শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ড্রাইভার-হেল্পারদের দৌরাত্ম্য

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

যেখানে ঢাকা শহরে যানজটের কারণে গণপরিবহনের গড় গতি মানুষের পায়ে হাঁটার প্রায় সমান, সেখানেও গাড়ি চাপায় প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। গণপরিবহনে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। চলতি সপ্তাহে রাজধানীতে গাড়ি চাপায় একাধিক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং হাফ ভাড়া দেয়ার কারণে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় এখনো রাজধানীর রাজপথ উত্তাল হয়ে আছে। শিক্ষার্থীরা আবারো নিরাপদ সড়কের দাবিতে এবং হাফভাড়ার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। ২০১৮ সালে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী একটি গণপরিবহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার পর ঢাকাসহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছিল। নিরাপদ সড়ক ও ন্যায়বিচারের দাবিকে সামনে রেখে রাজপথে নেমে আসা শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের ভ’মিকায় অবতীর্ণ হলে গণপরিবহনসহ সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা ও ট্রাফিক সিস্টেমের নানাবিধ অনিয়ম-অব্যস্থাপনার চিত্র উন্মোচিত হয়ে পড়ে। এ সপ্তাহে গুলিস্তানে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ীর চাপায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী এবং বাড্ডায় গাড়ি চাপায় আরেকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আবারো শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছে। নিরাপদ সড়ক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হাফভাড়ার প্রশ্নে ইতিমধ্যেই সমঝোতা হয়েছে বলে জানা যায়। কয়েকদিন ধরে চলা আলোচনার পর বাস মালিকরা শর্ত সাপেক্ষে দাবি মেনে নিয়েছে।

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, গতিশীলতা ও সেবার মানের উপর কোনো শহরের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আঁচ করা যায়। আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থার মত এমন বিশৃঙ্খল, বেপরোয়া ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নেই। গণপরিবহনের চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গাড়ী চালনায় প্রতি বছর সড়ক-মহাসড়কে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যায়। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও গণপরিবহন চালকদের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্তসমুহ যথাযথভাবে পালন না করা এবং গাড়ি দুর্ঘটনার দায়ে বিচারের সম্মুখীন না হওয়ার কারণেই তাদের বেপরোয়া প্রাণঘাতি ভ’মিকা বেড়ে চলেছে। ঢাকায় সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সময়েই আবারো রাইদা পরিবহন থেকে এক ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত আইন, নতুন প্রজন্মের আন্দোলন বা সরকারের হুঁশিয়ারি ইত্যাদি কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছেনা গণপরিবহন চালক ও শ্রমিকরা। গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের কাছে যেন সবাই জিম্মি হয়ে পড়েছে।

নিরাপদ সড়ক এবং গণপরিবহনে হাফভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আংশিক সফল হলেও গণপরিবহনের ড্রাইভার-হেল্পারদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বক্তৃতা করতে গিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদের সরকার ও বাস মালিকদের মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ করেছেন। এ ধরণের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলা যাবে না। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-এমপিদের জনস্বার্থের চেয়ে বাস-মালিক শ্রমিকদের স্বার্থেই বিতর্কিত ভ’মিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ কারণেই বাস চালক-শ্রমিকদের অপরাধমূলক-ঔদ্ধত্বপূর্ণ কর্মকান্ডের বিচার হয়না। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা বার বার রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হচ্ছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে সব গণপরিবহনের ভাড়াবৃদ্ধির পরও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার যৌক্তিক দাবি নিতে মালিক সমিতির গড়িমসির ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট কেউই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। রাজধানী থেকে প্রতিটি মহাসড়ক এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে গণপরিবহণের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। সাধারণ যাত্রিরা প্রতিবাদ করতে গেলেই পরিবহন শ্রমিকরা তাদের উপর চড়াও হতে হয়। এ ক্ষেত্রে রাস্তার ট্রাফিক পুলিশকেও যথাযথ ভ’মিকা পালন করতে দেখা যায় না। অথচ শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়ছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই হেল্পাররা গাড়ী চালিয়ে এবং রাস্তায় বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় নেমে প্রতিদিন যাত্রিদের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এসব কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। দাবি নিয়ে আর যেন কখনো শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে না হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন