বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন শুরু

তিন গ্রামের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৬ পিএম

বর্ষা আসে, সঙ্গে আসে বন্যা সে সাথে শুরু হয় নদী ভাঙ্গন। দুর্ভোগের আশঙ্কায় বুক কাঁপে মানুষের। লাখ লাখ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ধেয়ে এসেছে বন্যা সে সাথে শুরু হয়েছে রাজশাহী গোদাগাড়ীতে সর্বনাশা পদ্মার নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।

প্রায় প্রতি বছর আষাঢ় মাসেই দেশে বন্যার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে যায়। প্রথমেই বৃষ্টি ও এসময়ে ভারত তাদের ফারাক্কার সবকয়টি গেট খুলে দেয় আর উজান থেকে ধেয়ে আসে বন্যা পদ্মা, মাহনন্দা নদীর পানি বড়ার সাথে শুরু হয় তীব্র নদী ভাঙন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
গোদাগাড়ী উপজেলার নিমতলা, চাক পাড়া, খারিজাগাঁতি ও মোল্লাপাড়ায় পদ্মা নদীতে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা এলাকার ফসলি জমি, আম বাগান। হুমকির মুখে রয়েছে বসতবাড়ি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
প্রতি বছর বন্যার সময় পদ্মা নদী ভয়ালরূপ ধারণ করে। পদ্মার তীব্র ভাঙ্গনে আম বাগান, বিভিন্ন ফলের গাছ, ফসলী জমি যাচ্ছে নদীগর্ভে। গত ১৫ দিন ধরে উপজেলার নিমতলা চাক পাড়া, খারিজাগাঁতি ও মোল্লাপাড়া এলাকায় দেখা দিয়েছে এই ভাঙ্গন। হুমকির মুখে রয়েছে ফসলি জমি, পাশাপাশি বসতবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। এই বুঝি সব তলিয়ে গেল, সর্বনাশা পদ্মা নিয়ে গেল আমাদের জান মাল, গবাদিপশু। এলাকাবাসির দাবী ভাঙ্গন রোধে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়ার।


নিমতলা গ্রামের ৭০ বছর বয়সের বৃদ্ধ কৃষক গোলাম রশুল চোঁখের পানি ঝড়াতে ঝড়াতে বলেন, ১ বছর আগে বহু কষ্টে বসত বাড়ী করেছিলাম, নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বাড়ীর ধারে চলে এসেছে। বাড়ীর পার্শ্ববর্তী টিউবয়েলটি নদী গর্ভে চলে গেছে। বাড়ী থেকে সব মালামাল অসবাবপত্র বের করে নিয়ে পার্শ্বে অন্যর আম বাগানে খোলা আকাশের নিচে থাকছি। যে কোন মহূর্তে আমার বসত বাড়ী নদী গর্ভে চলে যাবে। আমার কোন জমি জায়গা নাই, অল্প একটু বাড়ী ভিটে ছিল নদী গর্ভে চলে গেল। বাড়ীটি চলে গেলে আমার আর কিছুই থাকবে না। এ কথা বলতে বলতে বৃদ্ধ ও তার স্ত্রী উচ্চু স্বরে কাঁদতে শুরু করলেন।
ভাঙ্গন রোধে দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে নদী গর্ভে চলে যাবে নিমতলা চাক পাড়া, খারিজাগাঁতি ও মোল্লাপাড়া এলাকার ফসলি জমি, আম বাগান, বসতবাড়ি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপন। পথে বসবে এলাকায় বসবাসকারী পরিবার গুলো।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক মোঃ বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছিলেন, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী নির্দেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সবকিছু করবেন।

সংশ্লিষ্ট দেওপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আখতার জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গোদাগাড়ী উপজেলা নির্ববাহী অফিসারের সাথে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ইঞ্জিনিয়ারের সাথেও কথা হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে উপজেলা নির্ববাহী অফিসার উর্দ্ধোতন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। ভাঙ্গন রোধে দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি আমরা।


শুধু বর্ষাকালেই নয়, আশ্বিন-কার্তিকেও বন্যা হয় এদেশে। ২০১৯ সালে তো ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙে অক্টোবরেও বন্যা হয়েছিল।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষায় ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে বন্যা হয়। কারণ, নদীবাহিত পলি জমে জমেই এই বদ্বীপের জন্ম। বাংলাদেশের জন্ম। বন্যায় এই পলি সমতলে ছড়িয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। তাই, বাংলাদেশের জন্য বন্যা একই সঙ্গে অভিশাপ ও আশীর্বাদ। তবে এটা ঠিক, মানুষের পরিবেশবিধ্বংসী নানামুখী কার্যক্রমের কারণে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন