শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

দিক দর্শন : সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন এবং সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.) এর জীবনাদর্শ

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লা’নত করবেন, এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন (১৪)।সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন গোত্রীয়, জাতীয় ও ধর্মীয় পরিচয় নেই? প্রত্যেক ধর্মানুরাগী মানুষের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করাই ইসলামের সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা। মহানবী (সা.) বলেছেন “দুনিয়া ধ্বংস করে দেয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃর্ণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।” (১৫) চরমপন্থা, ফেতনা, ফাসাদ, নৈরাজ্য, অরাজগতা ও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলামী শরিয়তে এ সমস্ত কাজ হারাম করেছে। কারণ চরমপন্থা হলো দীনের ব্যাপারে বাগবাড়ি করা। কঠোরতা অবলম্বন করা, সীমা অতিক্রম করা, নিজ মত বা দল প্রতিষ্ঠার জন্য গোঁড়া বা কঠোর মনোভাব পোষণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি কর্মকা- ইসলাম কখনই সমর্থন করে না। ইসলামের পথিক হবে শান্তিকামী, সুস্থ সুন্দর ও সহজ-সরল মায়া মমতাপূর্ণ উদার ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী তার দ্বারা কোন মানুষ হত্যা তো দূরের কথা বরং প্রাণীকুল বা পরিবেশের ও দেশের কোন ক্ষতি হতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন” নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানব জাতীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও জীবন রক্ষা করল সে যেন পৃথিবীর সমস্ত মানব জাতীর জীবন রক্ষা করল।” (১৬) মহানবী (সা.) এসেই বিশ্ব মানবতাকে প্রদান করলেন সুশৃঙ্খল ও শান্তিবাহী আদর্শ সমাজ। সেই সমাজে ছিল না কোন অসহায় নারীর আর্তনাদ, ছিল না কোন ভুখা মানুষের চিৎকার, ছিল না কোন জুলুম ও শোষণ। ছিল শুধু রহমত কল্যাণ ও শান্তির সুশীতল ছায়া। বর্তমানে আবারও সেই ১৫শ’ বছর পূর্বের অশান্তি মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে। সর্বত্র দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বহুমুখী সংকট। মানবজাতি সম্পর্কে নানামুখী মতবাদের সয়লাব। জাতি আজ দ্বিধাগ্রস্ত। সভ্যতা বলতে চলছে আধিপত্য বিস্তারের নির্লজ্জ তৎপরতা, মানব কল্যাণে নেমে এসেছে নানামুখী মতবাদ। অন্যদিকে মহাবিশ্বে চলছে অশান্তির দাবদাহ মানব কল্যাণের কথা পিছনে রেখে মহাবিশ্ব আজ অস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত। এই সংকটময় মুহূর্ত থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হচ্ছে সেই মহামানবের পথ অনুসরণ করা। কারণ বর্তমানে শিক্ষা, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও নতুন নতুন আবিষ্কার মানুষের মাঝে শান্তি দিতে হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আজ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানুষকে ভালবাসার পরিবর্তে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন রাষ্ট্রগুলো অধিক শক্তিশালি বোমা নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে যুদ্ধের জন্য। পুরো বিশ্বকে কয়েক হাজারবার ধ্বংস করা যাবে এমন অস্ত্র আজ মানুষের হাতের মুঠোয়। অথচ এই অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করা বা বনি আদমকে শান্তি বা মুক্তি দেয়ার কোন কৌশল আজ পর্যন্ত কোন দার্শনিক বা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেনি। অথচ আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে আমাদের পিয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) শান্তির সুশীতল পথ বাতলিয়ে গেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে পাঠানো হয়েছিল বিশ্বমানবের মুক্তিদাতা হিসাবে। মানবীয় গুণাবলির, মানবীয় আদর্শের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে মানুষের শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির ব্যবস্থা করে যেতে। মানব-চরিত্রে যত প্রকার গুণ থাকা দরকার তা তার চরিত্রে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। আল্লাহ বলেন “হে নবী! নিশ্চয় আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী”(১৭)। মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন “খায়রুল বাসার” অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। নবী ও রাসূলদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ। তাই তাঁর আদর্শই সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসাবে বিবেচ্য।
তথ্যসূত্র
১। সীরাতুন নবী- আল্লামা শিবলি নোমানী পৃ-১০-১১
২। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সৎ)-এর জীবনী-প্রফেসর এবিএম সিদ্দিকুর রহমান-পৃ-৬৫
৩। শৈলেন্দ বিশ্বাস সংসদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান (কলকাতা, শিশুর সাহিত্য সংসদ ১৯৭৯) পৃ-৪৬৯
৪। ইফা পত্রিকা-অক্টোবর=ডিসেম্বর-পৃ-৬৭
৫। আগ্রা পথিক-নভেম্বর-২০০৫।
৬। সূরা বাকারা আয়াত-১৫৬
৭। আল কোরআন-২; ২১৩
৯। জামে আত তিরমিযী ১ম খ-, পৃ-২৫৯
১০। প্রাগুপ্ত- পৃ-২৫৯
১১। আগ্র পথিক জুলাই-২০০৩ পৃ-১৫
১২। সূরা-শুরা-৪২
১৩। আল-কোরআন ৫;৮
১৪। আল- কোরআন ৪; ৯৩
১৫। সহিআতরিমিজি।
১৬। সূরা মাযিদা-৩২
১৭। সূরা কলম; আয়াত-৪

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন