চোখের সামনে সাদা মাটির পাহাড়। পাহাড়ের আড়ালেই চিনামাটির পাহাড়। যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে সবুজ পানির হ্রদ। আর দূর দিগন্তে আকাশের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে মেঘালয়ের গারো পাহাড়। তার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে সোমেশ্বরী নদী।
এমন সবুজ পাহাড়ের বিশালতা আর নদীর হিম-শীতল জলে চোখ জুড়াতেই গিয়েছিলাম বিরিশিরিতে। নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার একটি ছোট্ট ইউনিয়ন বিরিশিরি। সেখানে দাঁড়ালে মনে হয় উত্তর-দক্ষিণে যতদূর চোখ যায় শুধু মেঘালয়ের গারো পাহাড় আর সোমেশ্বরী নদীর জল।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আমরা ক‘জন বন্ধু বেড়িয়ে পড়লাম নদী আর পাহাড়ে ঘেরা দুর্গাপুরের ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখার উদ্দেশ্যে। সেদিন ছিল শুক্রবার। ভোর হতেই হল থেকে বেরিয়ে পড়লাম ।
ঘণ্টাখানেকের মাঝেই আমরা পৌঁছে গেলাম জারিয়া স্টেশনে। স্টেশন থেকে নেমে সকালের নাস্তা সেরে আমরা নদী পার হলাম। নদী পার হয়ে একটা মাহিন্দ্রা নিয়ে ঘণ্টাখানেকের মাঝে পৌঁছে গেলাম কংশ নদীর তীরে। নদী পার হয়ে শিবগঞ্জ থেকে আমরা একটা অটো রিক্সা রিজার্ভ করলাম। সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখাবে সে। পথ চলার শুরুতেই পড়ল বহেরাতলীতে নির্মিত ‘হাজং মাতা রাশমণি স্মৃতিসৌধ’। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টঙ্ক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাশমণি।
রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে সাদা মাটির পাহাড়। এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মনে হল আমরা এভারেস্ট জয় করে ফেলেছি। পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা যায় শুধু সবুজ আর সবুজ এবং চীনা মাটির পাহাড়ের সেই নীলচে সবুজ পানির হৃদ। এমন নীলচে-সবুজ হৃদের পানিতে গোসল করার লোভ আমরা কেউই সামলাতে পারলাম না। পানিতে সাঁতার কাটা আর হুটোপুটি করে কচি ডাবের পানি আর শসা খেলাম। নিমীষেই চাঙ্গা হয়ে আবার রওনা দিলাম সোমেশ্বরী নদী আর বিরিশিরি দেখতে।
বেলা এক টার দিকে আমরা সোমেশ্বরী নদীর তীরে পৌঁছুলাম। প্রচ- খরশ্রোতা নদী। নদীর ওপারেই সবুজে ঢাকা বিরিশিরি। যেনো সবুজের চাদরে ঢাকা ছোট্ট একটা গ্রাম। আর তার পরেই দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয় পাহাড়গুলো। পাহাড়গুলো যেনো আকাশের মেঘগুলোর সাথে নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে আছে। এ যেনো এক অপরূপ সৌন্দর্যের আধার। পাহাড় আর সবুজের ছোঁয়ায় মনে হবে যেনো বান্দরবান কিংবা রাঙ্গামাটিতে চলে এসেছি। পাহাড়ের চূড়ায় দেখা যাচ্ছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এ যেনো অন্যরকম এক মাত্রা যোগ করেছে।
এর কাছেই ছিল কমলা বাগান। বাগান বলতে কিছু না পেলেও একটা শ’ফুটেক উঁচুটিলা ছিল। টিলাতে উঠতেই যেনো আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এই টিলা থেকেই মেঘালয় পাহাড়গুলো আরও স্পষ্ট দেখাচ্ছিল। ফেরার পথে দেখে এলাম সেন্ট যোসেফের গীর্জা। গীর্জাটা বেশ সাজানো গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর। গীর্জার বিভিন্ন জায়গায় ছিল অনেক সুন্দর সুন্দর ফুলের চারা। গীর্জা দেখা শেষে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিলাম ।
এক চিলতে সবুজের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার মাঝে যে প্রশান্তি আছে তা বুঝি এ পৃথিবীর আর কোনো কিছুর মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবশেষে বলব, এই পাহাড়ি সবুজের মতো আমাদের বন্ধুত্বগুলোও বেঁচে থাকুক চিরকাল, অটুট থাকুক হৃদয়ের বন্ধন।
ষ মো.নাবিল তাহমিদ রুশদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন