পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন পরিপূর্ণ সুন্দর নৈতিক আদর্শের মূর্ত প্রতীক। ‘উস্ওয়াতুন হাসানাহ’ বা উত্তম নৈতিক আদর্শ কথাটি আল কোরআনের তিনবার এসেছে। যথা:
(ক) এরশাদ হয়েছে : যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আসা রাখে এবং আল্লাহকে অধীক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মধ্যে উত্তম নৈতিক আদর্শ রয়েছে। (৩৩নং সুরা আহযাব : আয়াত ২১)। এই আয়াতে কারিমায় খাঁটি ও অকপট মুসলমানদের বর্ণনা প্রসঙ্গে তাদের অনুপম দৃঢ়তার প্রশংসা করা হয়েছে এবং তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অনুসরণ ও অনুকরণের প্রয়োজনীয়তাকে মূলনীতি রূপে ধার্য করে ঘোষণা করা হয়েছে, নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মধ্যে উত্তম ও অনুপম আদর্শ বা পথনির্দেশনা রয়েছে। এর দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কার্যাবলী ও বাণীসমূহ উভয়েই অনুসরণের হুকুম রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। যে সকল কাজ করা বা পরিহার করা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দ্বারা অবশ্য করণীয় স্তর পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে প্রমাণিত ও স্বতঃসিদ্ধ, তা অনুসরণ করা ফরজ, ওয়াজিব ও অপরিহার্য। আর যে সকল কাজ তিনি নিজে করেছেন এবং অন্যকেও তার অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন, তা সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ রূপে অবশ্যই পালনীয় বলে স্থিরিকৃত হবে। আর যে সকল কাজ করা বা না করা উত্তম (মোস্তাহাব) হওয়ার স্তর পর্যন্ত পৌঁছেছে, তা করা বা বর্জন করা উম্মতের ক্ষেত্রে মোস্তাহাবের স্তরেই থাকবে। তা আদায় না করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
(খ) এরশাদ হয়েছে : তোমাদের জন্য ইবরাহিম ও তার সঙ্গীদের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। (৬০নং সুরা মমতাহিনা : আয়াত ৪)। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, আমরা তোমাদের উপাস্যকে মানি না। তোমরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস না করলে আমাদের সঙ্গে তোমাদের কোনো সম্পর্কই থাকবে না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই ওপর ভরসা করেছি, তোমরই অভিমুখী হয়েছি এবং তোমারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন। তুমি আমাদের কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করো না, আমাদের ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালী-প্রজ্ঞাময়। সুতরাং এই বিশ্বাস ও আস্থা উম্মতে মোহাম্মাদীর মধ্যেও অটুট থাকতে হবে। এর অন্যথা হওয়া যাবে না।
(গ) এরশাদ হয়েছে : তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসার মালিক। (সুরা মুমতাহা : আয়াত ৬)।
বস্তুত : মানুষের ইহকালও পরকালের জন্য যা কিছু কল্যাণ ও মঙ্গল কর, তার সব কিছুই পরিপূর্ণ রূপে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। তিনি নিজেও এই ঘোষণা প্রদান করেছেন যে, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি, পবিত্র চরিত্রের যাবতীয় গুণাবলীতে পরিপূর্ণতা দানের জন্য’। তাই উম্মতে মোহাম্মাদীয়ার অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য হলো রাসুলুল্লাহ (সা.) উসওয়ায়ে হাসানাকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করা। আল্লাহ পাক আমাদের সে তৌফিক এনায়েত করুন- আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন