আকাশ নিবির : ‘শাকিব খান না থাকলে চলচ্চিত্র এতদিনে অচল হয়ে যেত’ Ñএমন মন্তব্য করলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ। সম্প্রতি জাকির হোসেন রাজুর নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র ‘ভালো থেকো’ সিনেমার সেটে বসে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। সিনেমাটিতে তিনি অভিনয় করছেন। তার সাথে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়।
চলচ্চিত্রে আপনি অনেকটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। এর কারণ কি?
আসলে আমাদের চলচ্চিত্রের পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। যারাই চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন, তাদের নিশ্চত লসের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চলচ্চিত্র নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চলচ্চিত্রকে ভালো করার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন তা নেয়া হচ্ছে না। কেউ আর দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। এ পরিস্থিতির শিকার আমিও। ফলে পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।
আপনি অনেক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। আপনি চাইলে তো এখনও অনেক কিছু পরিবর্তন করতে পারেন?
দেখুন, আগেকার চলচ্চিত্র ছিল সাগরের মত। সেটা এখন সরু হয়ে নদীর মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই এখন একজন শিল্পীর উপর নির্ভর করছেন। আগে যেমন রাজ্জাক, শাবানা, ববিতা, আলমগীর, জসীম, মান্না ও সালমান শাহ’র মতো বড় বড় অভিনেতা ছিল, তাদের উপর নির্ভর করে সিনেমা বানাতো এখন এ অবস্থা নেই। যারা সিনেমা নির্মাণ করছেন তাদের বেশির ভাগই এক শাকিবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এক শাকিবকে দিয়ে তো আর চলচ্চিত্র টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। শিল্পী কোথায়! সিনেমা নির্মাণের উপযোগী শিল্পী তৈরির উদ্যোগও তো নেই। হ্যাঁ, অনেক নতুন আসছে। কিন্তু তারা টিকে থাকতে পারছে না। তারা কেবল আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। কেউ স্থির হতে পারছে না। আমি সিনেমা বানিয়েছি, প্রযোজনা করেছি, শিল্পীও তৈরি করেছি। আমি মনে করি, আমি আমার সময়ে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন বয়সও হয়েছে। একসঙ্গে এত দায়িত্ব নেয়া সম্ভব নয়। কেউ যে দায়িত্ব নিয়ে আসবে, গার্ডিয়ানের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হবে, তেমন কাউকেই দেখা যায় না।
আপনি কি মনে করেন, শাকিব ছাড়া আর কাউকে দিয়ে শিল্পীর অভাব পূরণ করা যাবে না?
আমি সেটা বলছি না। বলতে চাচ্ছি, আমাদের চলচ্চিত্র এখনও যতটুকু টিকে আছে, তাতে শাকিব অবদান রেখে চলেছে। এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতে পারি। শাকিব না থাকলে হয়তো এতদিনে চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যেতো।
নতুন কোনো চলচ্চিত্র কি বানাচ্ছেন?
প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি আর বাণিজ্যিক সিনেমার কথা চিন্তা করছি না। আমার নিজের জন্য একটি সিনেমার কথা চিন্তা করছি। অনেকটা আর্ট ফিল্মের মতো। এই চলচ্চিত্রে বস্তি আর রাস্তার মানুষদের কথা তুলে আনব। সিনেমাটির নাম ‘ঘুম’। চিত্রনাট্যের কাজ শেষ। শীঘ্রই কাজ শুরু করবো।
হিরো বা হিরোইন কারা থাকছেন?
আমি কোন সুপার স্টারকে নিচ্ছি না। হিরো আর হিরোইন একেবারেই নতুন। গল্পটা একেবারে অন্যরকম। কাওরান বাজারের মাছ বিক্রি থেকে বস্তি বাসিদের নিয়ে এ গল্প।
কাজী হায়াৎ-এর হিট সিনেমার অধিকাংশেরই নায়ক ছিল মান্না। আমরা কি বাংলাদেশে আরেকজন মান্নাকে দেখতে পাবো না?
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে মান্না এজনই। আর কোন মান্না জন্মগ্রহণ করবে না। বেশি আর বলতে চাচ্ছি না। বাংলা চলচ্চিত্রে অনেকই এসেছে কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। নায়ক মান্না বেঁচে থাকলে চলচ্চিত্রের এ অবস্থা হয়তো দেখতে হতো না। এখন শুধু অপেক্ষায় আছি, কবে আবার সুদিন আসে।
যদি বলি কাজী হায়াৎ মানে একজন ভালো মানের অভিনেতা?
অভিনয় শখের বসে করি। আপনাদের মাঝে একজন কাজী হায়াৎ হিসেবে সম্মানটা পেয়েছি। আমার মনে হয় এটা সবার ভালবাসায় তৈরি হয়েছে।
আর্ট ফিল্ম আর কর্মাশিয়াল ফিল্ম কোনটিকে প্রাধান্য দেন?
আমার মতে বাংলা চলচ্চিত্রে কর্মাশিয়াল সিনেমা হলো সেগুলোই যা দেখে সবাই কিছু বুঝতে পারে। সিনেমার চরিত্রের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার প্রবণতা দর্শকের মাঝে প্রবল। এ কারণেই আমাদের সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে এত সাফল্য পেয়েছে। আর আর্ট ফিল্ম হলো একটা বিষয় ধরে ধরে মানুষকে বুঝানো। এটা সত্য বাংলাদেশের এক শ্রেণীর দর্শক আছে যা আর্ট ফিল্মও হলে গিয়ে দেখছে। আমার মতে দর্শক যা চাইবে সেটাই আমাদের করা উচিৎ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন