সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরান ও তুরস্কের কর্মকর্তারা দ্বিপক্ষীয় সফর বিনিময় ও টেলিফোনালাপের মাধ্যমে যেকোনো উত্তেজনা রোধে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান গতকাল তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুস ওগলুর সঙ্গে টেলিফোনালাপে প্রতিবেশী সব দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ইরানের সমর্থন প্রদান এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে গোলযোগ বাধানোর জন্য শত্রুকে কোনো রকম সুযোগ না দেয়ার ব্যাপারে তেহরানের নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
তার এ টেলিফোনালাপের মাত্র একদিন আগে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি তেহরানে তুর্কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোলায়মান সইলুর সঙ্গে সাক্ষাতে দু'দেশের গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দুদেশই সব ক্ষেত্র সহযোগিতা বিস্তারে আগ্রহী।
এই সাক্ষাতে তুর্কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আশা করেন, তেহরান-আঙ্কারা ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা দুদেশের স্বার্থ রক্ষা এবং শত্রুর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
তুরস্ক ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ। এ অঞ্চলে দুদেশেরই অভিন্ন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। প্রায় ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে এ দুই মুসলিম দেশের মধ্যে সুপ্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক বজায় রয়েছে। ইরান ও তুরস্কের সমগ্র ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় বাণিজ্য ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকলেও ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে তাদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে।
কারণে দেখা যায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কোনো কোনো ইস্যুতে এ দুই দেশের মধ্যে প্রায়ই মতভেদ তৈরি হয়। তবে এই মতভেদ বহু ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতার পথে কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
যে কোনো পরিস্থিতিতে দুই দেশের কর্মকর্তারা কূটনৈতিক শলাপরামর্শ বাড়িয়ে দেন এবং দুর্যোগ মুহূর্তে তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মার্কিন চাপ উপেক্ষা করে তুরস্ক ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সময় এরদোগানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে ইরান।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও তুরস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় থাকলেও সম্প্রতি সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা, মাদক ও মানব পাচার রোধ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। তবে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
ফলে দু'দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান ও তুরস্ক একে অপরের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করতে পারে উল্লেখ করে আঙ্কারায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ফারাজমান্দ বলেছেন, দুই দেশই বৃহৎ শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন। এ অবস্থায় তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে।
সূত্র: পার্সটুডে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন