ক্যান্সার ও করোনা মহামারিতে ব্যবহৃত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধসহ একটি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। বাজারে যেসব ওষুধের বিক্রি বেশি, সেগুলোই টার্গেট করতো চক্রটি। নকল ওষুধ তৈরি করে এরপর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামে সেসব ওষুধ কম দামে বিক্রি করা হতো। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাজলা, আরামবাগ ও মিটফোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- তরিকুল ইসলাম, সৈয়দ আল মামুন, সাইদুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুল লতিফ, নাজমুল ঢালী ও সাগর আহমেদ মিলন। অভিযানে তাদের কাছ থেকে একমি কোম্পানির মোনাস-৭০০ বক্স, স্কয়ার কোম্পানির সেকলো-৫০ বক্স, জেনিথ কোম্পানির ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস- ৭৪৮ বক্সসহ অন্যান্য কোম্পানির বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ, ওষুধ তৈরির যন্ত্র, ডায়াস ও ওষুধের খালি বক্স উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি প্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা আট রকম নকল ওষুধ উদ্ধার করেছি। যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, সেগুলোই নকল করে বাজারজাত করছিল চক্রটি। আসল ওষুধের তুলনায় অনেক কম দামে নকল ওষুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছিল। এগুলো মাদকের থেকেও ভয়ঙ্কর। মানুষ অসুস্থ হয়ে ওষুধ খায়। আর নকল ওষুধ খেয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। চক্রটি যেভাবে ওষুধ নকল করে তা সাধারণ ক্রেতারা বুঝতে পারেন না। শুধুমাত্র যারা ম্যানুফ্যাকচার করেন তারা বুঝতে পারেন। সেজন্য ওষুধ প্রশাসনসহ আরও যারা আছেন, তাদের সক্রিয় হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার তরিকুল ও আল-মামুন কারখানা স্থাপন করে নকল ওষুধ তৈরি করেন। সাইদুল নকল ওষুধ তৈরির প্রধান কারিগর। মনোয়ার অ্যালু-ফয়েল ও আবদুল লতিফ ওষুধের পাতায় ছাপ দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসহ সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন। নাজমুল ঢালী ওষুধের বক্সে ছাপ দেয়ার পর তৈরি নকল ওষুধ সাগর আহমেদ মিলনের নেতৃত্বে মিটফোর্ডের কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে বাজারজাত করা হতো। এসব ওষুধের ইনগ্রিডিয়েন্টসে মূলত প্রয়োজনীয় কোনো সক্রিয় উপাদান থাকে না। এছাড়া মেইন স্টার্চ নিম্ন গ্রেডের ব্যবহৃত হয়। এমনকি স্টেরয়েড ও ডাই ব্যবহৃত হতে পারে। নন ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব কেমিক্যাল সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এসব নকল ওষুধ সাধারণ মানুষের জন্য মরণফাঁদ। ওই সাত জনকে রাজধানীর বংশাল থানায় দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানোর পর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন