নিম্নচাপ ‘জাওয়াদ’এ ভর করে বৃষ্টিপাতের প্রভাবে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে থাকা রোপা আমন সহ প্রায় সোয়া ৫ লাখ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ৭৮ হাজার হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায় থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানার পারে এখন ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছেন কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপরের মধ্যে যদি আমনের মাঠ থেকে পানি সরে যায়, তবে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত হলেও যেহেতু মাঠে মাঠে পাকা আধাপাকা ধান রয়েছে, সেহেতু কৃষিবীদদের মধ্যে উদ্বেগ থাকছেই।
পাশাপাশি খেশারী ও শীতকালীন সবজির যে সব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে আছে সেসব ফসলেরও একটি বড় অংশ ক্ষতির কবলে পড়তে পারে। তবে টানা পাঁচদিন পরে বুধবার সকাল ১০.২৩ টায় বরিশালে প্রথম সূর্যের দেখা মেলার পরে একটি রৌদ্রকরোজ্জল দিন অতিবাহিত হওয়ায় কৃষকরা কিছুটা আশান্বিত।
জাওয়াদ-এর বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত জমির মধ্যে রোপা আমন প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর এবং খেশারী ডাল ২৬ হাজার হেক্টর। এছাড়াও শীতকালীন সবজী সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর, সরিষা ২ হাজার ১৫৬ হেক্টর, মুসর ডাল ৫৭৩ হেক্টর, গোল আলু ৩৮৮ হেক্টর, বোরো বীজতলা ২৩৫ হেক্টর, গম ২০৩ হেক্টর এবং ১০৫ হেক্টরের মরিচ ছাড়াও কিছু অন্যান্য ফসল রয়েছে।
তবে এসব ফসলের ঠিক কতভাগ আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে, তা বুঝতে আরো অন্তত দুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ জাওয়াদ-এ ভর করে এ অঞ্চলে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়নি। ৩ দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ছিল ১শ মিলিমিটারের মত। উপরন্তু মঙ্গলবার সকালের পর থেকে বরিশাল অঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি। তবে যেসব ফসলী জমিতে এখনো পানি জমে আছে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়বে বলে শংকা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, আক্রান্ত আমনের জমির বেশীরভাগ ফসলই মাটিয়ে নুয়ে পড়ছে। এসব আধাপাকা ধান চিটা হতে পারে। এছাড়া আমনের বড় ধরনের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ সহ ভাদ্রের বড় অমাশ্যায় ভর করে প্রবল বর্ষণ ও প্লাবনে আমনে ব্যাপক ক্ষতি হয় এ অঞ্চলে। ফলে উৎপাদন ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় লাখ টন।
এদিকে জমিতে পানি আটকে থাকায় আমনের সাথী ফসল খেশারী ডালের সমস্যা বাড়তে পারে। এছাড়া শীতকালীন সবজী ও গোল আলু সহ যেকোন রবি ফসলের জমিতে পানি আটকে গেলে তাও ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকার কথা জানান হয়েছে। তবে বুধবার থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নতুন করে আর ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
এবার খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে যে ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন চাল। তবে কিছু বোরো বীজতলার ক্ষতি হলেও তা পূণর্বাশনের যথেষ্ট সময় রয়েছে। এবার রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে ১৭ লাখ টনের মত চাল উৎপাদনের লক্ষ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন