উজানের ঢল ও ভারতের গজলডোবার সব কয়টি গেট খুলে দেওয়ায় হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। প্রবল বৃষ্টি আর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পরেছে।
এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড রেড অ্যালার্ট (লাল সংকেত) জারি করে তিস্তার আশপাশের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার(২০ অক্টোবর) সাড়ে ১১টার দিকে ভেঙে গেছে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস বাঁধ সড়কটি। এতে রংপুর-বড়খাতা-নীলফামারীর সাথে লালমনিরহাটের সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বুধবার (২০ অক্টোবর) ভোর থেকে তিস্তার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের ৫ টি উপজেলার তিস্তার চর এলাকায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধান ও ভুট্টাক্ষেত। পানির তোড়ে ভেঙে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় পরিবারগুলো উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
তীব্র পানির স্রোতে তিস্তাপারের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে জেগে উঠেছিল চর। হঠাৎ তিস্তার পানিতে সব ডুবে গেছে। কার্তিক মাসে এমনভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে ৫৩ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার সকাল ৯ টায় ওই পয়েন্টে ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার বেলা ৩টায় ৫৩ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে। তিস্তার পানি ক্রমেই বাড়ছে। পাউবো বলছে, আরো পানি বাড়বে।
এদিকে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি,আদিতমারী উপজেলা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন,সকাল থেকে তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পেয়ে অত্র ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়েছে প্রায় ১৩টি পরিবার।
সিংঙ্গীমারী ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, বন্যা ভয়াবহ আকার ধরন করছে। এদিকে ভেসির বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে হাতীবান্ধা শহরে দিতে পানি প্রবেশ করলে শত শত পরিবার ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যরাজের ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিস্তা পাড়ের মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে অনেক ঘরবাড়ি বিলীন এবং পানিবন্দি হয়ে পড়া পরিবারগুলোর খোঁজখবর সার্বক্ষণিক রাখা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন