গাজীপুরে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ায় জড়িত থাকার সন্দেহে সহকর্মীর স্বামী হাতে খুন হয় ইনস্যুরেন্সকর্মী ফেরদৌসী বেগম ও তার পাঁচ বছরের মেয়ে তাসমীয়া। গত বুধবার রাতে ওই জোড়া খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার দুপুরে কালীগঞ্জের একটি পুকুর থেকে খুনে ব্যবহৃত দুইটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সালদিয়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে মহিউদ্দীন ওরফে বাবু এবং একই এলাকার সাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান।
ভিকটিম ফেরদৌসী বেগম গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নরুন বরাইয়া এলাকার বাছির উদ্দিন ব্যাপারীর মেয়ে ও গাড়ি চালক রবিউল ইসলামের স্ত্রী। তাসমিয়া হলো ফেরদৌসীর পূর্বের স্বামীর ঘরের দ্বিতীয় মেয়ে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) জাকির হাসান জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গার্ডিয়ান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে চাকরির সুবাদে নগরীর জয়দেবপুর হাড়িনাল এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন ভিকটিম ফেরদৗসী। সংসারের অভাব ঘুচাতে মহিউদ্দীন ওরফে বাবুর স্ত্রী লিমাকে ওই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন ফেরদৌসী। এতে স্বামীর মত ছিল না। স্ত্রীর চাকরি করা নিয়ে লিমা মহিউদ্দিন বাবু দম্পতির মধ্যে মাঝে মধ্যেই কলহ হতো। লিমাকে ওই চাকরি থেকে বাদ করে দিতে বাবু ফেরদৌসীর কাছে বিভিন্ন সময় অনুরোধও করেছে। কিন্তু লিমা চাকরি ছাড়তে রাজি হয়নি। এসব কারণে তিন মাস আগে লিমা তার স্বামী মহিউদ্দিন বাবুকে ডিভোর্স দেয়। তাদের ছাড়াছাড়ির পেছনে ফেরদৌসীর হাত রয়েছে বলে মহিউদ্দিন বাবুর সন্দেহ হয়। এরপর থেকে প্রতিশোধ নিতে মহিউদ্দীন বাবু তার স্ত্রীর সহকর্মী ফেরদৌসীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ নভেম্বর বুধবার বিকেলে জাহিদুল ইসলাম খান ইনস্যুরেন্সের বিষয়ে কথা আছে বলে ফেরদৌসীকে বাসা থেকে ডেকে নেয়। জাহিদুলের ডাকে সাড়া দিয়ে ফেরদৌসী তার মেয়ে তাসমীয়াকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। পরে জাহিদুল, ফেরদৌসী ও তার মেয়েকে রিকশাযোগে হাড়িনালের বাসা থেকে গাজীপুর মহানগরের দেশীপাড়ার বিমানবাহিনীর টেক এলাকায় নিয়ে যায়। রিকশা থেকে নেমে কিছুদুর হেঁটে যাওয়ার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানে পূর্ব থেকেই অবস্থান নেয়া মহিউদ্দিন বাবু এবং সঙ্গে থাকা জাহিদুল গলায় ছুরিকাঘাত করে। এসময় ফেরদৌসীকে ছুরিকাঘাত করার পর মেয়ে তাসমিয়া চিৎকার করলে জাহিদুল তাকেও গলাকেটে হত্যা করে এবং লাশ ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরের দিন গত বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে নিহতের ভাই হযরত আলী বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার রাতে ওই দুইজনকে তাদের নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। শনিবার তাদের দেয়া তথ্যমতে গ্রামের বাড়ি সালদিয়া এলাকার একটি পুকুর থেকে খুনে ব্যবহৃত দুইটি সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন