বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে হওয়ার মাদক-কাণ্ড মামলা নিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী ছাগন ভুজবল। ছাগন ভুজবল মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের খাদ্য, বেসামরিক সরবরাহ ও ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি গতকাল শনিবার বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, শাহরুখ খান যদি বিজেপিতে যোগ দেন, তাহলে মাদকদ্রব্য চিনির গুঁড়ো হয়ে যাবে।
কথিত মাদক-কাণ্ডে আরিয়ানের গ্রেপ্তার ও বারবার জামিন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনেও তর্ক-বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আরিয়ানের পক্ষ নিয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, শাহরুখ পরিবারের বিরুদ্ধে অন্যায় হচ্ছে। আরিয়ানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি সম্প্রতি বলেন, শাহরুখপুত্র আরিয়ানের নামের সঙ্গে ‘খান’ উপাধি থাকার কারণেই তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। বিজেপির মূল ভোট ব্যাংককে খুশি করার জন্যই ভারতে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। প্রবীণ রাজনীতিক ছাগন ভুজবল বলেন, গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরে মাদকের একটি বিশাল চালান ধরা পড়েছে। কিন্তু এ-সংক্রান্ত মামলা তদন্ত করার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনসিবি শাহরুখপুত্রকে হয়রানি করছে।
এদিকে, শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) টাকা দিয়েছে। গতকাল এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন মাদক-মামলার এক সাক্ষী। সর্বভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে ওই সাক্ষীর এমন মন্তব্য প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ‘মিথ্যে রটনা’ বলে দাবি করেছে এনসিবি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বলেছে, ঠিক সময়ে এর জবাব দেবে তারা।
আরিয়ানের গ্রেফতারির ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে। তার সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা গিয়েছিল এক ব্যক্তিকে। সেই ব্যক্তির নাম কিরণ পি গোসাভি। প্রথমে মনে করা হয়েছিল কিরণ এনসিবি-র কোনও এক কর্মকর্তা। অনেকেই সে সময় প্রশ্ন তোলেন ধৃত আরিয়ানের সঙ্গে কিরণের ওই সেলফি নিয়ে। এর পর এনসিবি-কে বিবৃতি দিয়ে জানাতে হয়, কিরণ তাদের কেউ নন। শুধু তা-ই নয়, কিরণকে এই মামলার অন্যতম সাক্ষী হিসেবে তুলে ধরে তার খোঁজ চালায় এনসিবি। যদিও কিরণ ওই ঘটনার পর থেকেই পলাতক। কিরণের সহযোগী প্রভাকর সেইল জানিয়েছেন, তদন্তকারী সংস্থা তাকে ফাঁকা পঞ্চনামায় সই করিয়েছে। এনসিবি কর্মকর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের থেকে বিপদের আশঙ্কা করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রভাকরের দাবি, কিরণ ‘রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সমীরকে নিয়ে এই ধরনের ভাবনা শুরু হয়েছে তার। এমনকি জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলেও দাবি প্রভাকরের। কিরণের দেহরক্ষী বলে নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি দাবি করেন, শাহরুখ-পুত্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ১৮ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এনসিবি-র প্রশ্ন, তা-ই যদি হয়, তা হলে এত দিন আরিয়ান জেলে বন্দি থাকেন কী করে? তা ছাড়া তাদের দফতরে একাধিক সিসিটিভি রয়েছে, ফলে দফতরে বসে যা ইচ্ছা তাই করা যায় না বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তা। ফলে প্রভাকরের এই অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এনসিবি। কিন্তু তাতে বিতর্ক থামছে না। কারণ বলিউডের একাংশ এবং বেশ কিছু রাজনীতিবিদ দাবি করেছেন, শাহরুখের ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
সম্প্রতি সুরকার বিশাল দদলানি এবং প্রবীণ অভিনেতা শত্রুঘ্ন্ন সিনহা দাবি করেন, শাহরুখ-তনয়কে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এর পিছনে অনেকে রাজনৈতিক অভিসন্ধিও দেখছেন। বলিউডের রাজনৈতিক সমীকরণে শাহরুখ খান গেরুয়া শিবিরের বিপ্রতীপে থেকে এসেছেন সব সময়ে। ঘোষিত ভাবে বিজেপি-বিরোধী বলে পরিচিতিও রয়েছে বাদশার। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী দাবি করেন, মুম্বইয়ে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ আদানীর বন্দরে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার হওয়া, লখিমপুর খেরি-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের পুত্র আশিসের নাম জড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য শাহরুখের ছেলেকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। এই আবহে টাকার বিনিময়ে সাক্ষী জোগাড়ের এই ঘটনা আরিয়ান-বিতর্ককে বাড়তি মাত্রা দিল। সূত্র : এনডিটিভি, হিন্দুস্থান টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন