আরব বিশেষত: কুরাইশ গোত্র ইসলাম আসার বহু পূর্বেই উপজীবিকারূপে ব্যবসাকে গ্রহণ করেছিল। রাসূলে করীম (সা.)-এর পরদাদা হাশেম আরবের অন্যান্য গোত্রের সাথে বাণিজ্য চুক্তির দ্বারা এর ভিত আরও মজবুত করেছিলেন। রাসূলে করীম (সা.)-এর চাচা আবু তালিবও ব্যবসায়ী ছিলেন। বয়ঃপ্রাপ্তির পর রাসূলে করীম (সা.) ও জীবিকার্জনে মনোনিবেশ করে এ পথটিকেই বেছে নিলেন। মাঝে মাঝে তিনি আবু তালিবের সাথে ব্যবসায়িক সফরে গমন করে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া তাঁর সততা ও বিশ্বস্ততার সুনামও ছড়িয়ে পড়েছে। আরবের লোকেরা কোনো বিশ্বস্ত অভিজ্ঞ লোকের কাছে নিজেদের মূলধন এবং ব্যবসায়িক পণ্য সোর্পদ করে। তাদের মুনাফার অংশীদায়িত্বে নিয়ে নিতেন। রাসূলে পাক (সা.)-এর এ ব্যবস্থাটি পছন্দনীয় ছিল। তাঁর সাথে যাদের ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও লেনদেন হয়েছে, তাদের সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা অনুমান করা যায় যে, তিনি কত বড় বিশ্বস্ত ও সততা রক্ষাকারী ছিলেন। কোনো ব্যবসায়ীর জন্য ওয়াদা পালন ও সত্য রক্ষার চেয়ে বড় গুণ আর নেই। নবুয়ত লাভের আগে বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী পরিচিতি অর্জন করা তাঁর অসাধারণ চরিত্র-গুণের কথাও প্রমাণ করে। আবদুল্লাহ বিন হামসা বলেন, নবুয়ত পূর্বকালে আমি একবার রাসূলে পাক (সা.) এর সাথে বেচাকেনা সম্পর্কিত কোনো একটি কাজ করেছিলাম। কিছু কাজ বাকি থাকায় আমি ওয়াদা করলাম যে, আমি আপনার এখানে আবার আসব। ঘটনাক্রমে তিনদিন পর্যন্ত আসার সুযোগ হলো না। আসলে আমি ওয়াদার কথা ভুলেই গেলাম। তৃতীয় দিনের শেষ বেলা যখন আমি ওয়াদাস্থলে গেলাম, দেখলাম তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। কোনো বিরক্তি প্রকাশ না করে শুধু বললেন, তুমি আমাকে বড়ই কষ্ট দিলে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাঁর লেনদেন অত্যন্ত পরিষ্কার ছিল। নবুয়ত লাভের পূর্বে ব্যবসার ব্যাপারে যাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, তার এ গুণটির কথা তারাও অকপটে স্বীকার করেছেন। সায়েব নামক এক ব্যক্তি হুযুর (সা.)-এর দরবারে এসে উপস্থিত হলে লোকগণ হুযুর (সা.)- এর নিকট সায়েবের খুবই প্রশংসা করল। হুজুর (সা.) বললেন, আমি তাকে তোমাদের চেয়ে বেশি চিনি। তখন সায়েব বলে উঠল যে, আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কোরবান হোক। আমি আপনার সাথে ব্যবসা করার কালে লেনদেন করার ব্যাপারে কোনোদিই আপনি বিশ্বস্ততা ক্ষুণ্ন করেননি। কায়েস বিন সায়েব মাখযুমী নামক অন্য এক ব্যবসায়ী ও রাসূলে পাক (সা.)-এর উত্তম আচরণের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
মক্কাবাসীগণ ব্যবসার উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত। খোদ রাসূলে কারীম (সা.) ও একই ব্যাপারে সিরিয়া ও বসরা সফর করেছিলেন। তাছাড়া এ উপলক্ষে তিনি আরবের বিভিন্ন স্থানেও গমন করেছিলেন। আরবের নানা স্থানে বিভিন্ন ব্যবসাকেন্দ্র ও বাজার প্রতিস্থিত ছিল। তার মধ্যে জ’শাবার বাজারটি খুবই প্রসিদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য ছিল। তিনি সেখানেও গিয়েছিলেন। এতদ্ধ্যতীত হযরত খাদীজা (রা:)-এর মালামাল নিয়ে তিনি ইয়েমেনের জারাস নামক বাজারেও দুবার গিয়েছেন এবং প্রতিবারই তিনি এর বিনিময়ে একটি উট লাভ করেছিলেন। নবুয়ত প্রাপ্তির পর আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিধি দল রাসূলের দরবারে আগমন করেছিলেন। বাহারাইনের আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলটি এলে বাহরাইনের প্রত্যেকটি এলাকার নাম নিয়ে স্থানগুলোর খবরা-খবর জিজ্ঞেস করলেন। এতে তারা বিস্মিত হয়ে বললেন যে, আপনি তো দেখছি, আমাদের দেশের খবর আমাদের চেয়ে বেশি জানেন। জবাবে তিনি বললেন, আমি বহুবার তোমাদের দেশ ভ্রমণ করেছি। ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ কল্পনাবশে রাসূলে করীম (সা.)-এর জীবনে অভিজ্ঞতাগুলোকে ম্লান করার উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, তাঁর এ অভিজ্ঞতাগুলো শুধু দেশ ভ্রমণের ফলেই অর্জিত হয়েছে। আর একজন পণ্ডিত লিখেছেন যে, তিনি সমুদ্রে ভ্রমণও করেছেন। একথাও বলা হয়েছে যে, তিনি মিশরও সফর করেছেন। মূলত: এর কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করেই তারা এসব লিখেছেন। মূলত : তিনি কখনো সমুদ্র ভ্রমণ করেননি বা মিশরেও যাননি। শুধু বাহারাইন ভ্রমণকালে হয়তো বা পারস্য উপসাগর দেখতে পারেন। অনুরূপভাবে হয়তো লোহিত সাগরও দেখেছেন। কিন্তু কখনো তিনি কোনো সাগর পাড়ি দেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন