ডিলান হাসান : চলচ্চিত্র নায়ক-নায়িকাদের কেবলমাত্র রূপালী জগতের বাসিন্দা বলিয়া গণ্য করিবার কোন কারণ নাই। উহাদেরও সমাজ, সংসার, পরিবার-পরিজন রহিয়াছে। বিবাহ-সাদী করিয়া স্ত্রী-সন্তান লইয়া সংসার বাস করিবার মনোবাসনা পোষণ করা অন্যায় কিছু নহে। সমস্যা বাঁধিয়া যায় কেবল রূপালী জগতে প্রবেশ করা লইয়া। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে কে বা কাহারা কোন কালে এই রব উঠাইয়াছিল যে নায়ক-নায়িকারা বিবাহিত হইলে উহাদের সিনেমা দর্শক প্রত্যাখ্যান করিয়া থাকেন। বিশেষ করিয়া নায়িকাদের ক্ষেত্রে এ কথা অধিক প্রযোজ্য। উহার কারণ হিসেবে বলা হইয়া থাকে নায়ক বা নায়িকাদের দেখিয়া দর্শক তাহাদের স্বপ্ন বুনন করিয়া থাকেন। বালিশে মাথা গুঁজিয়া স্বপ্নের জগতে হারাইয়া যায়। নায়ক-নায়িকার জায়গায় নিজেদের কল্পনা করিয়া পুলকিত ও আবেশিত হইয়া উঠে। মনে করিয়া থাকেন, তাহারা তাহাদের মনের মানুষ। আর মনের মানুষ যদি বিবাহিত হইয়া পড়েন, তবে তাহাদের লইয়া কী স্বপ্ন দেখিবে! বিবাহিতদের লইয়া স্বপ্ন দেখার মতো অন্যায় আর কিছুই হইতে পারে না। এই কারণে দর্শক তাহাদের পছন্দের কোনো নায়ক বা নায়িকাকে বিবাহিত অবস্থায় দেখিতে নারাজ হইয়া পড়েন। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ইহা অধিক লক্ষ্য করা যায়। হলিউড বা বলিউডে নায়ক-নায়িকা বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, তাহা লইয়া দর্শক খুব বেশি মাথা ঘামায় না। উহারা চলচ্চিত্রে তাহাদের অভিনয়কেই প্রাধান্য দিয়া থাকে। তাহা না হইলে শাহরুখ খান, আমির খান, অক্ষয় ক্ষান্না, হৃত্বিক রোশন, কারিনা কাপুর, রানী মুখার্জীদের মতো নায়ক-নায়িকারা অনেক আগেই হারাইয়া যাইতেন। যাহাই হোক, আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের দর্শকের চরিত্র আলাদা। উহারা অবিবাহিত নায়ক-নায়িকাদের পর্দায় দেখিয়া স্বপ্ন রচনা করিতে চায়। ইদানীং অনেক নতুন নায়ক-নায়িকা চলচ্চিত্রে আবিভর্‚ত হইয়াছেন। বিশেষ করিয়া একশ্রেণীর নির্মাতা সিনেমা বানাবো বলিয়া নামিয়া পড়ে এবং সাড়ম্বরে ঘোষণা দিয়া কিঞ্চিৎ শুটিংয়ের কাজও করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক সময় উহা কালের অতল গর্ভে হারাইয়া যায়। এইসব সিনেমাকে অনেকে টেলিফিল্মের চেয়েও অধম বলিয়া গণ্য করিয়া থাকেন। এইসব সিনেমা নামক টেলিফিল্মের মাধ্যমে অনেকে নায়ক-নায়িকার তকমাটি আঁটিয়া ফেলেন। উহাদের কথা আলাদা, উহারা ইহকালেও বা পুনর্বার জন্মাইলেও নায়ক-নায়িকা হইয়া উঠিতে পারিবে না। এইসব মোচনীয় তিলকধারী নায়িকাদের মাঝেই কেহ কেহ ভালো পরিচালক ও নায়কের বিপরীতে সুযোগ পাইয়া মূলধারার নায়িকা হইয়া উঠেন। স্বল্পসংখ্যক এইসব নায়িকাদের মধ্যে বুবলি অন্যতম। বুবলির নায়িকা হইবার বিষয়টি একটু চমকপ্রদই বটে। বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে খবর পাঠিকা হইতে নায়িকা হইয়া উঠিবার নজির একমাত্র তিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন। অবশ্য নায়ক হইতে খবর পাঠক হইবার নজির রহিয়াছে। একসময়ের জনপ্রিয় খবর পাঠক মরহুম সরকার ফিরোজ নায়ক থেকে খবর পাঠক হইয়াছিলেন। আমার এই লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় উহা নয়। খবর পাঠিকা, গায়িকা বা অন্য যে কোনো পেশা বা শিক্ষার্থী অবস্থায়ও যে কেহ নায়িকা হইতে পারেন। উহাতে দোষের কিছু নাই। তবে নায়িকা হইবার ক্ষেত্রে বাংলার চলচ্চিত্রে যে একটা প্রচলিত ধারণা রহিয়াছে নায়িকাকে অবশ্যই অবিবাহিত হইতে হইবে। তাহা না হইলে দর্শক উহাকে লইয়া স্বপ্ন দেখিতে পারে না এবং স্বপ্ন দেখিতে না পারিয়া প্রত্যাখ্যান করে। কারণ দর্শক তাহার স্বপ্নে তাহার এবং নায়িকার মাঝে আরেকজন আসিয়া দাঁড়াইয়া পড়–ক, তাহা কোনোভাবেই বরদাশত করে না। তাহার স্বপ্নে থাকিবে শুধু সে ও নায়িকা। সিনেমা ও প্রিয় নায়িকা পাগল দর্শকের বৈশিষ্ট্যই এমন। এবং এমন দর্শকই নায়ক বা নায়িকাকে, প্রতিষ্ঠিত করিতে ভ‚মিকা পালন করিয়া থাকে। এখন নাবাগত বুবলির কথায় আসি। নায়িকাটি স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলাভিশনে খবর পাঠ করিতেন। হঠাৎই একদিন শোরগোল উঠিল তিনি নায়িকা হইতেছেন। তাও আবার প্রতিষ্ঠিত নায়ক শাকিবের বিপরীতে। একটি নয়, একই সঙ্গে দুইটি সিনেমার নায়িকা হইয়াছেন। এ লইয়া চলচ্চিত্র শিল্পে এক প্রকার হইচই বাঁধিয়া গেল। পত্র-পত্রিকায়ও বিস্তর লেখালেখি হইল। রাতারাতি বুবলি তারকায় পরিণত হইলেন। এমনকি নায়িকা হইবার তিন মাসের মাথায়ই ঈদের মতো মহাউৎসবে উহার দুইটি সিনেমাও মুক্তি পাইয়া গেল। এমন ইতিহাস বাংলার চলচ্চিত্রে আর কোনো নবাগতা সৃষ্টি করিতে পারে নাই। বুবলি এই ইতিহাস গড়িলেন এবং শাকিবের সাথে আরও বেশ কয়েকটি সিনেমায়ও নায়িকা হইয়াছেন। শাকিব নাকি তার দীর্ঘদিনের নায়িকা অপু বিশ্বাসকে বাদ দিয়া বুবলিকে টানিয় তুলিবার দায়িত্ব লইয়াছেন। এই কারণে অপুর গোস্বা হইবারই কথা। হইয়াছেনও তিনি। কাউকে কিছু না বলিয়া নিরুদ্দেশ হইয়াছেন বলিয়াও চলচ্চিত্র শিল্প কারখানায় বেশ আলোচনা শুরু হয়। এখনও অপু নিরুদ্দেশ হইয়া আছেন। বুবলির কথায় আসি, বুবলি যেমন চমক জাগাইয়া এবং ইতিহাস সৃষ্টি করিয়া চলচ্চিত্র কারখানায় সোরগোল পাকাইয়া ফেলিলেন, তখন তার চেয়েও অধিক চমক জাগানিয়া একটি কথা রটিয়া গেল। বুবলি নাকি বিবাহিতা এবং উহার ছয়-সাত বছরের একটি সন্তানও রহিয়াছে। অনেকে বাংলাভিশনে খোঁজখবর লইতে গেলে সেখান থেকে অনেকটা নীরবতা পালন করা হয় বলে শোনা যায়। উহাতে ঘটনার সত্যতা একটু একটু করিয়া প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে থাকে। কারণ হইল নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। বাংলাভিশন নীরব থাকিলেও, আরেকটি চমকপ্রদ খবর পাওয়া গিয়াছে। বুবলিই তার ঘনিষ্ট একজনের সাথে নাকি স্বীকার করিয়াছেন ঘটনা সত্য। তার ঘনিষ্টজন তাহার বিবাহের অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করায় বুবলি বাধ্য হইয়া উহা স্বীকার করেন এবং তাহাকে অনুরোধ করেন যেন বিবাহের কথাটি যেন ফাঁস না করা হয়। এজন্য বুবলি উহাকে কিছু উপঢৌকনও প্রদান করেন। তবে ঘনিষ্ট ঐ ব্যক্তি তাহার কৌত‚হল চাপিয়া রাখিতে না পারিয়া তাহারই আরেক ঘনিষ্টজনের কাছে বুবলির বিবাহের খবরটি অন্য কাউকে না বলিবার শর্ত দিয়া বলিয়া ফেলেন। এইভাবে ঘনিষ্টজন থেকে ঘনিষ্টজনের কাছে বুবলির বিবাহ এবং উহার সন্তানের খবর ছড়াইতে ছড়াইতে এই প্রতিবেদকেরও গোচরিভ‚ত হয়। শুনিয়া চক্ষু কপালে তুলিয়া বিস্মিত হইয়া শুধু মনে হইল, ইহা কী শুনিলাম! বুবলি বিবাহিত ও সন্তানের মাতা। আরও বিস্ময়ের খবর হইল, বুবলির নাকি একাধিক বিবাহ হইয়াছে। একেবারে গোলমাল পাকাইয়া গেল। তবে যাহারা এ কথা বলাবলি করিয়া চলিয়াছেন, তাহাদের দৃঢ় বিশ্বাস উহা পুরাপুরি অসত্য হইতে পারে না। এবং উহা সত্য। কেহ কেহ এই মন্তব্য করিতে শুরু করিয়াছেন, ক্যারিয়ারের শুরুতেই বুবলির শনির দশা লাগিয়াছে। আর বিবাহ করিয়া থাকিলে উহা প্রকাশ না করিবার কিছু নাই। সত্য কখনো আড়াল হইয়া নিশ্চুপ পড়িয়া থাকে না। উহা আগ্নির মতো। যত চাপা দেয়া হোক না কেন, আজ হউক কাল হউক জ্বলিয়া-পুড়িয়া বাহির হইবেই। ঘটনা যদি সত্য হইয়া থাকে, তবে বুবলির ক্যারিয়ারে শুরুতেই শনির দশা লাগিয়া গেল, উহা নিশ্চিত করিয়া বলা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন