পবিত্র কোরআনে সূরা মুনাফিকুন - এর ১০ ও ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ’মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় (মৃত্যু আসলে) সে বলবে: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভূক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির যখন নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন’।
এখানে একথা জেনে রাখা দরকার, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা ও অধিপতি। আকাশও তাঁর সৃষ্টি এবং অধিকারভুক্ত। তিনিই সবকিছুর মালিক। তাঁর কোন কথা, তাঁর কোন কাজের ওপর কারো কোন প্রশ্ন করার অধিকার নেই। পবিত্র কোরআনের সূরা আ’রাফের ১৭২ নং আয়াতে আছে, ’আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের ওপর তাদের প্রতিজ্ঞা করালেন, ’আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই। আমরা অঙ্গীকার করছি; আবার না কিয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না’।
একথা জেনে রাখা দরকার, রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ হযরত আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে সৃষ্টি করার পর আদম (আলাইহিস সালাম) - এর পৃষ্ঠদেশ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সমস্ত বংশধরদের রূহ সৃষ্টি করলেন এবং তাদের জ্ঞান ও বাকশক্তি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা রুবুবিয়্যাত তথা আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র রব (প্রভু) - এ কথার স্বীকৃতি এভাবে নিয়েছেন ’আলাস্তু বি রাব্বিকুম’ অর্থ্যাৎ ’আমি কি তোমাদের প্রভু নই’? সমস্ত রূহেরা জবাব দিল, ’বালা’ হা’ অবশ্যই। এ আলমে আরওয়াহ তথা রূহের জগতের স্বীকৃতি থেকে মানব জাতির প্রথম সফর শুরু হয়। ’আলাস্তু’ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির এটাই সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আর একথা চিরসত্য যে, জন্ম হচ্ছে মৃত্যুর সংবাদদাতা। আর জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ৩৫ নং আয়াতে আছে, ’জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে’। এ আয়াতে ’নফস’- বলে পৃথিবীর জীব বোঝানো হয়েছে। আর তাদের সবার মৃত্যু অপরিহার্য।
এছাড়া সূরা ক্বাফ এর ১৯ নং আয়াতে আছে, ’মৃত্যু যন্ত্রণা নিশ্চিত আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে’।
মৃত্যুর পর মানুষের কিয়ামত শুরু হয়ে যায়। মৃত্যুর পর কোন মানুষ আর দুনিয়াতে ফেরত আসে না। পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফে মৃত্যুর কষ্ট ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
মহানবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ’আমার উম্মতের হায়াত ৬০ থেকে ৭০ বছরের মাঝে’ (তিরমিযী)। বস্তুত: দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় একেবারেই সংকীর্ণ। আর আখেরাতের জীবন অনন্ত, অসীম ও চিরন্তন।
প্রতি মূহুর্তে মানুষ মৃত্যু আশংকার সম্মুখীন
পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ১ নং আয়াতে আছে, ’মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী, অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে’। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে চিন্তা করতে হবে যে, আমার হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, আমার অন্যমনস্ক কিংবা উদাসীন হওয়া মোটেই সমীচীন হবে না। কেননা উল্লেখিত এ আয়াতের দ্বারা বুঝা যায়, মানুষের কাছ থেকে তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেয়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে। এখানে পৃথিবীর বিগত বয়সের অনুপাতে ঘনিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। কারণ, এই উম্মতই হচ্ছে সর্বশেষ উম্মত। যদি ব্যপক হিসেব ধরা হয়, তবে কবরের হিসেবও এতে শামিল রয়েছে। প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর পরমূহুর্তেই এই হিসেব দিতে হয়। এজন্য প্রত্যেকের মৃত্যুকে তার কিয়ামত বলা হয়েছে।
হাদীস শরীফে আছে, ’কবরে মুনকার-নাকীর ফেরেশতা তিনটি প্রশ্ন করবে: ১. তোমার রব কে? ২. তোমার দ্বীন কি ছিল? ৩. তোমার নবী কে’? সত্যিকার মুমিন ব্যক্তি সেই ৩টি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের জবাবগুলো সঠিকভাবে দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক : মুহতামিম, জামিয়া মদীনাতুল উলূম ভাটারা, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন