শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিম্নাঞ্চলে বন্যা অপরিবর্তিত

ভারতের ঢলে তিস্তা বিপদসীমার ঊর্ধ্বে পদ্মা কাছাকাছি লঘুচাপে ফুঁসে উঠছে দক্ষিণ উপকূল : ভারী বৃষ্টির আভাস

বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

উজানে প্রধান নদ-নদীসমূহের অববাহিকায় উৎসস্থলে ভারতের উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল, নেপাল, তিব্বতসহ চীনে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে বর্ষণ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। মূলত ভারত থেকে আসা ঢলে দেশের বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরফলে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে জনবসতি, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ফল-ফসলের জমি পানিতে প্লাবিত হওয়ায় নদীপাড়েরর বাসিন্দাদের কষ্ট-দুর্ভোগের শেষ নেই।
তিস্তা বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গায় উজানে অতিবৃষ্টিতে মধ্য-ভারত, বিহার ও নেপাল থেকে আসা ঢলে ভাটিতে পদ্মা নদীর সবক’টি স্টেশনে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। একাধিক স্থানে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। উত্তর-পূর্বে সিলেট অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যে কিছুটা কমেছে। নদ-নদীসমূহ উত্তাল হওয়ার সাথে সাথে উত্তর জনপদ, উত্তর-মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি হয়ে চাঁদপুর মোহনায় পর্যন্ত নদীভাঙন সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আতঙ্কে নদ-নদীতীরের অসংখ্য মানুষ।
এদিকে গতকাল সোমবার আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপের ঘনঘটায় ফের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের উপক‚লীয় নদ-নদী, শাখানদী, খাল-খাঁড়িগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে পানি। নদীগুলো ফুঁসে উঠছে। লঘুচাপের প্রভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং এ অঞ্চলে নদীসমূহে পানি আবারো বৃদ্ধির আভাস রয়েছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৭টিতে হ্রাস এবং ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। তিস্তা নদী একটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার নদ-নদীর ৭১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৩টিতে হ্রাস, ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত এবং দু’টি পয়েন্টে তিস্তা ও সুরমা বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। শনিবার ৭৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ২৮টিতে হ্রাস পায়। শুক্রবার ৭৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩০টিতে হ্রাস পায়।
নদ-নদী পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে গতকাল পাউবো জানায়, আপার মেঘনা অববাহিকার নদীগুলো ব্যতীত দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলসমূহের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নি¤œাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস উল্লেখ করে পাউবো জানায়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপক‚লীয় অব্জলসমূহে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এরফলে এ সময়ে কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপক‚লীয় অঞ্চলের নদীসমূহের পানির সমতল দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে।
নদ-নদী প্রবাহ পরিস্থিতি
পাউবোর নদ-নদী প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী গতকাল বিকাল পর্যন্ত উত্তর জনপদের তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কাউনিয়ায় ৪২ সে.মি. নিচে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে বিপদসীমার যথেষ্ট নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে বিপদসীমার নিচে রয়েছে। পাউবোর ৮টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পদ্মার উজানভাগে পাংখায় পানি আরও বেড়ে গিয়ে ৫২, রাজশাহীতে ৯৮, হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ৫৩, গোয়ালন্দে মাত্র ১৩ ও সুরেশ^রে ১১ সে.মি. নীচে অবস্থান করছে। গোয়ালন্দসহ পদ্মায় একাধিক স্থানে আজ মঙ্গলবার পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট এবং সুনামগঞ্জে বিপদসীমার যথাক্রমে ২০ ও ২২ সে.মি. নিচে নেমেছে।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চর এলাকায় শতাধিক পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছে। সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এছাড়া চর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপরে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজে রক্ষায় ৪৪ গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় আমন ধান ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলের কষ্টে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। ঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না। পরিবার গুলো মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, জেলার হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া,ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ভাঙনে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৭টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলান হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রসাশক আবু জাফর জানান, পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করার জন্য নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর জন্য সরকারী সহায়তা প্রদান করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন