পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সংগীতানুষ্ঠান, আলোচনা সভা, যাত্রাপালা ও কনসার্টের মধ্যদিয়ে শেষ হলো আশা জাগানিয়ার ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৬। বিশ্ববিদ্যালয় উপলক্ষে জবি ক্যাম্পাসে বসেছিল নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা এসে ঘুরে দেখেন তাদের স্মৃতি বিজড়িত বিভাগগুলোতে। আলাপ করেন প্রিয় শিক্ষকদের সাথে। তবে সাবেক শিক্ষার্থীদের সবার মুখেই ছিল একটা সমাবর্তনের দাবি। পুরান ঢাকার প্রাচীতম এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ১১তম বর্ষপূতি ও এক যুগে পদার্পণে নতুন আশা জাগিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংকট অচিরেই নিরসন হবে। গত বৃহস্পতিবার বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়। এদিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এরপর ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের নেতৃত্বে ব্যান্ডদলে সুসজ্জিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার চত্বর হতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রায় সাহেব বাজার মোড় ঘুরে, ভিক্টোরিয়া পার্ক পরিক্রমণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা রঙ-বেরঙের টি-শার্ট ও শাড়ি পরে নেচেগেয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া প্রতিটি বিভাগের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ বিভাগীয় ব্যানারে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সংগীতানুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। সংগীতানুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষাথীবৃন্দের অংশগ্রহণে একক ও সম্মিলিত কণ্ঠে সংগীত পরিবেশিত হয়। বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামানের সঞ্চালনায় ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য প্রদান করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জবির স্থান সংকটসহ নানা সংকট উত্তরণে সরকার ও জবি কর্তৃপক্ষের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান প্রকল্প ও আশু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে সকল সংকট নিরসন হবে বলে মন্তব্য করেন। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ট্রেজারার অধ্যাপক সেলিম ভূইয়া বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অর্জনকে ছাপিয়ে গেছে স্বচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া। মেধাবী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এটি দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষার হলে অসাধুপায় রোধ ও তার প্রতিরোধে কী করণীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সরকার আলী আক্বাস বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে তাদের কর্মময় জীবনে। তারা দেশের সব সেক্টরে মানবসম্পদ হিসেবে কাজ করছে। যা আমাদেরকে আরো আশান্বিত করছে। ছাত্র সংগঠনের পক্ষে ছাত্রলীগ সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলাম সমাবর্তনের দাবি জানান। তারা বলেন, আমরা শিক্ষায় আরো এগিয়ে যেতাম যদি আমাদের সংকট না থাকতো। আশা করি খুব শিগগিরই আমাদের এ সংকট কেটে যাবে। আলোচনা সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাত্রাপালা ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা’ মঞ্চায়ন করেন।। এছাড়াও বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন চত্বরে কনসার্ট আয়োজন করা হয়। কনসার্টে দেশের খ্যাতনামা ব্যান্ড দল শিরোনামহীন ও নগর বাউল জেমস গান পরিবেশন করেন। এ আনন্দ যেন শেষ হওয়ার নয় কিন্তু বিধিবাম পরের দিন ‘ক’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা থাকায় সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে সকল আয়োজন সাঙ্গ করে ফিরতে হয় আপন নিবাসে। অপেক্ষা আর একটি নতুন বছরের।
জুয়েল মাহমুদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন