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এরকম নানা কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লাগছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন