সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেবেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।নূর বলেন, দলটি যেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিতে পারে, সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা সময় হলেই দেখা যাবে। নতুন দলের নাম এখনও চূড়ান্ত না হলেও প্রাথমিকভাবে দুটি নাম ঠিক করা হয়েছে। ‘গণ অধিকার পরিষদ’ অথবা ‘বাংলাদেশ অধিকার পার্টি’ নামে আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে নুরের দলের। আজ সোমবার গণমাধ্যমের সাথে নিজের সম্ভাব্য রাজনৈতিক দল নিয়ে এভাবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
নুর বলেন, ‘মূলত গত মার্চ মাসে আমাদের রাজনৈতিক দল ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু মোদিবিরোধী আন্দোলন এবং আমাদের বেশকিছু সহযোদ্ধাকে গ্রেফতারের কারণে আমরা একটি চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। এখন রাজনৈতিক দল গঠনের আগে অন্যান্য যে কাজ আছে সেগুলো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই ছাত্রদের নিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুবকদের নিয়ে যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিকদের নিয়ে শ্রমিক অধিকার পরিষদ, প্রবাসীদের নিয়ে প্রবাসী অধিকার পরিষদ, সর্বশেষ আমরা পেশাজীবীদের নিয়ে পেশাজীবী অধিকার পরিষদ গঠন করেছি।’
নুর যে দল গড়বেন তা কোনো পন্থি হবে না বলে জানান তিনি। এটি হবে গণমানুষের জন্য। এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নুর বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতিকে অনেকে বামপন্থি ও ডানপন্থি ধারায় বিভক্ত করে। তবে আমাদের চিন্তাভাবনা হচ্ছে কোন পন্থি না হয় গণমানুষের জন্য, গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করা। একটি দলের মিশন ভিশন কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়। আমাদের অন্যতম একটি প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন আনা এবং রাজনীতিতে যাতে সৎ সাহসী ও যোগ্য লোকটা আসতে পারে তার পরিবেশ তৈরি করা।
জানা গেছে, নতুন দলের প্রধান (সভাপতি বা প্রেসিডেন্ট) যিনিই থাকুন না কেন, নুর দলের মূল ফোকাসে থাকবেন। তার চিন্তা ও পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্র করে একটি তারুণ্যনির্ভর দল গড়ার প্রস্তুতি চলছে। এতে প্রাধান্য দেওয়া হবে তরুণদের। পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন রাজনীতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনকেও টানার চেষ্টা চলছে। একসময় রাজনীতি করতেন, এখন নানা কারণে নিষ্ক্রিয়- এমন ব্যক্তিদের সঙ্গেও নতুন দলের উদ্যোক্তাদের আলোচনা চলছে। এছাড়া, দল ঘোষণার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করা হবে। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে নুরের প্রস্তুতি।
নুরুল হক নুর গণমাধ্যমকে বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৮ বা ২৯ সেপ্টেম্বর আমরা নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে আসছি। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে চেয়ারম্যান বা সভাপতি যেই হোন না কেন, মূল ফোকাসে আমিই থাকবো। দেখা গেছে, ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্রচিন্তা, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও গণসংহতি আন্দোলন; এই চারটি সগঠন সম্প্রতি অভিন্ন কর্মসূচিতে একসাথে পথ চলতে শুরু করে। এরমধ্যে নুর ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক। আর ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং জোনায়েদ সাকি গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক। নতুন দলের উদ্যোক্তাদের ইচ্ছা ছিল জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দলের প্রধান করার। তবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাতে সায় দেননি।
নতুন দলের লক্ষ্য সম্পর্কে নুরুল হক নুর জানান, সব শ্রেণি-পেশার তরুনদের সম্পৃক্ত করে একটি তারুণ্যনির্ভর দল গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে। জানা গেছে, চারটি সংগঠন মোর্চাগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। আবার চারটির মধ্যে গণসংহতি আন্দোলন ছাড়া বাকি তিনটি নতুন দলে একীভূত হয়েও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর। ওই আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন। গত তিন বছরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অন্তত ১৩ বার আক্রান্ত হন নুর। তার নামে ১৭টি মামলাও রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন