বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি পাচ্ছে শাহরুখ খান অভিনীত বলিউডের হিন্দি ছবি ‘পাঠান’- এমন খবরই ক’দিন ধরে গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশে মুক্তির অনুমতি পাচ্ছে ভারতীয় হিন্দি ছবি এই ‘পাঠান’। গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত সপ্তাহে এ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি দশ শতাংশ এ ছবির কমিশন পাবে এমন ও প্রস্তাব থাকছে। মুক্তির আগে অনুমতি দেয়া হবে। এর আগে সাফটা চুক্তির আওতায় সিনেমাটি মুক্তি দিতে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন পরিবেশক ও প্রযোজনা সংস্থা ‘অ্যাকশান কাট এন্টারটেইনমেন্ট’ এর অনন্য মামুন। ভারতে গত ৪ দিনে ছবিটি ৫শ কোটি রুপি লাভ করেছে বলে জানা গেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে মিটিংক করে প্রস্তাবটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেই মিটিংয়ে নিশ্চিত হতে পারে ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তি পাবে কিনা। যদি মিটিংয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়, তাহলে এই ছবি সাফটা চুক্তির নীতিমালা অনুসারে ভারতে মুক্তির দুইদিন পরে বাংলাদেশে মুক্তি পাবে।
‘পাঠান’ সিনেমা বাংলাদেশে আসা নিয়ে এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমার মনে হয় এটা ভালো। এতে আমরা আরও সমৃদ্ধ হব। বিনিময় থাকা ভালো।
সার্কচুক্তিভুক্ত দেশসমূহের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকেই সংক্ষেপে ইংরেজিতে সাফটা হয়। ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ইসলামাবাদে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সার্কভুক্ত সব কয়টি দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও ছবি আসছে কেবল ভারতের কলকাতা থেকেই। যদিও কালেভন্দ্রে কিছু হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশের সিনেমা হলে আনা হয়েছে। তবে এবার এই চুক্তির আওতায় ভারতের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘পাঠান’ আসতে পারে অনেকেই ধারণা করছেন। ট্রেলারের রিলিজ থেকেই শাহরুখ খানের এই সিনেমা তুমুল আলোচনায় রয়েছে। কখনও এই সিনেমার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি, কখনও আবার কোপ বসিয়েছে সিবিএফসি। ট্রেলারে রোমান্স, অ্যাকশন সবই চোখে পড়েছে। তবে যে অ্যাকশন মুডে ধরা দিয়েছেন শাহরুখ খান, দীপিকা পাডুকোন, সেইভাবে আগে কখনও দেখা যায়নি তাদের। স¤প্রতি দুবাইয়ে হাজির হয়েছিলেন শাহরুখ নিজেই। তখনই বুর্জ খলিফায় প্রদর্শিত হয় পাঠানের ট্রেলার। ট্রেলার দেখে উচ্ছ¡াসে ফেটে পড়ে উপস্থিত দর্শকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল সেই ভিডিও।
‘পাঠান’ সিনেমা পরিচালনা করেছেন সিদ্ধার্থ আনন্দ। এটি প্রযোজনা করছেন আদিত্য চোপড়া। সিনেমাটির অন্যান্য চরিত্রে দেখা যাবে ডিম্পল কাপাডিয়া, আশুতোষ রানা, গৌতম, একতা কৌরকে। তা ছাড়াও ক্যামিও চরিত্রে দেখা যাবে সালমান খানকে।
তবে ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত আশাবাদী প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ। ‘পাঠান’ মুক্তির সিদ্ধান্ত সভায় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে সুদীপ্ত কুমার বলেন, চলতি মাসে ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, “আজ পাঠান মুক্তি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মিটিংয়ে দুই ধরনের মতামত এসেছে। কেউ বলেছেন, সিনেমাটি এখন আনা যাবে না। আইনে বাধা আছে। বাধা কী, সেটা হলো- উপমহাদেশের ভাষায় নির্মিত ছবি আমদানি নিষিদ্ধ আছে। সুতরাং এটা এখন আনা যাবে না। আমার যুক্তি ছিলো, ‘ক’ ধারায় আছে ইংরেজি ছবি আমদানি করা যাবে, আর ‘খ’ ধারায় আছে উপমহাদেশের অন্য দেশের ভাষায় নির্মিত ছবি আমদানি করা যাবে না। আমি তাদের বললাম, এগুলোতো ১৯৭৩ সাল থেকেই চলে আসছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ‘গ’ ধারাটা নতুন সংযোজিত হয়েছে। যার আওতায় কলকাতার অনেক বাংলা ছবি এদেশে আসছে। যুক্তি উত্থাপন করে বলেছি, উপমহাদেশীয় ভাষা বলতে কী বোঝায়- তার একটা ব্যাখ্যাও দেয়া আছে ‘গ’ ধারার আইনে। সেখানে বলা আছে, ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত সকল ভাষা। তো সকল ভাষার মধ্যে কি বাংলা পড়ে না? সেটাওতো আমদানি হচ্ছে।
‘পাঠান’ বাংলাদেশে আমদানির পক্ষে বৈঠকে নিজের যুক্তি উপস্থাপনের কথা উল্লেখ করে সুদীপ্ত আরো বলেন, বাংলা ছবি আসতে পারছে, অন্য ভাষার ছবি আসতে পারবে না- এটাতো ‘গ’ ধারায় লেখা নেই। কোনো বিশেষ ভাষার কথা লেখা নেই। সাফটার আওতায় আপনি একটি সিনেমা পাঠাবেন, আরেকটি আমদানি করতে পারবেন- চুক্তিতে ভাষার কথা স্পষ্ট করে লেখা নাই। সুতরাং ‘পাঠান’ দিতে আপনারা বাধ্য- আজকের বৈঠকে এটা আমি তাদের বলেছি।
সুদীপ্ত কুমারের দাবি, আজকের বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের এডিশনালা সেক্রেটারি ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছিলেন। তারা আমার যুক্তি মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। যেহেতু সাফটার আইনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করেছে, তারাই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিবেন। এজন্য একটু সময় চেয়েছেন। পরিদর্শক সমিতির এই উপদেষ্টা জানান,‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তির জন্য আবেদন করেছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট এর অনন্য মামুন। শিগগির ‘পাঠান’ মুক্তির সম্ভাবনা আছে কিনা, জানতে চাইলে সুদীপ্ত বলেন, ‘এই মাসে মুক্তি সম্ভব নয়। অনুমতি পেলে ছবিটি এনে সেন্সর করানোর বিষয় আছে। এসব করে আগামি ৩ তারিখ পর্যন্ত লেগে যাবে। আামাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ৩ তারিখ হোক বা ১০ তারিখ হোক- আমরা ছবিটি রিলিজ করেই ছাড়বো। এই ভেরিকেড ভাঙতে চাই।
ভারতে বিতর্ক শেষে গত ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ‘পাঠান’। অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে লেগেছে ধুম। সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত যশরাজ ফিল্মের এই ছবিতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। এছাড়াও আছেন জন আব্রাহাম।
বক্স অফিসে রোববার নতুন রেকর্ড গড়ল ‘পাঠান’
গত বুধবার ছবি মুক্তির পর থেকেই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে শাহরুখ খানের ছবি ‘পাঠান’। বিতর্ক, সমালোচনা, আলোচনা, বয়কট, প্রতিবাদ পেরিয়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছে এ ছবি। প্রথমদিনেই এই ছবি আয় করেছিল ১১০ কোটি। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে যা বিরল রেকর্ড। তবে এখানেই থেকে থাকেনি এই বøকবাস্টার। একের পর এক রেকর্ড ভেঙে এ ছবি নাম লিখিয়েছে ইতিহাসে। গতকাল রোববার সারা বিশ্বে এ ছবি পার করল ৪০০ কোটির গন্ডি। তিনদিনেই এ ছবি সারা বিশ্বে ব্যবসা করেছিল ৩১৩ কোটি টাকা। শাহরুখ ও দীপিকা অভিনীত এটিই প্রথম ভারতীয় ছবি যা সবচেয়ে দ্রæত ২৫০ কোটির ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছে।
ট্রেড অ্যানালিস্টরা ভেবেছিলেন, প্রথম পাঁচদিনেই এ ছবি ব্যবসা করে ফেলতে পারে ২০০ কোটি। কিন্তু ছবি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা যায়, সব রেকর্ড প্রায় ভেঙে দিতে বসেছে এ ছবি। শুধু ভারতেই নয়, ‘পাঠান’ রীতিমতো বক্স-অফিসে কালেকশনের সুনামি এনেছে পৃথিবীর সিনেমাবাজার জুড়েই। শাহরুখ, দীপিকা ও জন আব্রাহামকে মুখ্য তিন চরিত্রে দেখা গেলেও এ ছবিতে যাঁর উপস্থিতি নজর কেড়েছে তিনি হলেন সালমান খান। দুই খানকে বড়পর্দায় দেখতেও পৌঁছে গিয়েছিলেন অনেকেই। আর তারই প্রভাব পড়েছে বড়পর্দায়। চতুর্থদিনে এ ছবি ভারতে ব্যবসা করেছে ২৬৫ কোটি, বাকি বিশ্বে ১৬৪ কোটি ও সব মিলিয়ে ৪২৯ কোটি টাকা।
এ আয়ের হাত ধরেই কেজিএফ ২, বাহুবলী ২, দঙ্গলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে পাঠান। মাত্র ৫ দিনেই এ ছবি ভারতে ব্যবসা করেছে ২৬৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে কেজিএফ ২ সাতদিনে, বাহুবলী ২ আটদিনে, দঙ্গল, টাইগার জিন্দা হ্যায়, সঞ্জু ২৫০ কোটি আয় করেছিল ১০ দিনে। সে হিসাবে ফের নয়া রেকর্ড গড়ল পাঠান।
প্রসঙ্গত, ছবি মুক্তির আগেই বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে ‘পাঠান’। অনলাইন টিকিট বিক্রিতে ইতিহাস গড়ে এ ছবি। অগ্রিম বুকিংয়ের পরিমাণ ছিল ২০ কোটি! সকাল ৬টার শো থেকে ঐতিহাসিক অগ্রিম বুকিং ভারতীয় সিনেমার বেশ কয়েকটি রেকর্ড ভেঙেছে এ ছবি। সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবিটি সারা দেশে ৩৫০০ স্ক্রিনে মুক্তি পায়। এই প্রথম কোনো হিন্দি ছবি একসঙ্গে ১০০টি দেশে মুক্তি পেল। বলতেই হয়, ৪ বছর পরে পর্দায় ফিরে স্রেফ ঝড় তুলে দিয়েছেন বলিউড কিং শাহরুখ খান। সূত্র : জি নিউজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন