পল্লী বিদ্যুৎ তের ছেঁড়া লাইনে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে আজ সোমবার দাদা-নাতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে সিলেটে। এঘটনায় কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন উত্তেজিত জনতা। প্রায় আড়াই ঘন্টা সড়ক অবরোধের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম পিপিএম বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনা সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।
কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের এমাজ উদ্দিনের বাড়ীর পাশে আজ সকাল বেলায় পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইনের একটি তার ছিড়ে পড়া যায়। এ অবস্থায় এলাকার অনেকে ফোন দিয়ে কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসকে বিষয়টি অবহিত করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ পল্লী বিদ্যুতের লোকজন ঘটনাস্থলে না গিয়ে একটি দোকানে চা-পান খেয়ে ফিরে আসে। দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় নিজ চাউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের রুহুল আমিন এর পুত্র আরিফুল ইসলাম স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে পল্লী বিদ্যুতের ছেড়া লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে আত্মচিৎকার শুরু করলে তাকে বাঁচাতে দাদা মাওলানা ফখর উদ্দিন (৬০) এগিয়ে আসলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়েন তিনিও। তারপর ঘটনাস্থলেই করুন মৃত্যু হয় দাদা-নাতির। এ সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন একই গ্রামের ফয়ছল আহমদ ও তার ভাই ফয়েজ আহমদ। স্থানীয় লোকজন স্কুল শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম ও মাওলানা ফখর উদ্দিনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তাদের মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
বিদ্যুতের ছেড়া লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দাদা-নাতির মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এক পর্যায় বিকেল আড়াইটার দিকে এলাকার কয়েক শত বিক্ষুব্ধ লোকজন পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের সামনে কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক অবরোধ করে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে ২ জনের করুন মৃত্যু হয়েছে এমন দাবী জানান তারা। এটা হত্যাকান্ড দাবি করে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএম সহ দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারী বিদ্যুৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে বন্ধ হয়ে যায় সড়কে যান-বাহন চলাচল। এক পর্যায় সেখানে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিকেল ৪ টার দিকে নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জী ও থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম, ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হক সেখানে গিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে সান্ত্বনা প্রদান করে বলেন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এ মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করলে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান লোকজন।
এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষে আওয়ামীলীগ নেতা হুসেন আহমদ, আব্দুল হেকিম শামীম, রফিক আহমদ, সামছুদ্দিন বাবুল মহরি সহ অনেকে এ প্রাণ হানির জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন খবর পাওয়ার পর বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন সেখানে গেলে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না। ২ জনের মৃত্যুর পর তারা সেখানে গিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কোন সেবা পাওয়া যায় না, নানা ধরনের দুর্নীতি সেখানে হয় ও অফিসের লোকজন গ্রাহকদের কোন অভাব অভিযোগের পাত্তা দেননা যার কারণে বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ জনিত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির কাছে তারা তুলে ধরেন। এদিকে, সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জী নিহত ২ পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আশ্বাস দেন আরো সহযোগিতার। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম ও মাওলানা ফখর উদ্দিনের লাশ কানাইঘাট থানায় ময়না তদন্তের জন্য রাখা হয়েছে।
এদিকে, কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম আখতার হোসেন বলেন, বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে পড়ার সংবাদ পেয়ে তিনি তাৎক্ষনিক সেখানে অফিসের লোকজনদের পাঠান। তবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা অভিযোগ পাওয়া গেলে কর্তব্যরতদের বিরুদ্ধে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পক্ষ থেকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ডিজিএম আখতার হোসেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন