ভারত থেকে আমদানিকৃত বৈধ পণ্যের আড়ালে বেনাপোল বন্দরে দিয়ে দেশে ঢুকছে কোটি টাকার অবৈধ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালানের মালামাল।
সরকারের মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিতে তৎপর শক্তিশালী সিন্ডিকেট গ্রুপটি দু’দেশের বন্দর এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। বেনাপোল বন্দরের কিছু অসৎ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর সহায়তায় চক্রটি অবৈধ ব্যবসা করছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার জন্য বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল বন্দর এবং বনগাঁ এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক শক্তিশালী গ্রুপ। বনগাঁ এবং আশপাশের এলাকা বিশেষ করে চাঁদপাড়া, মসলন্দপুর, গোবরডাঙ্গা, গাইঘাটা অঞ্চলের ট্রাক চালক এবং তাদের সহকারীরা এ চক্রের সাথে জড়িত। আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের আগে বনগাঁ কালিতলা পার্কিংয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন অবস্থান করে। পার্কিং এলাকায় নজরদারি না থাকার কারণে বনগাঁভিত্তিক গড়ে ওঠা চোরাচালান চক্রটি পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের সাথে সমঝোতা করে আমদানিকৃত মালামাল ভর্তি গাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছে শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিক্স, ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল। ভারতীয় ট্রাকচালকরা বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের পর মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে।
অবৈধ পণ্যগুলো বন্দরের বিভিন্ন শেডে কৌশলে আনলোড করে রাতের আধারে বন্দর থেকে বের করে নিয়ে যায় চক্রটি।
বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য বের করে নেয়ার জন্য এখানেও রয়েছে অন্য একটি চক্র। ট্রাকভর্তি মালামালের সাথে গোডাউন থেকে বের হচ্ছে এসব চোরাচালানের মাল। চোরাচালানী এই সিন্ডিকেট নিয়ে আতঙ্কে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা। গত ২ মাসে একাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের মধ্যে অবৈধ চোরাচালানের মালামাল পাওয়ায় বিব্রত কাস্টমস কতৃর্পক্ষ। বৈধ পণ্যের সাথে আনা এসব অবৈধ পণ্যের বিষয়ে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা কিছু না জানলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ৫টি সিএন্ডএফকে দায়ী করে তাদের লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল করেছে। সম্প্রতি ভারত থেকে শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল ভর্তি একটি ভারতীয় ট্রাকে মদ, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক আটক করে অবৈধ পণ্যের জন্য সিএন্ডএফ এজেন্টকে দায়ী করা হয়।
গত ২৭ জুলাই এয়ার এন্টারপ্রাইজ নামে একজন আমদানিকারক ভারত থেকে ৩০০ কার্টুন ব্লিন্ডার আমদানি করেন। ভারতীয় ট্রাকটিতে ২৭ কার্টুন শাড়ি, ত্রি-পিস, ওষুধ ও কসমেটিক্স ভর্তি অবৈধ পণ্য পাওয়ায় আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়। প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাক আটকের ঘটনায় কৌশলে পালিয়ে যায় ভারতীয় ট্রাক চালকরা।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র বেনাপোল বন্দরকে ঘিরে চোরাচালান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা। আমরা এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, সিন্ডিকেটের সাথে আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত কিনা আমার জানা নেই। তবে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান রহমান জানান, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বৈধ মালের সাথে যেসব অবৈধ মালামাল আমরা আটক করেছি, তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কথা আমরা শুনেছি। ভারতীয় কাস্টমসের সাথে মিটিং করে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন