শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুয়েটে ছাত্রলীগ আতংক, নিরাপত্তার আশংকায় পদত্যাগ করলেন দুই প্রভোস্ট

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫০ পিএম

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হলের প্রভোষ্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই শিক্ষক। ভিসি’র কাছে তারা তাদের পদত্যাগ পত্র জমাও দিয়েছেন। পদত্যাগী দুই প্রভোষ্ট হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ছাত্রলীগের আতংকে তারা পদত্যাগ করছেন। তারা তাদের পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এদিকে, তাদের দু জনের পদত্যাগের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকই হল প্রভোস্টের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। উপরোন্ত অন্যান্য হলের প্রভোস্টরাও পদত্যাগের কথা ভাবছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান প্রভোষ্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ জমা দেয়ার জানিয়েছেন, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে তারা মানসিক বিপর্যস্তের পাশাপাশি জীবন শঙ্কাও করছেন। হলের পরিবেশও সুষ্ঠু নয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্যরাও ঘটনার পর থেকে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। অপর চার হলের প্রভোষ্ট ও সাত হলের সহকারী প্রভোষ্টরা ৫ দফা দাবি পূরণ না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার বলেন, ড. সেলিম আমার বন্ধু ছিল। তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পরের দিনই আমি প্রভোষ্ট পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এরপর আরও একজন প্রভোষ্ট পদত্যাগ করেছেন।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কুয়েটের সাতটি হল পরিচালনা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ, খেলাধূলা, ফ্লোর মনিটরিং ও ইন্টারনেটসহ আরও কিছু বিষয় থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। এ নিয়ে প্রভোষ্টদের মানুষিক চাপে রাখা হয়, যার শিকার ড. সেলিম হোসেন।

প্রভোষ্টরা জানান, তাদের পদত্যাগ-সহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুরই প্রতিবাদ। তারা শিক্ষক সমিতির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ৫ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন। কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, প্রভোষ্টদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগসহ বিভিন্ন দাবি তোলেন তারা।
কুয়েটের রোকেয়া হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর এবিএম মামুন জামাল বলেন, শিক্ষক সেলিম হোসেন সুস্থ ছিলেন। তার চলে যাওয়া কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তার মৃত্যুতে আমরা সকলেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পর প্রভোষ্ট টবং সহকারী প্রভোষ্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে সবাই শিক্ষক সমিতির ৫ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুইজন প্রভোষ্ট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা সাত দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

কুয়েটের সাতটি হলের মধ্যে প্রফেসর সেলিম হোসেন, লালন শাহ হলের প্রভোষ্টের দায়িত্বে ছিলেন।

কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যপক ইসমাঈল সাইফুল্যাহ বলেন, গত বুধবার (১ ডিসেম্বর) প্রভোষ্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। যা রেজুলেশন আকারে তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সভায় দু-একজন প্রভোষ্ট পদত্যাগের বিষয় তুললে তাদের জানানো হয়-কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে। শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে ড. সেলিম হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ তোলার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, শিক্ষক ড. সেলিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কবর থেকে তোলার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া কুয়েটের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।

খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কুয়েট শিক্ষকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়াতে দাফন হয়েছে, সে কারণে আবেদনটি কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এরআগে গত ১ ডিসেম্বর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ড. সেলিমের লাশ কুষ্টিয়া জেলার বাঁশখালি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন