পিয়ারা নবী তাজদারে মদীনা মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা-এর পৃথিবীতে প্রেরণ ও নাবুওয়াতপ্রাপ্তি ছিল বিশ্বময়। তিনি সমগ্র জগতের জন্য নবী। তিনি যেমন ছিলেন উম্মতের (উম্মতে দাওয়াত ও উম্মতে এজাবত) নবী, তেমনি ছিলেন নবীদেরও নবী। এতদ প্রসঙ্গে আল কুরআন ও আল হাদিসে ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে। যেমন : (ক) আল্লাহ পাক বলেন: আমি আপনাকে সকল মানুষের জন্য সুসংবাদ দানকারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা সাবা: আয়াত ২৮)। (খ) হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) বলেন, আল্লাহপাক মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে আকাশের অধিবাসী ও নবীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (শারহু ফিকহে আকবার: পৃ: ১১৪)। (গ) নবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন হযরত মোহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা (সা:)। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ পাকের বাণী কুনতুম খায়রা উম্মাতিন.... অর্থাৎ তোমরাই হলে উত্তম উম্মত। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১১০)। এই আয়াতে কারীমা থেকে আমরা দু’প্রকারের দলিল উপস্থাপন করতে পারি। এক. উল্লেখিত ব্যাপারে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য। আহলুস সুন্নত এবং আহলুস কিবলার কেউ উক্ত মাসয়ালায় বিরোধিতা করেছেন বলে জানা যায় না। দুই. হাদিসের সুষ্পস্ট বাণী (ক) রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহপাক আমাকে নবীগণের উপর মর্যাদা দান করেছেন। (জামেয়ে তিরমিযী ও সুনানে দারেমী ১) (খ) তিনি আরো বলেছেন: আমি কিয়ামতের দিন নবীদের ইমাম ও খতীব হব। (নিবরাস : পৃ: ২৮৬)।
সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মোহাম্মদ (সা:) আল্লাহ তায়লার সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর শরীয়ত ও কিতাব (আল কুরআন) পূর্ববর্তী সকল শরীয়ত ও কিতাব রহিতকারী। তাঁর পরে কিয়ামত অবধি কোনো নবীর আগমন ঘটবে না। সুতরাং তাঁর পরে, কেউ নবী হওয়ার দাবি করলে সে নিঃসন্দেহে কাফির, যিন্দিক এবং তার অনুগত ব্যক্তিরাও কাফির ও মুরতাদ।
এতদ প্রসঙ্গে আল কুরআনের ঘোষণা : (ক) মোহাম্মদ (সা:) তোমাদের মধ্যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। (সূরা আহযাব : আয়াত ৪০)। (খ) সে ইসলাম ভিন্ন অন্য কোনো কিছুকে দ্বীন হিসেবে অন্বেষণ করে, তার নিকট হতে তা আদৌ গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৮৫)। (গ) জানা উচিত যে, এ কথার ওপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, হযরত মোহাম্মদ (সা:) সর্বশেষ রাসূল, যেমন তিনি সর্বশেষ নবী। যদিও উপরের আয়াতে খাতামুন নাবিয়্যিন দ্বারা খাতামুল মুরসালীন বোঝানো হয়েছে। (আল ইয়াওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭)। সুতরাং যখন একথা প্রমাণিত যে, হযরত মোহাম্মদ (সা:) সর্বশেষ নবী, তারপর কেউ নবুওয়্যাতের দাবি করলে সে ডাহা মিথ্যাবাদী। (তাকীদায়ে তাহাবিয়্যাহ : ব্যাখ্যাসহ পৃ: ১৭৬)।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পর মিথ্যা নবুওয়্যাতের দাবিদার ব্যক্তির নিকট কেউ দলিল প্রমাণ চাইলে সেও মুসলিম উম্মাহর বহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে। হযরত ইমাম আবু হানীফাহ (রহ.)-এর যমানায় এক ব্যক্তি নাবুওয়্যাতের দাবি করল। সে বলল, আমাকে একটু অবকাশ দিন। আমি আমার দাবির সপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করব। ইমাম সাহেব বললেন : যে ব্যক্তি তোমার নিকট প্রমাণ তালাশ করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা, নবী করীম (সা:) বলেছেন: আমার পর আর কোনো নবীর আগমন হবে না। (ইমাম বারাযীকৃত মানাকিরে ইমাম আজম : খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন