শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়া কী বার্তা দেয়?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

দেশে বহুদিন ধরেই গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদল অভিযোগ করে আসছে, দেশে গণতন্ত্র নেই। সরকারি দল তা অস্বীকার করে বলছে, গণতন্ত্র আছে। দেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই, সেটা তর্ক সাপেক্ষ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একেক পক্ষ একেকভাবে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করছে। বিশ্বে যেসব দেশের সরকার কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচারী বৈশিষ্টের অধিকারী, তারা গণতন্ত্রকে নিজের মতো করে সংজ্ঞায়িত করছে। তারা স্বীকার করতে চায় না, তারা কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচার। নানা যুক্তি-তর্ক দিয়ে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দিচ্ছে। গণতন্ত্রের মৌলিক সংজ্ঞাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা গণতন্ত্রকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেশগুলোকে চিহ্নিত করছে। যেমন, পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র ও হাইব্রিড গণতন্ত্র। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ডেমোক্রেসি ইনডেক্স ২০২০ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ রয়েছে ‘হাইব্রিড’ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায়। বিশ্বের ১৬৭টি দেশ নিয়ে গবেষণা করে সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ ২৩টি, ত্রুটিপূর্ণ ৫২টি, হাইব্রিড ৩৫টি এবং কর্তৃত্ববাদী ৫৭টি। গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ তন্ত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে, রাষ্ট্রীয় কাজে প্রত্যেকের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক সুযোগ-সুবিধায় তারা সমান অধিকার দাবী করতে পারবে। সরকার পরিচালিত হবে জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে এবং তারা যাতে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে, তা সরকার নিশ্চিত করবে। গণতন্ত্রের ধারণাটি গ্রিসের এথেন্স থেকে শুরু হলেও, যা এথেনিয়ান ডেমোক্রেসি হিসেবে পরিচিত, তা কালক্রমে গণতন্ত্রমনস্ক শাসকরা ধারণ করে জনগণের অধিকারকে আরও সুসংহত করার জন্য কাজ করেছেন। বিভিন্নভাবে পরিমার্জনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উন্নয়ন এবং সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের সার্বজনীন এবং সর্বজনবিধিত সংজ্ঞাটি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তিনি গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এবং কীভাবে সরকার পরিচালিত হবে তা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল।’

দুই.
বিগত এক দশক ধরে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আছে কিনা, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। অবশ্য গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র কি, তা আমজনতা কতটা আমলে নেয় বা বোঝে, তা নিয়েও সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। এটা উপরতলার মানুষদের বিষয় বলে অনেকে মনে করে। শাসক থেকে বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলোকেও গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা তাদের সামনে খুব একটা তুলে ধরতে দেখা যায় না। সচেতনভাবেই তারা এ কাজটি করছে, ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার জন্য। সাধারণ মানুষ যদি বুঝে যায়, গণতন্ত্র মানে তার কথামতো সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে চলতে হবে, তাহলে তাদের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদলগুলো গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট দেয়া, জনগণের সামনে এটাই তুলে ধরে ও বুঝিয়ে থাকে। ভোটের মধ্যেই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে যেন। পাঁচ বছর পরপর জাতীয় নির্বাচন ও বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়সহ অন্যান্য নির্বাচনে ভোট দিতে হবে, এটাই গণতন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। অথচ গণতন্ত্রের একটি উপাদান এই ভোট নিয়েও চলে নানা কারচুপি ও জোরজবরদস্তি। এখন তো বিরোধীদলের অংশগ্রহণ ছাড়া শুধু ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেই ভোট হয় এবং হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভোটের এই গণতন্ত্রের প্রতিও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর কারণ, তারা নিজের পছন্দমতো ও স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছে না। তাদের এই অধিকারটুকুও এখন আর অবশিষ্ট নেই। তারা দেখছে, চলমান ইউনিয়ন পরিষদের মতো তৃণমূলের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দল কীভাবে অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষ এবং খুনোখুনিতে লিপ্ত হয়েছে। তাহলে, জেনে-বুঝে কেন তারা প্রাণঘাতী ভোট দিতে যাবে? ভোটের এই চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের গণতন্ত্রের অবস্থান কোথায়। শুধু এই ইউপি নির্বাচনই নয়, বিগত একদশক ধরে জাতীয় নির্বাচনসহ যত ধরনের নির্বাচন হয়েছে, প্রায় সবগুলোতেই সাধারণ মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। তাদের ভোট ‘অটো’ হয়ে গেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে যারাই কথা বলেছেন বা বলতে চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতাসীন দলের বিরাগভাজন হতে হয়েছে। এখন গণতন্ত্র আছে কি নেই, পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে টেলিভিশনে এ নিয়ে লেখালেখি, তর্ক-বিতর্ক কিংবা আলাপ-আলোচনা করতে দেখা যায় না। সব পত্রিকাই প্রকাশিত হচ্ছে, সব টেলিভিশন ও গণমাধ্যমই চলছে, তবে তাতে কি দেশের গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কিত কোনো খবর থাকে? থাকে না। কারণ, সরকার এমনভাবেই এসব মাধ্যমকে সিস্টেমের মধ্যে ফেলে দিয়েছে কিংবা আইন করেছে যে, সরকার বিরূপ হতে পারে বা বিপদে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় গণমাধ্যমগুলো সে পথে হাঁটে না। বরং সরকার যা করছে, তার সব ঠিক, এ পথেই হেঁটে চলেছে। তারা এমনটি করছে শুধু টিকে থাকার জন্য। কেবল গণমাধ্যমই নয়, গণতন্ত্র বিকাশে যে বুদ্ধিজীবী মহলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাদের কেউ হয় চুপ মেরে রয়েছে, অনেকেই সরকারের গুণগান গাচ্ছে। গণতন্ত্র বিকাশের অন্যতম অনুঘটক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যম এবং বুদ্ধিজীবী মহল যখন চুপ মেরে থাকে কিংবা ভয়ে ভীত বা সরকারের অনুগত হয়ে পড়ে, তখন কোনো দেশেই গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। সরকার তো বলেছে, দেশে গণতন্ত্র আছে। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, জনগণের অধিকার। এই অধিকারের মধ্যে রয়েছে, জনগণের মতামত নিয়ে সরকার পরিচালিত হওয়া। সরকারের মতামত জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া নয়। সমস্যা হচ্ছে, সরকার জনগণের মতামতকে কোনোভাবেই প্রাধান্য দিচ্ছে না। একধাপ এগিয়ে বললে, পাত্তাই দিচ্ছে না। এই যে, ভোটের অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে, এতে কি সরকারের কিছু যায় আসছে? আসছে না। কারণ, সরকারই তাদের এই অধিকার দিতে চাচ্ছে না। আবার এই যে, এখন জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ এবং এজন্য তারা সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করছে, তাতে কি সরকার কোনো কর্ণপাত করছে কিংবা আমলে নিচ্ছে? নিচ্ছে না। তাহলে, দেশে ত্রুটিপূর্ণ হোক কিংবা পূর্ণ হোক, এই গণতন্ত্রের কি কোনো মূল্য আছে?

তিন.
করোনাকালেই বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, এই সময়ে দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। কর্তৃত্ববাদীরা আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে। তাদের এই ভবিষদ্বাণী অসত্য হয়নি। সম্প্রতি সুইডেনের স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্টেন্স (আইডিইএ)-এর প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২১’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ঝুঁকিতে। করোনার মধ্যে সেই ঝুঁকি আরও বেড়েছে। দেশে দেশে গণতন্ত্রের উপাদানগুলো ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে। মাথা তুলছে স্বৈরাচারী শাসন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্রের দেশগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রাচীন গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিত দেশটি। বর্তমানে বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ নাগরিকই ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্রের দেশগুলোতে বসবাস করছে। এ প্রতিবেদন থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিশ্বের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশেও গণতন্ত্র ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অন্যদিকে, ত্রুটিপূর্ণ ও হাইব্রিড গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অবস্থা কি, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ক্ষয়িষ্ণুতার দিকে ধাবিত হলেও তা থেকে তার উত্তরণ ঘটানোর সামর্থ্য রয়েছে। কারণ, দেশটির গণতন্ত্রের ভিত্তি অনেক দৃঢ় ও মজবুত। দেশটিতে গণতন্ত্রের যেমন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ রয়েছে, তেমনি জনগণও তার গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়ে সচেতন। আমাদের দেশের মতো যেসব দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি, ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, কেবল শাসক গোষ্ঠীর মুখে মুখে উচ্চারিত হয়, সেসব দেশে করোনার এ সময়ে গণতন্ত্র যে ভূমিতে লুটিয়ে পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশের কথাই যদি বলি, তবে সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দিতে হবে। তাতে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর তার নির্বাচনী অঙ্গীকারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি প্রথম বছরেই বিশ্বে গণন্ত্রকে উৎসাহিত করার জন্য গণতন্ত্র মনস্ক দেশগুলোকে নিয়ে সম্মেলন করবেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেবে। সম্মেলনে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে প্রতিহত করা, দুর্নীতি দমন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখ-এ তিন বিষয় গুরুত্ব পাবে। আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর বাইডেনের এই গণতন্ত্র সম্মেলন ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল পলিটিকো বাইডেনের আমন্ত্রণের জন্য বিবেচিত শতাধিক দেশের বা সরকারের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের নাম নেই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও নেপালের নাম রয়েছে। বাইডেনের এই তালিকা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, গণতন্ত্র সম্মেলনে যোগদানের উপযুক্ততা বাংলাদেশ অর্জন করেনি। তার মানে, বাংলাদেশ গণতন্ত্র মনস্ক নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। এটা অত্যন্ত হতাশার বিষয়। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি প্রথমে বলেছেন, গণতন্ত্র সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তার এ কথার অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশ অত্যন্ত শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ। ভারতসহ আমন্ত্রিত অন্যান্য দেশ অত্যন্ত দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশ। এমনকি আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রও দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ। অথচ সচেতন ও গণতন্ত্রমনা মানুষ মাত্রই বোঝেন, এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক এবং আমরা গণতান্ত্রিক দেশের কাতারে পড়ি না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরবর্তীতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনো গণতন্ত্রের কথা বলে, আবার কখনো সুশাসন, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির কথা বলে এ রকম চাপ সৃষ্টি করে। তার এ কথা মেনে নিয়েও বলা যায়, সুশাসন, দুর্নীতি এবং গণতন্ত্রের অভাবের কথা শুধু যুক্তরাষ্ট্র বলে না, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও বিগত একদশক ধরে বলে আসছে। আমাদের দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সচেতন মানুষও এসব কথা বলছে। বলা বাহুল্য, কাউকে অপছন্দ হলেও তার উচিৎ কথা মেনে নেয়াই হচ্ছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। যারা মেনে নেয় না, তারা গণতান্ত্রিক মানসিকতা পোষণ করে না। আমাদের দেশে কি দুর্নীতি হচ্ছে না? বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হচ্ছে না? জাতীয় নির্বাচনসহ যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে? গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত যে ভোট, তাতে কি জনমতের প্রতিফলন ঘটছে? দেশে কি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশগুলো যখন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে, তখন তা কি অস্বীকার করা যায়?

চার.
আমাদের দেশে ভোটই গণতন্ত্রের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের অন্যান্য উপাদান থাকুক বা না থাকুক, সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই মানুষ খুশি। তারা মনে করে, তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। তাদের মতামতকে মূল্য দেয়া হয়েছে। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভোটের এই গণতন্ত্রও এখন উধাও হয়ে গিয়েছে। যেসব ভোট হচ্ছে, তাতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে না। ভোট তাদের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সিংহভাগ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, ভোট মানেই শাসক দলের নিজস্ব বিষয়। অনুগত নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন করিয়ে ভোট দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিগত জাতীয় নির্বাচনের কথা যদি ধরা হয়, তবে দেখা যাবে সেগুলো অভাবনীয় পন্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বহুল বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করা হয়, বিরোধীদলের বর্জন ও আন্দোলনের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধীদলকে দমন করে ভোটারবিহীন নির্বাচন করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচন করা হয় আরও অভিনব পন্থায়। আগের দিন রাতেই ব্যালট বক্স ভর্তি করে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ নির্বাচন প্রশাসনিক সহায়তায় করা হয়েছে। অন্যদিকে, উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের যেসব নির্বাচন হয়েছে এবং হচ্ছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বলে কিছু নেই। বেশিরভাগই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিনাভোটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আমাদের যে ভোটের গণতন্ত্র, সেটাও ধ্বংস হয়ে গেছে। তাহলে, দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, এ কথা বলা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা পাঠকরাই বিচার করবেন।

darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Mashudur Rahaman ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩১ এএম says : 0
বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই
Total Reply(0)
Haider Ali ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
· পুরোটা পরলাম, অসাধারণ লেখা
Total Reply(0)
মাজহারুল ইসলাম তালুকদার ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
আমরা গনতন্ত্রের অনেক উপরে
Total Reply(0)
Muktar Hossain ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
কোন বার্তাই এই সরকারকে দেয় না কারন এই সরকারের কানে কারো বার্তাই পৌছাইছেন না শুধু দাদাদের বার্তা ছাড়া
Total Reply(0)
নীল পরী ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
পাকিস্তান তো আমন্ত্রণ পেয়েছে
Total Reply(0)
Md Atay Rabby ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক দেশ না। এটাই বুঝাইলো.
Total Reply(0)
Kazi Jamal ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩৩ এএম says : 0
বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকলেই তো আমন্ত্রণ পেতো বাংলাদেশ বাংলাদেশে এখন ক্ষমতায় আছে স্বৈরাচার সরকার
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন