ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধনই এর মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদি যুগ থেকে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন মানবতার উৎকর্ষের পূর্ণতা প্রদানের জন্য। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘বুইছতু লিউতাম্মিমা মাকারিমাল আখলাক’, অর্থাৎ আমাকে পাঠানো হয়েছে সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা প্রদানের জন্য। (মুসলিম ও তিরমিজি)।
মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। পবিত্র কোরআনে স্থানে স্থানে মহান আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ধৈর্য উত্তম চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ ও মুমিনের ভূষণ এবং সফলতার মূল চাবিকাঠি। ধৈর্য মনুষ্যত্বের অন্যতম পরিচায়ক। আরবিতে এর প্রতিশব্দ সবর। যার অর্থ- সংযম অবলম্বন করা, নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করা।
একজন মুমিন জীবনের সব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেন আর এটিই ইসলামের শিক্ষা। ঈমানদারদের সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর’। (সূরা আলে ইমরান : ২০০)। অনত্র বলেন, ‘ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সূরা যুমার : ১০)।
ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সূরা আসর: ১-৩)। এই সূরার শেষে আল্লাহ ধৈর্যকে সাফল্যের নিয়ামকরূপে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বলেন,‘অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।’ (সূরা শুরা : ৪৩)।
কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় ধৈর্য ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজকের শিক্ষিত তরুণ সমাজ ধৈর্য হারা হয়ে নিজেদের কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী (অপু) আত্মহত্যা করেন। তার আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ‘হতাশা’ কে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় গেল সেপ্টেম্বরে আত্মহত্যা করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আরও দুই শিক্ষার্থী।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদুর রহমান জামিলের ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদার আত্মহত্যা করেন।
তাদের আত্মহত্যার মূল কারণ হলো হতাশা, বিষন্নতা। আজকাল পত্রিকার পাতা উল্টালেই আত্মহত্যার মতো ঘটনা অহরহ চোখে পড়ে। এ সংখ্যা যেনো দিন দিন বেড়েই চলছে। আমরা সবাই জানি আত্মহত্যা মহাপাপ কিন্তু হতাশ হলেই আমরা তা ভুলে যাই। মহান আল্লাহ তা’য়ালা দুঃখ-দুর্দশায় তার সাহায্য প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন ধৈর্যের মাধ্যমে। তিনি ইরশাদ করেন,’ তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো। ধৈর্য এবং নামাজের মাধ্যেমে। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
ধৈর্য মানবজীবনে পরীক্ষাস্বরূপ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভয় ক্ষুধা জানের ক্ষতি সম্পদের ক্ষতি ও ফসলাদির ক্ষতির দ্বারা। সুসংবাদ রয়েছে তাদের জন্য যারা বিপদের সময় ধৈর্যের মাধ্যমে বিপদকে মোকাবেলা করেছে’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৫)। তিনি আরও বলেন, ‘চার শ্রেণীর লোক ব্যতীত সব মানুষ ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত। ওই চার শ্রেণির এক শ্রেণি হলো ধৈর্য ধারণকারী।’ (সূরা আসর)।
আবূ মালিক হারিস ইবনু আসেম আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে জ্যোতি। সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ। ধৈর্য হল আলো। আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল সবকর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে। অতঃপর সে তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ক’রে) বিনাশ করে।’ (মুসলিম ১০৫৩, তিরমিযী ২০২৪, নাসায়ী ২৫৮৮, ১৬৪৪, আহমাদ ১০৬০৬, ১০৬২২)।
উল্লিখিত কোরআন ও হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, মুসলমানেরা বিপদে পতিত হবেই। আর বিপদ মোকাবেলা করতে হবে ধৈর্যের মাধ্যমে। কোনো ব্যক্তি যদি সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করে তার সফলতা অনস্বীকার্য। ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে। আমাদের উচিত সকল অনভিপ্রেত অবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশে ও অনাহূত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়া। তবেই আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথি হবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন