শেরপুর জেলার কৃষি মানেই ধান আর পাট। এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কৃষকরা ধান ও পাটের বাইরে শাক-সবজি ও ফল চাষের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। কৃষকসহ অন্যরা জানতই না তাদের সমতল জমিতে মাল্টা ও আঙুরসহ বিদেশি ফলের চাষ হবে।
উন্নত জাতের মাল্টার চাষ করে শেরপুরে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন কৃষক হযরত আলী। তিনি তার ব্যবসার পাশাপাশি মিশ্র ফল বাগান করেছেন। বাগানে শুধু যে মুনাফাই হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বাগানের সৌন্দর্য সবার বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
হযরত আলীর বাড়ি শেরপুর জেলা সদরে। বাবার নাম আলহাজ্ব মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ঢাকার যাত্রবাড়ীতে ব্যবসা করেন। ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে শেরপুর সদরের রৌহা গ্রামে ১০০ বিঘা জমিতে ২০১৯ সালে মাল্টা, কমলা, আঙুর, ড্রাগন, লটকন, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, কুল সউদী খেজুরসহ ১২ প্রজাতির ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন।
হযরত একই সাথে বিদেশি উন্নত জাতের এমকাটো, ফ্রাই ছবেদা, মালবেরি, থাই সরিষাসহ আরো ২৭১টি জাতের ফলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা, ভাতশালা, কামারিয়া ও বলায়েরচর ইউনিয়নে প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে ১২টি ফল ও চারা উৎপাদন বাগান করেছেন। একশ বিঘা নিজের থাকলেও অপর জমি ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন।
হযরত আলী জানান, বিষমুক্ত ফল চিন্তা করেই বাগান করেছেন। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ১টি নার্সারি ও ১১টি ফলের বাগান করেছেন। আর কর্মসংস্থান হয়েছে দুই শতাধিক লোকের। বাগানে সফলতা দেখে এলাকার অনেকে এ পথে পা বাড়িয়েছেন। নতুন করে বাগান করার জন্য অনেকে সহযোগিতা নিচ্ছেন।
অপরদিকে প্রতিদিনই অনেকে ফল বাগান দেখতে আসেন। তারা ঘুরে দেখার পাশাপাশি ফল কিনেন। আবার কেউ কেউ ফল বাগান করার জন্য সহায়তা চান। হযরত আলীর কথা, তিনি ছাদ বাগান করার পরামর্শ দেন। ইতোমধ্যে ১০০ বেশি চাদ বাগান করে দিয়েছেন। শুধু ফল বাগানেই কাজকর্ম সীমাবদ্ধ নয়। পাশাপাশি মাছ চাষ, মুরগী, কবুতর ও গরু পালন করেন।
ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার না করায় বাগানের উৎপাদিত ফলের চাহিদা বেশি। আর মাল্টাসহ অন্যান্য ফল ফরমালিনমুক্ত। চলতি বছর ১৪ কোটি টাকা টার্গেট থাকলেও এ পর্যন্ত ১০ কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়েছে বলে বাগানের ম্যানেজার আবু সাঈদ জানান। ডিসেম্বরের মধ্যে টার্গেটের চেয়ে বেশি বিক্রি হতে পারে। এদিকে শ্রমিক শাহিন আলম জানান, বাগানে তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানোসহ সংসার চালাতে কোন চিন্তা করতে হয় না।
শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন ইনকিলাবকে জানান, আমরা নানাভাবে পরামর্শসহ সহযোগিতা করে আসছি। আগে আমাদের ধারণাই ছিলো না শেরপুরের সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষ হবে। হযরত আলীর মাল্টা চাষ সফল হওয়ায় উজ্জ¦ল সম্ভাবনা দেখছি। এখানকার মাল্টাসহ অন্যান্য ফল চাষে বিদেশি ফল আমদানি অনেকাংশেই হ্রাস পাবে বলে আমরা আশা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন