বিয়ের পর দিন কাটছিল অন্যান্য গৃহবধূদের মতো। সংসারের কাজকর্ম করার পর হাতে অবসর সময় পেতেন। কিন্তু অবসর সময়টা গল্প করা এবং ঘুরে বেড়িয়ে কাটাতে চাননি। সময়কে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
গৃহবধূর নাম জিনিয়া সিদ্দিকী। স্বামী একটি জাতীয় দৈনিকের উপজেলা প্রতিনিধি। স্বামীর সাথে কথা বলে তিনি সামনের দিকে পা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ঘরের বৌ থেকে হয়েছেন একজন উদ্যোক্তা। নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন বেকারি ব্যবসা। বাউফল উপজেলাসহ আশেপাশের উপজেলায় তার বেকারি ব্যবসার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।
‘জিনিয়াস কেক ঘর’ নাম দিয়ে গৃহবধূর ব্যবসার পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে এক নামে সবাই চিনে। জিনিয়া সিদ্দিকীর পরিচয় গৃহবধূর পাশাপাশি একজন সফল স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা। সংসারে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তিনি জানান, দুই বছর আগে শখ করে ঘরের একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে কেক তৈরি করি। তখন ওই অনুষ্ঠানে প্রতিবেশি ও বন্ধুবান্ধবরা এসেছিলেন। অতিথিরা কেকের অনেক প্রশাংসা করেন। তারা কেক তৈরি করতে উৎসাহ দেন। এক পর্যায়ে স্বামীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। কেক তৈরির সরঞ্জাম বাসায় নিয়ে আসার পর থেকেই শুরু হয় পথচলা।
জিনিয়া বলেন, কেক সাধারণত শিশু কিশোররা মজা করে খেতে পছন্দ করে। সে দিকটা চিন্তা করে কেক তৈরি করি। কেকের মূল উপাদান ক্রিম, রং ও চকলেট যাতে শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখি। আর বিদেশি উন্নতমানের উপাদান ব্যবহার করেই কেক তৈরি করি।
‘জিনিয়াস কেক ঘর’ নাম হলেও নেই কোন শোরুম। তবে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কালাইয়া-বাউফল ফুডস ও জিনিয়াস কেক ঘর নামে দু’টি গ্রæপ এবং জিনিয়াস কেক ঘর নামে একটি পেইজ। গ্রæপ ও পেইজে নিয়মিত বিভিন্ন প্রকারের কেকের ছবি পোষ্ট হয়। ছবি দেখেই অনলাইনে কেকের ওর্ডার আসে।
বাউফল পৌর শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শারমিন সুলতানা শামিমা বলেন, যে কোন সামাজিক কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য এক সময় জেলা শহর থেকে হরেক ডিজাইনের কেক কিনতে হত। গত দেড় বছর ধরে জিনিয়াস কেক ঘরের তিনি একজন নিয়মিত কাষ্টমার। এই প্রতিষ্ঠানের কেক তুলনামূলক দাম অনেক কম এবং স্বাদে অতুলনীয় ও শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য কোন ক্ষতিকর না।
নারীদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করেন উপজেলার একটি বেসরকারি সংস্থা রুরাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি (আরডিএস) এর পরিচালক খালেক মিয়া বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন নারী সংসারের কাজের অবসরে এভাবে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলছেন যা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি গ্রামীণ নারীদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।
বাউফল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কার্নিজ মাজিয়া বলেন, গৃহবধূ জিনিয়া সিদ্দিকীকে আমি বলব একজন উদ্যোক্তার প্রথম ধাপ। গ্রামীণ নারীদের মধ্যে এ ধরনের উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়া এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর। আর এ ধরনের উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহায়তা করার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন